সোমবার ৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সুবর্ণ জয়ন্তী ও অ্যাসোসিয়েটশিপ সনদ প্রদান অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   109 বার পঠিত

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সুবর্ণ জয়ন্তী ও অ্যাসোসিয়েটশিপ সনদ প্রদান অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সুবর্ণ জয়ন্তী ও অ্যাসোসিয়েটশিপ সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠান ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এস এম ইব্রাহিম হোসাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির (বিআইএ) একাডেমিক কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাকচুয়ারি ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন। এছাড়া বিভিন্ন বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে – শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ


প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বীমা খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে বীমা সনদ অর্জনকারী শিক্ষাথীবৃন্দ তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বীমা শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, বীমা কোম্পানিগুলো সমস্ত অর্থনৈতিক সেক্টরের রিস্ক কভারেজ করে। এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম আয় বা পেনিকট্রেশন হিসেব করে জিডিপিতে বীমা খাতের যে অবদানের কথা বলা হয় প্রকৃতপক্ষে তা নয়। বীমা খাতে জিডিপিতে অবদান আরো অনেক বেশি। কারণ বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক খাতের বিনিয়োগ সচল রাখছে, মানুষের জীবনকে সহজ করার পাশাপাশি সমস্ত আর্থিক কার্যক্রম সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে চলতে সহায়তা করে। এছাড়া বীমা কোম্পানিগুলো যে প্রিমিয়াম অর্জন করে সেটাও আবার একত্র করে বিনিয়োগ করেন, এতে দেখা যায় একদিকে আপনি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন অন্যদিকে নিজেও বিনিয়োগ করলেন। সেক্ষেত্রে জিডিপিতে বীমাখাতের যে অবদানের কথা বলা হয় তা থেকে আরো অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যা করছি তার থেকে আরো বেশি ভালো করার সুযোগ আছে কিনা, বা আমরা আরো ভালো করার অবস্থায় রয়েছি কিনা? নিঃসন্দেহে দেশের উন্নয়ন অনেক জায়গায় হয়েছে। এটা যেকোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেই বলবে দেশ অনেক উন্নত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ের তুলনায় সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বর্তমান সময়ের তুলনা করা হলে দেখা যাবে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা কল্পনাই করা যায় না।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে গড় আয়ু বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হয়েছে, জীবন যাত্রার মান বেড়েছে, মানুষের গড় আয় বেড়েছে। আমরা যে অবস্থায় রয়েছি তা থেকেও আরো উন্নত অবস্থায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে শুধু উন্নত দেশ বলে ক্ষান্ত হননি তিনি আরেকটি শব্দ জুড়ে দিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশ। আর স্মাট হতে হলে প্রত্যেকটি সেক্টরে স্মার্ট হতে হবে। আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে, আর অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়লে রিস্কও অনেক বাড়বে আর এই রিস্ক বীমা কোম্পানিগুলো কমাবে। এক্ষেত্রে বীমা খাতের কার্যক্রম অনেক বেশি গতিশীল হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের জিডিপির দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের জিডিপির হার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের বীমা খাত এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বীমা খাতে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইতিবাচকভাবে তা কাজে লাগিয়ে বীমা খাতের উন্নয়ণে ভূমিকা রাখবেন।

 

দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না, তাদের ধরেও রাখতে হবে : জয়নুল বারী 

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান জয়নুল বারী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বীমা একটি বিশেষায়িত পেশা। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত লোক দিয়ে বীমা সেক্টরকে বেশিদূর নিয়ে যাওয়া যাবে না, কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে না। বীমা খাতের সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষিত লোকবল দরকার। বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমি আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষিত লোক তৈরিতে অবদান রেখে চলেছে। এজন্য আমি একাডেমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেই অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা বলি কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করার জন্য আমার মনে হয় এই সেক্টরে প্রণোদনা দেয়া উচিত।

যে কোন প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মানব সম্পদ উন্নয়ন। আর মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। দুর্ভাগ্য আমরা মানবসম্পদ উন্নয়নকে বিনিয়োগ মনে করি না আমরা এটাকে খরচের খাতায় ধরি। সে কারণে আমাদের বীমা পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না কাউকে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না তাকে কাজে লাগাতে হবে। ধরে রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমাদের বেধে দেয়া লিমিটের পরেও অনেক কোম্পানি কয়েক কোটি টাকা বেশি খরচ করে। কিন্তু দক্ষ জনবল ধরে রাখার জন্য ভালো বেতন কেউ দিচ্ছে না। মনে রাখতে হবে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং তাদের কাজ দিয়ে ধরে রাখা একটি আরেকটির পরিপূরক।

 

বীমা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে: এস এম ইব্রাহীম হোসাইন


স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এস এম ইব্রাহীম হোসাইন বলেন, ২৯ শে নভেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৯ শে নভেম্বর ২০২৩ ৫০ বছর পেরিয়ে একাডেমী এখন হাজারো সফল কর্মী প্রশিক্ষিত পেশাদার বীমা ব্যক্তি নির্মানের গর্বিত অংশীদার। ৫০ বছরে একাডেমীর কোর্স সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়েছে, অ্যাসোসিয়েটশীপ পরিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।

এস এম ইব্রাহিম বলেন, স্বল্প জনগন নিয়ে যাত্রা শুরু করে অনেক প্রতিকূলতা পেড়িয়ে আমরা ৫০টি বছর অতিক্রম করে এসেছি। সময় বয়ে যায় কিছু কথা কিছু স্মৃতি রয়ে যায়। শুরুতে ২০ নং সার্কুলার রোডের ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯৬ সাল থেকে মহাখালির নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে একাডেমি। ইন্স্যুরেন্স একাডেমী শুধু বীমা সংশ্লিষ্টদের জন্য নয়, বিমান ও সেনা বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার, ব্যাংক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বিদেশি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। এসকল কোর্সে বিদেশি রিসোর্স পারসনসহ দেশের প্রথিতযশা বীমা কর্মীদের অংশ গ্রহনের জন্য আহবান জানানো হয়েছে।

ইন্সুরেন্স একাডেমির পরিচালক বলেন, সঠিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করে আমাদেরকে বিশ্বমানের বীমা প্রতিষ্ঠানে উন্নিত করতে হবে। তিনি বলেন আপনারা জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তথা একটি উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করা। এক্ষেত্রে বীমা সেক্টরের করনীয় আছে। বীমা কোম্পানিগুলো যদি গ্রাহক সেবায় উৎকৃষ্টতা অর্জন করতে পারে বীমা দাবির টাকা ঠিকভাবে বুঝে পায় তাহলে কোম্পানিগুলো যদি বীমা দাবি পরিশোধে কোন প্রকারজটিলতা তৈরী না করে ঠিক ভাবে পাওনা পরিশোধ করে তবে আমাদের বীমা সেক্টরের আস্থা সংকট দূরীভূত হবে। তিনি আরও বলেন বীমা সেক্টরের সমস্যাগুলো এখন চিহ্নিত। শুধ পলিসি বীমা দাবি যদি ঠিক ভাবে পরিশোধ করা যায় তবে জিডিপিতে এর ব্যাপক প্রভাব পরবে।

ইব্রাহিম হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যে কোন বিবর্তন রাতারাতি বা শর্টকাট পদ্ধতিতে হবে না। তিলে তিলে অর্জন বা কাজ করে অনেক বড় হয় একাডেমিও এর ব্যতিক্রম নয়, অল্প কয়েকজন ফেকাল্টি বাড়াতে পারলে একাডেমি চলতে পারবে দুর্বার গতিতে। তিনি বলেন, আমাদের সময় এসেছে শপথ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের প্রচেষ্টায় সরকার এবং বীমা সেক্টরের সকলের সমর্থন থাকবে।

তিনি বলেন, বীমা শিল্পের সচ্ছতা গ্রহক সন্তষ্টি অর্জনে কর্পোরেট গর্ভন্যাস পরিপালনের বিকল্প নেই। একাডেমির বর্তমান প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা। কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার জন্য নয় বরং মাথা উচু করে বিকশিত হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বীমা শিল্পের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করার জন্য আমাদের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত থাকবে।

সবশেষে তিনি বলেন, বীমা একটি টেকনিক্যাল শিল্প এখানে অনেক নিয়ম কানুন আছে সেজন্য বীমা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যদি বীমা কোম্পানিগুলোকে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রশিক্ষিত ব্যাপারে নির্দেশনা দেয় তবে বীমা শিল্প সমৃদ্ধ হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:০৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।