বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 650 বার পঠিত
বাংলাদেশে গবাদি প্রাণীর ডিজিটাল সেবা এবং বীমা সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগিতায় সূর্যমুখী প্রাণিসেবা আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে আজ রোববার। এর মাধ্যমে খামারিদের আর্থিক সচ্ছলতার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামীণ আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের মিশন এবং ভিশন বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করছেন আয়োজকরা। রাজধানীর একটি হোটেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এটি উদ্বোধন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ গবাদি পশু নির্ভর। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ৯০ শতাংশ পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস গবাদি পশু। গবাদি পশু লালন-পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন, আবার অনেকেই পশুর মৃত্যুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে গ্রামীণ অর্থনীতির এ খাতটি বিকশিত হচ্ছে না। গত দশক থেকে গ্রামীণ পর্যায়ে গবাদি পশুর খামার তৈরি হতে দেখা যায়। বর্তমানে সারা দেশে আড়াই লাখের মতো খামার রয়েছে। ব্যাংক লোনসহ পরিবারিক পুঁজি নিয়ে গবাদি পশুর খামার করেছেন অনেকে। খামার করে যেমন লাভবান হচ্ছে, অনেকে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। মূলত সম্ভাবনাময় এ খাতকে বিকশিত এবং খামারিদের বিনিয়োগের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিতেই প্রাণী বীমা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সূর্যমুখী লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে সূর্যমুখী প্রাণিসেবা নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে প্রাণীর জাত উন্নয়ন, সফল প্রজনন, তথ্য সংরক্ষণ, গবাদি প্রাণী পালন ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং গবাদি প্রাণীর বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে। অ্যাপসটি তৈরি ও ব্যবস্থাপনার সহায়তায় রয়েছে ইউকেএইড, বিইপি-বি, আরএফআইডি। গবাদি প্রাণীর বীমা সুবিধা প্রদানের সব ধরনের সেবা দিবে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা সূর্যমুখী লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিদা হক বলেন, প্রাণী বীমা পদ্ধতি বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে। বীমা সুবিধায় খামারিরা নিশ্চিতে ব্যবসা করতে পারবেন। সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা আশাবাদী বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন সূর্যমুখী প্রাণিসেবা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সংস্থাটির তথ্য মতে, সূর্যমুখী প্রাণিসেবা প্ল্যাটফর্মটির অংশ হিসেবে একটি বায়োসেন্সর গবাদি পশুর পাকস্থলিতে প্রবেশ করানো হয়। এই বায়োসেন্সর বা বোলাস প্রাণীর পাকস্থলি থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় তথ্য তৈরি এবং প্রদান করে। বোলাস পশুর পাকস্থলিতে অন্তত পাঁচ বছর কার্যকর থাকে এবং দেহে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে প্রথম প্রাণী বীমা সূর্যমুখী অ্যাপসটির মাধ্যমেই পরিচালিত হবে।
সংস্থাটি আরো জানায়, রোগব্যাধিসহ বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর প্রচুর গবাদি পশু মারা যায়; যার কারণে খামারিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। খামারিদের বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বীমা পলিসির মাধ্যমে গবাদি পশুর মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। খামারির বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে। গবাদি পশুর চিকিৎসা পাওয়া যাবে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় থাকবে। গবাদি পশুর খামারে বিনিয়োগে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়বে, খাতটি বড় হবে। তৃনমূল জনগোষ্ঠী লাভবান হবে। গবাদি পশুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করে চুরি ও মুত্যু বীমার জন্য ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে। যেমনÑ এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গরুর বার্ষিক প্রিমিয়াম হবে পাঁচ হাজার টাকা।
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব রফিকুর রহমান বলেন, একসময় শুধু পারিবারিকভাবে গবাদি পশু পালন হতো, এখন এটি ব্যবসায়িক পর্যায়ে এসেছে। তবে এ খাতে ব্যাংক লোন তেমন পাওয়া যায় না। জমি বা অন্য কিছু বন্ধক রেখে লোন আনছে, ওয়াকিং ক্যাপিটাল লোন পাচ্ছে না। এখন খামারের গরুটি যখন বীমার আওতায় আনা হবে, তখন ব্যাংক নিশ্চয়তা পাবে এবং বেশি লোন দেবে। মানুষ গবাদি পশু ব্যবসায় আসবেন, যার ফলে দেশের গোশত ও দুধের চাহিদা মেটানো সহজ হবে। শুধু খামারি নয়, ব্যক্তি পর্যায়ের পশু বীমার আওতায় আনা যাবে। উদ্যোগটি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে মনে করেন তিনি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, সূর্যমুখী লিমিটেডের উদ্যোগটি খুবই ভালো। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি গবাদি প্রাণীর অবস্থান শনাক্ত করা যাবে। একটি বায়োসেন্সর গবাদি পশুর পাকস্থলিতে প্রবেশ করানো হয়, যাতে একটি আইডি নম্বর থাকবে। গরুটি জবাই ছাড়া এটি বের করা যাবে। তিনি বলেন, প্রাণী বীমা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছে, তবে গরুর পরিচয় নিশ্চিত করা না যাওয়া সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। এখন অ্যাপসটির মাধ্যমে একটি আইডি নম্বর থাকবে এবং ওই নম্বরে প্রাণী বীমা করা যাবে। সরকারও অনুরূপ একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed