বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পূর্বঘোষণা ছাড়া ভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বার্জারের

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০   |   প্রিন্ট   |   396 বার পঠিত

পূর্বঘোষণা ছাড়া ভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বার্জারের

পূর্বঘোষণা ব্যতিরেকে ব্যবসা ভিন্ন খাতে সম্প্রসারণ শুরু করেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। রঙের ব্যবসার সঙ্গে নতুন পণ্য হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাউজার তৈরি ও বিপণন শুরু করেছে কোম্পানিটি। তবে ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়টি বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়নি। এমনকি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়ার পরও তা প্রকাশ বা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও (ডিএসই) কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

কোম্পানির ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন বা ভিন্ন খাতের সম্প্রসারণ বা মুনাফায় প্রভাব ফেলতে পারে, এমন বিষয়কে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে ধরা হয়। এরূপ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

জানা গেছে, বার্জার পেইন্টস সম্প্রতি হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিপণন শুরু করেছে। পণ্যটি তৈরিতে বার্জারের ঢাকার কারখানার স্থাপনা ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানানোও হয়েছে।

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে স্যানিটাইজার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই নিয়মিত ব্যবহার করছে এটি। এই বাজারটি ধরতে বিভিন্ন পরিমাণের বোতলজাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করা হয়েছে। ‘বাজার মিস্টার এক্সপার্ট’ নামক এ হ্যান্ড সানিটারজারটি বার্জারের বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এজন্য বিনিয়োগকারীদের অবহিত করেনি কোম্পানিটি।

এ বিষয়ে বার্জারের কোম্পানি সচিব আবু জাফর সাদিক বলেন, ‘বার্জারের মূল ব্যবসার আর্থিক আকারের তুলনায় হ্যান্ড সানিটাইজারের আয়ের পরিমাণ খুবই কম। নতুন পণ্যের আয়ে বার্জারের আয়ের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। এজন্য আমরা মনে করছি না মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দিতে হবে।’

ব্যবসার ধরন পরিবর্তন ও নতুন পণ্য সংযোজন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বার্জারের কিছু কমন কাঁচামাল হ্যান্ড স্যানিটাইজারেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য মনে করছি না যে মূল্য সংবেদন তথ্য প্রকাশ করা প্রয়োজন।’

বিদ্যমান আইনে এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫-তে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মূল্য সংবেদনশীল হলো এরূপ তথ্য, যা প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটির বাজারমূল্য প্রভাবিত হতে পারে। এমন তথ্য বলতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা-সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা এতদসংক্রান্ত মৌলিক তথ্য, লভ্যাংশসংক্রান্ত তথ্য, রাইট শেয়ার, বোনাস ইস্যু করা বা অনুরূপ সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত, কোম্পানির কোনো স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত, কোম্পানির বিএমআরই বা নতুন ইউনিট স্থাপন, কোম্পানির কার্যাবলির ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন (যেমন উৎপাদিত সামগ্রী, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন বা এ-সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণ প্রভৃতি) এবং কমিশন কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো তথ্যকে বোঝানো হয়েছে।

একই আইনের প্রবিধান ৩, ও উপ-প্রবিধান (২)-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০০০ সালের ১৯ ডিসেম্বর এক আদেশ জারি করে। ওই আদেশ অনুযায়ী, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দেওয়ার পদ্ধতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়

(১) স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত প্রতিটি সিকিউরিটি ইস্যুকারী উহার কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের তিরিশ মিনিটের মধ্যে, কিংবা তথ্যটি উহার গোচরে আসার তারিখেই তাৎক্ষণিকভাবে উহার চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা কোম্পানি সচিবের স্বাক্ষরে লিখিতভাবে একই সঙ্গে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের নিকট ফ্যাক্স ও বিশেষ বার্তাবাহক মারফত, ক্ষেত্রবিশেষে কুরিয়ার সার্ভিসযোগে, প্রেরণ করিবে; এবং উক্ত তথ্য দুইটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায়ও (একটি বাংলা ও অপরটি ইংরেজি) অবিলম্বে প্রকাশনা নিশ্চিত করিবে।

(২) তালিকাভুক্ত সিকিউরিটি ইস্যুকারি কর্তৃক প্রেরিত ও প্রকাশিত উক্তরূপ তথ্যটিতে ইস্যুকারীর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের তারিখ ও সময়, কিংবা ক্ষেত্রমতে তথ্যটি উহার গোচরে আসার তারিখ, উল্লেখ করতে হবে।

এছাড়া মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লিস্টিং রেগুলেশনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫-এর মূল্য সংবেদনশীল সংজ্ঞামতে মূল্য সংবেদনশীল হতে পারে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদে নেওয়া হলে সে তথ্য সভা শেষ হওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে লিখিতভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনকে জানাতে হবে।

বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবসা ভিন্ন খাতে সম্প্রসারণ বা নতুন ইউনিট চালুর ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোম্পানির ব্যবসায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে তা ক্ষেত্রবিশেষে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বা বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করতে হবে এবং অনুমোদন নিতে হবে।

উল্লেখ্য, ডাই ও প্রাকৃতিক রঙের ব্যবসা হিসেবে জার্মান নগরিকে লুইস বার্জার ১৭৬০ সালে ইংল্যান্ডে বার্জার নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫০ সালে বার্জার পেইন্ট ব্যবসা শুরু করে। তখনই পাকিস্তানেও কার্যক্রম শুরু করে। আর ১৯৭০ সালে বার্জারের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় চট্টগ্রামে কারখানা স্থাপন করা হয়। পরে যৌথ মালিকানায় হাতবদল হয় একাধিকবার। ১৯৮০ সালে কোম্পানিটি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ নামে পথচলা শুরু করে।

দেশের পুঁজিবাজারে ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক এই কোম্পানিটির কোনো ব্যাংকঋণ নেই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তাদের হাতে ৯৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুই দশমিক ৪৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এক দশমিক ১৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে এক দশমিক ৪১ শতাংশ।

কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ১৭৮ কোটি ৭৮ লাখ ও ২০১৯ সালে ২০৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে কোম্পানিটি। এর পূর্ববর্তী বছরের জন্য দিয়েছিল ২০০ শতাংশ। কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৭৭০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৩০৮ টাকা ৬০ পয়সায়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।