জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৭৪০ কোটি ১৪ লাখ এবং বিদেশি অনুদান ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী/সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় অংশ নেন।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একনেকে তিনটি সংশোধিত এবং একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্প। সংশোধনীতে প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয়েছে। সময় একই রয়েছে। সংশোধনীতে ৪৯১ কোটি ৩৪ লাখ থেকে খরচ বেড়ে ৮৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রাম জেলা উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নং-৬৩/১ বি (আনোয়ারা এবং পটিয়া) পুনর্বাসন’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। এতে খরচও বাড়ছে, সময়ও বাড়ছে। ২৮০ কোটি ৩০ লাখ থেকে খরচ বেড়ে প্রথম সংশোধনীতে হয় ৩২০ কোটি ২৯ লাখ এবং আজকে সংশোধনের পর আরও বেড়ে দাঁড়ালো ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের মে মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের জুন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। এই প্রকল্পটিরও ব্যয় ও সময়ও বেড়েছে। এক হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ থেকে ব্যয় বেড়ে এক হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২১ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন হবে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

এছাড়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে মহিলাদের গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারণপূর্বক আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচন (ফেজ-২)’ নামে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সভায়। এতে খরচ করা হবে ১২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা কমে যাওয়ায় একনেক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গবেষণার জন্য অর্থের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করার বিষয়ে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন বাজার বা শহর হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি না করে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা

বাড়ানো হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কত-সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকবে, তার একটা সীমারেখা নির্ধারণ হওয়া জরুরি।

সভায় আরও অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা।