
| বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 992 বার পঠিত
একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএফআরএফ) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর আগে বুধবার গেজেট জারি হবে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ পাঠ করাবেন। সুতরাং মহাজোটের সরকার গঠন হতে যাচ্ছে, এটা অবধারিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নতুন সরকার পাব।’
নতুন সরকারের আকার কেমন হবে এবং নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন নতুন মুখ আসতে পারেন জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে যোগ্য ও কার্যকরী লোক দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবিধানিক ও আইনগত নিয়ম রক্ষা করেই শপথ নেবেন সংসদ সদস্যরা এবং মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।’
নতুন মন্ত্রিসভা কবে গঠন করা হবে এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সময়টা আমি বলতে পারব না। সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার পরই মন্ত্রিসভায় যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সুতরাং এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কবে, কখন ও কাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।’
নতুন সরকারে কারা বিরোধী দল হবে এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যেহেতু দলগতভাবে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তাই জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে। শেখ হাসিনা যদি আমন্ত্রণ জানান আর তারা গ্রহণ করেন, তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবেন, আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্যান্য শরিকদের দিয়ে সরকার গঠন করা হবে।’
নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জের একটা হচ্ছে, সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নটা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন করে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেই শান্তি বজায় রেখে সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিক শাসনের যে জঞ্জাল এখনও রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা আমি পরিষ্কার করে বলছি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন এবং সুশাসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিক থেকে এ নির্বাচনে গণমাধ্যম নির্বিঘেœ কাজ করতে পেরেছে। এ কারণে আমি সন্তুষ্ট। এ নির্বাচনটা সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন, সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং এ নির্বাচনটা সবচেয়ে বেশি উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে।’
বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এজেন্টরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগের দরখাস্ত দিয়ে চলে যেতে পারতেন। আমার জানামতে, বিএনপির এজেন্টরা কোনো লিখিত অভিযোগপত্র দেননি। এ কারণে অভিযোগটা প্রত্যাখ্যান করছি। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মহা কর্মযজ্ঞই মহাজোট সরকারে অভাবনীয় বিজয় এনে দিয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশি মনোভাব ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যই তাদের ভরাডুবির কারণ, আরও অনেক কারণ রয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণের ফলেও তাদের এ ভরাডুবি।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ আমরা দেখেছি, সেখানে মুসলিম লীগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা পক্ষত্যাগ করে এবং জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে নৌকার বিজয় ও বিপ্লব এনে দেয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে যেভাবে মুসলিম লীগের যুগের অবসান ঘটে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী সামরিক শাসনের মদতপুষ্ট সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক ও বাহক বিএনপি-জামায়াত যুগের অবসানের সূচনা ঘটাল বা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির বিদায়ঘণ্টা বাজাল।’
‘বিএনপি-জামায়াত যখনই পরাজিত হয়, তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯৬ সালে ও ২০০৮ সালেও তারা একই দাবি করেছে। এটা তাদের রাজনৈতিক বদ অভ্যাস। এই বদ অভ্যাসের সূত্র ধরে তারা আগামীতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করবে,’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি পুনর্নির্বাচনের দাবির মধ্য দিয়ে একটা ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করল, যা অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’
বিএনপি রাজনৈতিক বদ অভ্যাস পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাসানুল হক ইনু।
বিএসআরএফের সভাপতি শ্যামল সরকারের সভাপতিত্বে সংলাপে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মহসীন আশরাফ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। গোলযোগের কারণে একটি আসন স্থগিত রেখে সেই রাতেই ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২৫৯টি আসনে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে তাদের আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থীরা মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হতে পেরেছেন। যদিও ভোটে বাধা দেওয়া, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি-জামায়াত জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৬৫ প্রার্থী রোববার ভোট চলাকালেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
Posted ৮:৩৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed