নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 176 বার পঠিত
মো. ইউসুফ মিজি মাত্র ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে। কোম্পানির বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছাড়ার সময় তার পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ হাজার টাকা। চাকরি ছাড়ার দীর্ঘদিন পরও ইউসুফ মিজিকে প্রাপ্য টাকা দেয়নি কোম্পানি।
আবদুর রহমান (ছদ্ম নাম) কাজ করেন কোম্পানির শীর্ষ একটি পদে। প্রায় ৩১ মাস তার বেতন বন্ধ। দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি।
শুধু ইউসুফ মিজি বা আবদুর রহমান নন, স্বদেশ লাইফের হেড অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশের অন্তত ৬ থেকে ৩১ মাস পর্যন্ত বেতন বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। কর্মকর্তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নানা অনিয়মের কারণে বেতন পাচ্ছেন না তারা।
আবদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিতে অচলাবস্থা চলছে। আমাদের বেতন না দিয়ে সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কোম্পানি থেকে ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া কোম্পানির বোর্ডও উদাসীন। ফলে আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
বেতন না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও গণমাধ্যমে পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে কথা বললে সমস্যা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, বেতন সংক্রান্ত সমস্যাসহ আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। আপাতত এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ কর্তৃপক্ষ বলেছে শিগগিরই বেতন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা হবে।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত খরচ করার পাশাপাশি লাইফ ফান্ড গঠন করতে না পারা এবং ব্যাপক অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের মে মাসে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নতুন বীমা পলিসি ইস্যুর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ৬ মাস নতুন পলিসি বিক্রি বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবরে নতুন বীমা পলিসি ইস্যু বা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় গ্রহণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন পলিসি বিক্রি করতে না পারায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনাসহ সকল ক্ষেত্রে কিছুটা অসঙ্গতি হয়েছে। ফলে বেতন-ভাতাও অনিয়মিত হয়ে গেছে।
বেতন অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন। তিনি বলেন, কোম্পানির আয়ের বড় অংশটি আসে নতুন পলিসি বিক্রি থেকে। দীর্ঘদিন নতুন পলিসি বিক্রি না করায় কয়েক মাসের বেতনে সমস্যা হয়েছে। তবে সেটা ৬ মাসের বেশি নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
অনেকের বেতন ৩১ মাস পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে-এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ’র মুখপাত্র ও পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা সমাধান করার দায়িত্ব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে সম্প্রতি কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
Posted ৮:০৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy