
বিশেষ প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 976 বার পঠিত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বীমা খাতের গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমান পেয়েছে। এনবিআর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তকালে দেখতে পায় কেনাকাটা বা ব্যয়, স্থাপনা ভাড়া ও স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছর ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট এনবিআর সূত্র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে আমি জানি না। আমি তো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সভা ছাড়া বাকি কিছুর খোঁজ রাখি না। এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পায় এনবিআর। লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের ওপর উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও ভ্যাটসংক্রান্ত কাগজপত্র তলব করা হয়। প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয় ও মামলা করা হয়। সম্প্রতি এনবিআর ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকায় (দক্ষিণ) প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোল্ডেন লাইফ ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবছর বিজ্ঞাপন, প্রিন্টিং, স্টেশনারি, গাড়ি মেরামত, নিরীক্ষা ফি, কনসালটেন্সি, নিবন্ধন ফি, বিনোদন, অফিস স্থানান্তর, পরিচালক ফি, ব্যবসার উন্নয়ন ব্যয়, পুরস্কার, এজিএম ব্যয়, আসবাবপত্র ব্যয়, প্রশিক্ষণ ব্যয়সহ ২৭-২৮টি খাতে ব্যয়ের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট এবং ভ্যাটের ওপর সুদ প্রায় দুই কোটি চার লাখ টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।
অন্যদিকে একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর সুদসহ প্রায় এক কোটি চার লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বীমার ওপর প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৯ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গোল্ডেন লাইফ মোট প্রায় তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ওপর দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সুদসহ ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি টাকা। তবে ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা করছেন নিরীক্ষাকারী কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধে ভ্যাট আইন অনুযায়ী দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে আদায় করার সুপারিশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মূসক গোয়েন্দার এক কর্মকর্তা বলেন, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে ও স্থাপনায় সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না। কয়েকটি খাতে প্রায় ছয় কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তবে ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হবে। খতিয়ে দেখতে আমরা সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করেছি। সূত্রমতে, ব্যবস্থাপনা ব্যয় অতিরিক্ত দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ১৭টি সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানির প্রায় এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি অনুসন্ধানে নামা ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে সাতটি কোম্পানির মধ্যে গোল্ডেন লাইফ ৫ নম্বরে। প্রতিষ্ঠানটি ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করেছে।
Posted ৫:৪২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed