শনিবার ১৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফতাব অটোমোবাইলসের ভ্যাট ফাঁকি

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   888 বার পঠিত

আফতাব অটোমোবাইলসের ভ্যাট ফাঁকি

নাভানা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশের বেসরকারি খাতে শীর্ষস্থানীয় বড় বাস বডি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে।

ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট পরিশোধে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবসিডিয়ারি নাভানা ব্যাটারিজ লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলে ডেপুটি ম্যানেজার আসাদ উল্যাহ তা রিসিভ করেন। চেয়ারম্যান অসুস্থ, কথা বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে এমডি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি। তবে সাইফুল ইসলামও কথা বলতে রাজি হননি।

যদিও ভ্যাট ফাঁকি হয়নি, কয়েকটি খাতে অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভ্যাট হিসাব করা হয়েছে। এছাড়া ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ট্রান্সপোর্ট ভেহিকেলস খাতে যে ভ্যাট দাবি করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক। তবে প্রতিষ্ঠানটির এ ব্যাখ্যা ভ্যাট কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করেছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এলাকায় অবস্থিত আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পায় এনবিআর। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করতে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মূসক গোয়েন্দা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন (সিএ ফার্ম রিপোর্ট), মূসক দাখিলপত্রসহ এ-সংক্রান্ত দলিলাদি চেয়ে কয়েক দফা চিঠি দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো দলিলাদি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি। পরে ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকেই ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের আগে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শুনানিতে অংশ নিয়ে আপত্তি জানান এবং কিছু দলিলাদি দাখিল করেন। পরে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন, প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দলিলাদি পর্যালোচনা করে গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আফতাব অটোমোবাইলস চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূসক আইন অনুযায়ী লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ও কেনাকাটায় উৎসে মূসক প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে ব্যয় ও কেনাকাটার ওপর প্রায় ৩০ লাখ টাকার উৎসে মূসক পরিশোধ করেনি। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছর প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৮৪ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৪৯ লাখ টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি এক লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোট ফাঁকির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মূসক আইন অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া এ ভ্যাটের ওপর ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। সুদসহ ফাঁকির পরিমাণ প্রায় তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ভ্যাট আদায়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে মামলা করে প্রতিবেদন দেয় মূসক গোয়েন্দা। তবে সঠিকভাবে কাগজপত্র পাওয়া গেলে ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যেত বলে মূসক গোয়েন্দার একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, মূসক গোয়েন্দার প্রতিবেদন অনুযায়ী চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। ১৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য, নথিপথ উপস্থাপন করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকির সপক্ষে প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি। বিশ্লেষণ শেষে গত ৭ মার্চ চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেন। এরপরই ভ্যাট পরিশোধ না করে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা বলেন, চূড়ান্ত দাবিনামা জারির পর থেকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভ্যাট পরিশোধে গড়িমসি করা হচ্ছে। যেসব খাতে ভ্যাট চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেসব খাতে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা বা কাগজপত্র দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হবে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি।

অপরদিকে, সম্প্রতি আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি নাভানা ব্যাটারিজ লিমিটেডের (এনবিএল) প্রায় ৩২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (দক্ষিণ)। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫৩ কোটি টাকার বিক্রির বিপরীতে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। যদিও পরে এ ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে আফতাব অটোমোবাইলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ২৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় নেমেছে; যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালক, ৩৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে। ডিএসইতে গতকাল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ৪১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান অটোমোবাইলস লিমিটেড হিসেবে টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার (জিপ) অ্যাসেমব্লিং করত। ১৯৮১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে অ্যাসেমব্লিংয়ের পাশাপাশি টয়োটা ও হিনো যানবাহনের যন্ত্রাংশও প্রস্তুত শুরু করে। ১৯৮৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার, ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো, হিনো বাস, হিনো মিনিবাস ও ট্রাক প্রভৃতি অ্যাসেম্বল করছে। ফৌজদারহাটের প্লান্টে বছরে প্রায় দুই হাজার ৪০০ ইউনিট ভেহিকেলস ও ভারী যানবাহনের বডি তৈরি করছে। একই সঙ্গে হিনো লাক্সারি বাস আরএম২-এর বডি ফ্যাব্রিকেশনও করে। আফতাব অটোমোবাইলসহ নাভানা গ্রুপের ২৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।