বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 361 বার পঠিত
দেশের বীমাখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিতে প্রচলিত তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা অর্থাৎ থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে রোববার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে সংস্থাটি।
আদেশের চিঠি পাঠানো হয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সকল বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীদের কাছে। একইসাথে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যান, এফআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে।
আইনের এ বিষয় তুলে ধরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা না থাকলে সংশ্লিষ্ট মোটরযান বা মোটরযানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই। বিআরটিএ’র এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পুলিশ মহাপরিদর্শক, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়ছে।
তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাতিল করে আইডিআরএ’র দেয়া এ সংক্রান্ত আদেশে আইনের দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট করা তাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবে।
মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বীমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকবে। বীমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
এদিকে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তুলে দেয়ার কারণে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের যে বীমা করা হয় তার প্রায় সবটাই তৃতীয় পক্ষের বীমা। গণপরিবহনের বীমা করায় হয় তৃতীয় পক্ষের। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারের কিছু প্রথম পক্ষের করা হলেও বেশিরভাগ করা হয় তৃতীয় পক্ষের বীমা। সুতরাং তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ার কারণে মোটর বীমা থেকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো যে আয় করতো তার প্রায় পুরোটাই হারাতে হবে।
তাদের দাবি, বছরে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো যে প্রিমিয়াম আয় করে তার ১০ শতাংশই আসে মোটর বীমা থেকে। এর বড় অংশই আসে মোটরসাইকেল থেকে। যার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ তৃতীয় পক্ষের হওয়ার কারণে, এসব বীমার বিপরীতে কোম্পানিগুলোর দাবি পরিশোধনের পরিমাণও বেশ কম। ফলে মোটর বীমার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই কোম্পানিগুলোর আয় হয়। এখন তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ার করণে কোম্পানিগুলা এই প্রিমিয়াম আয় হারাবে।
মোটর বীমার প্রিমিয়াম আয় হারানোর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ার কারণে এখন প্রথম পক্ষের বীমা থাকছে। আর প্রথম পক্ষের বীমা বাধ্যাতামূলক নয়। অপরদিকে প্রথম পক্ষের বীমার প্রিমিয়াম হার অত্যন্ত বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মোটরযানের মালিকরা বীমা করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাহিদ আনোয়ার খান বলেন, ‘আইনে পরিবহন বীমার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দিলেও কম্প্রিহেনসিভ বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সুতরাং পরিবহনের ক্ষেত্রে এখন বীমা করা বাধ্যাতামূলক না।’
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ার কারণে এখন সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ বাংলাদেশে যে মোটর বীমা হয় তার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ তৃতীয় পক্ষের বীমা। স্বল্প প্রিমিয়াম দিয়ে তৃতীয় পক্ষের বীমা করা যেত। অপরদিকে প্রথম পক্ষের বীমা করতে মোটা অঙ্কের প্রিমিয়াম দিতে হয়। সুতরাং পরিবহনের ক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক না থাকায় গ্রহকরা এখন বীমা করতে উৎসাহী হবেন না।
Posted ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed