নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 160 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচ্যুয়্যাল ফান্ডের রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের সমন্বয়ে গঠিত ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) লভ্যাংশ জমায় গতি নেই। আনুমানিক ২০ হাজার কোটি টাকার এই ফান্ডে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কড়া হুশিয়ারি সত্ত্বেও ফান্ডে অর্থ জমা হচ্ছে না। গত ৩১ জুলাই কোম্পানি ও মিউচ্যুয়্যাল ফান্ডগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিএসইসি।
জানা গেছে, ফান্ডের আকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার হবে বলে ধারণা করেছে কমিশন। এক বছরেরও বেশি সময় আগে ফান্ডটি গঠন করা হয়। কিন্তু ফান্ডে লভ্যাংশের অর্থ জমা দিতে কোম্পানিগুলোর তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
ফান্ডে লভ্যাংশ জমা দিতে বারবার নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এরপরও উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে সিএমএসএফের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এএএমসি) ও বিএসইসি কোম্পানিগুলোর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তথ্য মতে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সিএমএসএফে নগদ লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৪৮০ কোটি টাকা। আর বোনাস লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৬৬০ কোটি টাকা। সে হিসেবে নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা সিএমএসএফে জমা হয়েছে। এরমধ্যে বোনাস লভ্যাংশ বাবদ ৪ কোটি শেয়ারের বর্তমান বাজার দর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকার মধ্যে ২২৫ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পত্তি এই সিএমএসএফের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
ফান্ডটির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অবন্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের মধ্যে দাবি করা ৮০ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সিএমএসএফে পরিচালনা পর্ষদ বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সে হিসেবে দাবি নিষ্পত্তি করার পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি টাকা।
সূত্রে জানা গেছে, যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সিএমএসএফে লভ্যাংশ স্থানান্তর করেনি তাদের কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া এখনও কি পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ চিহ্নিত করা হয়নি এবং নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ পৃথকভাবে ভাগ করার জন্য সিএমএসএফকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অব অপারেশনের (সিওও) কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিএসইসির চিঠি পাওয়ার পরপরই যেসব কোম্পানি এখনও তাদের কাছে রক্ষিত অবন্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশ জমা দেয়নি তাদেরকে চিঠি দিয়েছে সিএমএসএফ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি ওই চিঠির জবাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। তবে কিছু কোম্পানি সিএমএসএফর চিঠির জবাব এখনও দেয়নি। আর কিছু কোম্পানি শিগগিরই চিঠির জবাব দেবে বলে জানিয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর প্রদান করা ব্যাখ্যা একত্রিত করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ প্রতিবেদন আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমএসএফের চিফ অব অপারেশন মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, সিএমএসএফের এ পর্যন্ত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা সিএমএসএফে জমা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৪৮০ কোটি টাকা। আর বোনাস লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৬৬০ কোটি টাকা। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ আগস্ট পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এ বোর্ড অব গভর্নসের মধ্যে চারটি পদ বিএসইসি কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি তিনটি সদস্য পদ।
ফান্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিন জন সদস্য হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
সিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নসের অন্যান্য সদস্যরা হলেন-ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন।
Posted ৮:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy