সোমবার ৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জরিমানাসহ গুনতে হবে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা

কেএসআরএমের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ, তদন্ত হয়-ব্যবস্থা নেয়া হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১   |   প্রিন্ট   |   253 বার পঠিত

কেএসআরএমের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ, তদন্ত হয়-ব্যবস্থা নেয়া হয় না

ফাঁকি দেয়া রাজস্ব, সুদ ও জরিমানাসহ প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে প্রদান করতে হবে চট্টগ্রাম-ভিত্তিক ইস্পাত ও রড শিল্পপ্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) লিমিটেডকে। এর মধ্যে শুধু রাজস্ব বাবদ দিতে হবে ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সুদসহ ভ্যাট ফাঁকির সমপরিমাণ জরিমানাও গুনতে হবে। যা গত পাঁচ বছরে ব্যক্তি-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ ভ্যাট ফাঁকি। এমনটাই জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে মামলা হলেও কার্যক্রম শম্ভুক গতিতে চলতে থাকায় অপরাধীরা উৎসাহ পাচ্ছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ২০১৬-এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৬ মেট্রিকটন এমএস পণ্য বাজারে সরবরাহ করে। এর বিপরীতে ১৮৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪ টাকা সরকারি মূসক পরিশোধের কথা, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৭ টাকা। এতে সরকারের পাওনা রয়েছে ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা।

অন্যদিকে কাঁচামাল ক্রয়সহ সব কেনাকাটার বিপরীতে মূসক কর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানেনি কেএসআরএম। ২০১৭-এর জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের কোনো দলিল উপস্থাপন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। চার বছর ৫ মাসে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৩৩ টন কাঁচামাল ক্রয় করলেও এসব পণ্যের বিপরীতে উৎসে মূসক ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ হিসাবে মূসক ও উৎসে কর মিলে সর্বমোট ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা করফাঁকি দেয় কেএসআরএম। এর আগেও কেএসআরএমের বিরুদ্ধে শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকির বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য পাওয়া গেছে। পণ্য রফতানির সুবিধা নিয়ে রফতানি না করার অভিযোগও রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এদিকে এ ধরনের প্রতারণার কারণে সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প গ্রুপের এমন কর্মকাণ্ড দুঃখজনক। তারা বলছেন, এতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, যা ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা বলেন, কেএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ না করে নিয়মিত ফাঁকি দিয়ে আসছিল। নিবারক দলের তল্লাশি এবং তদন্তে বিশাল ফাঁকির তথ্য উঠে আসে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগির এ বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, সমপরিমাণ জরিমানা ও সুদসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে কেএসআরএমকে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা হবে না। তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম ভ্যাট এ জাতীয় বেশকিছু অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। যারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রেলওয়ের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মান, চট্টগ্রাম ভিত্তিক দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠি পিএইচপি গ্রুপের দুই একর জমি জবরদস্তি দখল ও শতবর্ষ পুরোনা পাহাড়ি পথ রাজা আম্বিয়া ঢালা সড়ক দখল করার অভিযোগও রয়েছে। আবার পরিবেশ ধ্বংস করে পাহাড় কাটারও অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মিটিংয়ের রয়েছেন এমনটা জানিয়ে পরে কথা বলার জন্য বললেও পরবর্তীতে আর ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, কেএসআরএম স্টিল দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ করছে নাÑএমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরার ঘোড়ামারা এলাকায় কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডে অভিযান চালায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের একটি দল। এ সময় বেশকিছু নথিপত্র ও দুটি কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করা হয়। দীর্ঘ ২৪ দিন ধরে পর্যালোচনার পর ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।