শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিপর্যয় বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   689 বার পঠিত

বিপর্যয় বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

বিপর্যয় বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। দিনদিন খারাপ থেকে খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে এই খাত। লম্বা হচ্ছে খেলাপি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা । দৈনন্দিন কার্য পরিচালনায় নগদ টাকার সঙ্কটে অনেক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকিংখাতে সঙ্কট মোকাবেলায় একীভূতকরণ অধিগ্রহণ ও নাম পরিবর্তন হলেও অবসায়নের মতো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বিপর্যস্ত আর্থিকখাতে পিপল্স লিজিংয়ের জন্য অবসয়ানের সিদ্ধান্ত এসেছে। এ অবস্থায় নতুন করে আমানতকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা ফেরৎ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন। এ যেন মরা ওপর খাড়ার ঘা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে চাহিদার তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেশী। তাই এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, দেশে এতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে, খেলাপির ভারে জর্জরিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে। তাই দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রীকরণের পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের সংশ্নিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ এমনিতেই বাড়ছিল। করোনার কারণে ঋণ আদায় ব্যাপক কমে গেছে। এতে করে টাকার প্রবাহ ব্যাপক কমেছে। এর মধ্যে আবার সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সব মিলিয়ে চরম সংকটে আছে তারা। তারল্য সংকট কাটাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সংগঠন বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনে এ ধরনের তহবিল দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সিআরআর কমানো, শিথিল শর্তে প্রণোদনার অর্থ দেওয়াসহ নানা নীতি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এত আর্থিক প্রতিষ্ঠান দরকার নেই। এখন সময় এসেছে ব্যাংক বা অন্য সবল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে দেওয়া। তারা ব্যাংকের মতো একই রকম পণ্য নিয়ে কাজ করছে। অনেকের পক্ষে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে সেখানে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিচালকবৃন্দের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে আথিক দুরাবস্থায় পড়ে পিপল্স লিজিং। এজন্য ২০১৪ সাল থেকে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানীটি। । ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক পর্যন্ত পিপল্স লিজিংয়ে আমানত ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এ সময় আমানতকারীদের আমানত ফেরৎসহ দৈনন্দিন কার্য পরিচালনায় নগদ টাকার সঙ্কটে পড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। তাই গেল বছর পিপল্স লিজিং বন্ধের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পিপল্স লিজিংয়ের রেশ না কাটতেই সম্প্রতি আমানতকারীদের এক হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) লিমিটেড। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে অবহিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিআইএফসির মোট আমানতের পরিমাণ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আর কোনো আমানত সংগ্রহ করতে পারেনি। মুনাফাসহ আমানতের পরিমাণ বেড়ে এখন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিআইএফসিতে বারবার ধরনা দিয়েও আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেছেন। তাতে কাজ হচ্ছে না।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে। করোনাভাইরাস শুরুর আগে ২০১৯ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটি স¤প্রতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। এই তালিকায় অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং ছাড়াও নাম রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। ঋণখেলাপির তালিকায় থাকা এসব প্রতিষ্ঠানই বেশি সংকটে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খারাপ কাজের কারণে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত বিপদে পড়েছে। প্রতিনিয়তই আমানত তুলে দেওয়ার জন্য কেউ না কেউ অভিযোগ নিয়ে আসছে। এ রকম অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপদে আছে। তবে পিপলস লিজিং অবসায়ন প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আপাতত কোনো প্রতিষ্ঠান আর অবসায়ন করা হবে না। তবে স্বেচ্ছায় মালিকানা বদল, একীভূত বা অন্য কোনো উপায়ে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।