বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 478 বার পঠিত
সাধারণ বীমা ব্যবসায় বিদেশে ৫০ শতাংশ পুনঃবীমার সুযোগ বন্ধ করছে সরকার। সেইসঙ্গে দেশেই পুনঃবীমা করার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনকে (এসবিসি) শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ পুনঃবীমা কোম্পানিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এতে পুনঃবীমার জন্য প্রতি বছর বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাওয়া বন্ধ হবে। দেশে পুনঃবীমা নিশ্চিত করতে এসবিসিকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনঃবীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পক্ষে এ খাতের উদ্যোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের সাধারণ বীমার বাজার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান আইনে ৫০ শতাংশ পুনঃবীমা দেশের বাইরের কোম্পানির সঙ্গে করার সুযোগ রয়েছে। এর জেরে বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো এসবিসির সঙ্গে ৫০ শতাংশ পুনঃবীমা করে। বাকি অংশের পুনঃবীমা চলে যায় বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। সেইসঙ্গে সম্পদের ৩০০ কোটি টাকার বেশি এবং নৌ বীমায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ঝুঁকির ক্ষেত্রে বিদেশে পুনঃবীমার সুযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রতি বছর দেশের প্রিমিয়াম আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পুনঃবীমা প্রিমিয়াম হিসেবে বিদেশে চলে যাচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে কয়েক বছর ধরেই দেশে পূর্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী পুনঃবীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিচ্ছেন বীমা খাতের বিশ্লেষকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসবিসিকে শক্তিশালী পুনঃবীমা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের কথাও কয়েক দফায় আলোচনায় এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই হালে পানি পায়নি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি ‘ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম দেশে রাখা’র ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। এরপর এসবিসিকে পূর্ণাঙ্গ পুনঃবীমা কোম্পানি হিসেবে গড়ে বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
বীমা কোম্পানি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘দেশেই পূর্ণাঙ্গ পুনঃবীমা কোম্পানি করা হলে বিদেশে পুনঃবীমার জন্য বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে না। প্রিমিয়ামের টাকা দেশেই থাকবে। আমরা বহুদিন ধরেই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, বড় ধরনের দুর্ঘটনায় দাবি পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কোম্পানি এসবিসির আছে। তাই আমরা এসবিসিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পুনঃবীমা কোম্পানি হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলছি। সেইসঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দু-একটি রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অত্যাধুনিক পদ্ধতির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে বীমা দাবি পূরণে কালক্ষেপণ এবং গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এসবিসির বিরুদ্ধে। পুরোনো বদনাম ঘুচাতে এসবিসিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সেইসঙ্গে কোম্পানিটির সঙ্গে দেনা-পাওনা নিয়ে চলা জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এসবিসি ও দেশের বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে এসবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, ‘এসবিসি শক্ত আর্থিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন কম সময়ে বড় বড় বীমা দাবি নিষ্পত্তি করছি। আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তারপরও দাবি পূরণে কালক্ষেপণের অভিযোগ করা হয়, সেটি অনেক পুরোনো কথা। এখন আর কালক্ষেপণ হয় না, গত কয়েক বছরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। দেনা-পাওনার জটিলতা মিটিয়ে এসবিসি’কে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) একমাত্র রাষ্ট্রীয় সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ অধীনে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের সব ধরনের সাধারণ বীমা ও পুনঃবীমা ব্যবসার জন্য ১৯৭৩ সালের ৪ মে বীমা করপোরেশন আইনে এসবিসি গঠিত হয়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ বীমা ব্যবসায় একমাত্র বীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি কাজ করে। পথচলার ৪৬ বছরে অর্থনৈতিকভাবে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে এসবিসি। বর্তমানে দেশের সাধারণ বীমা ব্যবসার প্রায় ২০ শতাংশ এসবিসির দখলে। এসবিসির মোট মূলধন ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সরকারি স্থাপনা-সম্পদের বীমা বাধ্যতামূলকভাবে এসবিসিতে করায় প্রিমিয়াম আয়-মুনাফায়ও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে এসবিসি।
Posted ১২:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed