বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকিং খাতের সংকট

বিটিআরসির অর্থ সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   705 বার পঠিত

বিটিআরসির অর্থ সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ

টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা রাজস্ব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মেয়াদি আমানত হিসেবে রেখে আসছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট সংকট, অনিয়ম, নিরাপত্তা ও ঝুঁকি বিবেচনায় এ অর্থ সরাসরি প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিলে জমা দিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূলত ফারমার্স ব্যাংকে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) রাখা বিটিআরসির অর্থ ফেরত না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সমাধানে অর্থ সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব। এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে করবহির্ভূত রাজস্বপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ৩১ মার্চ চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে এ বিষয়ে জানায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। নিজেদের ব্যয় বরাদ্দ রেখে বাকি অর্থ প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিলে জমা দেয়ার বিষয়ে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।

যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকিং খাতের সৃষ্ট সংকট বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সঙ্গে একমত পোষণ করলেও টেলিযোগাযোগ আইনের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় অর্থপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তা জমা দেয়ার কথা বলা হলেও আইনে প্রতি ছয় মাসের সব ব্যয় নির্বাহের পর অর্থ জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস পর জমা দেয়ার বিধান অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে সংগৃহীত সব রাজস্ব নিজেদের ব্যয় বরাদ্দ রেখে সরাসরি জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে কমিশন।
টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয় ভাগাভাগির অংশ, লাইসেন্স নবায়ন, তরঙ্গ বরাদ্দ ফিসহ অন্যান্য উৎস থেকে সরকারের পক্ষে রাজস্ব সংগ্রহ করে বিটিআরসি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা মেয়াদি আমানতের লভ্যাংশও বিটিআরসির আয়ের অন্যতম উৎস। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর ধারা ২১-এর ২ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত তফসিলি ব্যাংকে কমিশনের অর্থ জমা রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি আমানত রাখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর ধারা ২১(৪) অনুযায়ী, কমিশন প্রতি ছয় মাসের সব ব্যয় নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থ প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিলে জমা প্রদান করবে।

এর আগে গত বছর ফারমার্স ব্যাংকে রাখা আমানতের মেয়াদ শেষ হলেও ব্যাংকটি অর্থ ফেরত দিতে না পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় বিটিআরসি। জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ফারমার্স ব্যাংকের পাঁচটি শাখায় মোট ৩৮ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখে বিটিআরসি। একই বছরের ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষে সুদসহ আমানতকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে শাখা ব্যবস্থাপকদের একাধিক চিঠি দেয় বিটিআরসি। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও চিঠি দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনানুষ্ঠানিক পত্র (ডিও লেটার) দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের এপ্রিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জুনের মধ্যে সব অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা অনুসরণ করেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে আবারো আধাসরকারি চিঠি দেয় বিটিআরসি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকেই মূলত এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী এতে কোনো ধরনের বাধা নেই। নিজেদের ব্যয় রেখেই প্রাপ্ত রাজস্ব সরাসরি প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিলে জমা দিতে পারে বিটিআরসি। স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখার যে প্রচলিত ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে আমানত পেতে অনেক ব্যাংকই আবেদন করে। এটি বন্ধ হলে মূল কার্যক্রমে আরো গুরুত্ব দিতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

জানা গেছে, বছরব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংকই তহবিল সংগ্রহে নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আবেদন করে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখার ক্ষেত্রে তাদের ক্যামেল রেটিং ও সর্বোচ্চ সুদহার বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইন অনুযায়ী, প্রতি ছয় মাসের ব্যয় নির্বাহের পর অতিরিক্ত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়। বিটিআরসির পক্ষ থেকে প্রতি বছর জুন ও ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে দেয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে টাকা জমা হলে ছয় মাস অন্তর বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা সরকারি ব্যাংক হিসাবে ব্যাংকগুলো তা জমা দিয়ে দেয়। পরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সে টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে মেয়াদি আমানত হিসাবে জমা রাখে। সরাসরি সরকারি হিসাবে টাকা জমা হলে ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট আরো বাড়বে।

কমিশন গঠনের পর থেকে সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতটি থেকে সরকারের আয়ের পরিমাণ ৫৩ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছর কমিশনের আয় প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকার অঙ্ক ছাড়ায়। পরবর্তী সময়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে টুজি লাইসেন্স নবায়ন ও তরঙ্গ বরাদ্দের ফির কারণে কমিশনের আয় দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯৫৭ কোটি। এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। মূলত থ্রিজি সেবার লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থবছরটিতে এ আয় হয়। ফোরজি সেবার লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দের ফি মিলিয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে কমিশনের আয় হয় ৬ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে তরঙ্গ নিলাম থেকে ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা বাবদ আয় হয় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।