শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্তির পথে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা’সহ অনেক দুর্ঘটনাজনিত বীমা প্রকল্প!

মো. মানসুর আলম সিকদার, এমবিএ-এলএলবি   |   বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   271 বার পঠিত

বিলুপ্তির পথে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা’সহ অনেক দুর্ঘটনাজনিত বীমা প্রকল্প!

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যার নেতৃত্ব এবং পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার দামাল ছেলেরা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিকট থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। সেই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা’ নামকরণ করা হয়েছিল বলে এর ওপর সকলের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী পলিসিটি সাড়া ফেলতে পারেনি। অবশ্যই ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা’ প্রকল্পটির প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি? সার্কুলার নন-লাইফ-৭৯/২০২০, তারিখ ১১/১০/২০২০ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা প্রকল্প চালু হয়। যাহা বীমা জগতে আলোরণ সৃষ্টি করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা প্রকল্পটি ব্যপক ভাবে সারা ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তিতে স্ট্যাম্প প্রয়োগ নীতির কারণে সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বিলুপ্তির পথে বলে দৃশ্যমান। কারণটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা প্রকল্পটির প্রিমিয়াম ছিল ১০০ টাকা এবং স্ট্যাম্প শুল্ক ছিল Non-recoverable Stamp Duty 10.00 (Under Rule 47 insurance Act)। বর্তমানে স্ট্যাম্প প্রয়োগ নীতির কারণে Nonrecoverable Stamp Duty ১০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা ব্যবহার করতে হচ্ছে অর্থাৎ বীমা অংক ২ লাখ টাকা ভাগ ৫ হাজার টাকা= (৪০ x ২০)=৮০০ টাকা। তাই এখন প্রিমিয়াম ১০০+ ভ্যাট ১৫ টাকা সর্বমোট ১১৫ টাকা এবং বীমা প্রতিষ্ঠানকে স্ট্যাম্প বাবদ দিতে হবে ৮০০ টাকা তাই বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সুরক্ষাবীমা প্রকল্পের প্রতি তেমন কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এটা সত্যিই দুঃখজনক।

এই বীমায় কভারেজগুলো নিম্নরূপ:

১) মৃত্যু অথবা আঘাতজনিত কারণে যদি আহত হয়ে ক্যালেন্ডারের ৬ মাসের মধ্যে মৃত্যু ঘটে তবে বীমা দাবি ১০০ ভাগ পরিশোধ করতে হবে।
২) আঘাতজনিত কারণে ক্যালেন্ডারের ৬ মাসের মধ্যে যদি স্থায়ী ক্ষতি/দুই হাত/দুই পা/দুই চোখ/এক হাত এবং এক পায়ের মোট স্থায়ী ক্ষতি হয় তবে বীমা দাবি ১০০ ভাগ পরিশোধ করতে হবে।
৩) আঘাতজনিত কারণে ক্যালেন্ডারের ৬ মাসের মধ্যে যদি স্থায়ী ক্ষতি/একটি হাত/একটি পা/একটি চোখের স্থায়ী ক্ষতি হয় তবে বীমা দাবি ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে।
৪) আঘাতজনিত কারণে ক্যালেন্ডারের ১২ মাসের মধ্যে যদি স্থায়ী সম্পূর্ণ শারীরিক অক্ষমতা তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে বীমা দাবি ১০০ ভাগ পরিশোধ করতে হবে।

অনেকেই মনে করছেন, ‘কভারেজ হওয়া উচিত ছিল আরো ব্যাপক, উপরোক্ত কভারেজে আহত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ হাসপাতালের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছুই রাখা হয় নাই, রোগজনিত কোনো মৃত্যু হলে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয় নাই, যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য মৃত্যু হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নাই, সেখানে শর্ত জুরে দেয়া হয়েছে। যে কোন দুর্ঘটনায় আহত, তৃতীয় পক্ষের ক্ষতি, মৃত্যুজনিত কোনো ঘটনা ঘটলেই তার জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলে অনেকেই মনে করছেন। নন-লাইফ-৯১/২০২২ সার্কুলার অনুযায়ী, General exclusion গুলো নিম্নে দেয়া হলো

১) রোগজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হলে।
২) যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সামরিক বাহিনী কর্তৃক এবং পারমাণবিকজনিত কারণে কোনো ক্ষতি।
৩) মহিলার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম বা গর্ভাবস্থায় কোন ক্ষতি;
৪) আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা, উন্মাদ অবস্থায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে;
৫) যে কোনো বড় খেলা, মোটরসাইকেল চালানো, পর্বত আরোহণ, শীতকালীন ক্রীড়া, কাঠের বস্তুজনিত কর্মকালীন সময়ে, যে কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারণে ক্ষতি হলে কোন ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে না।
Personal Accident Policy (PA) প্রকল্প বিলুপ্তির পথে:
অতি সম্প্রতি যে বিষয়টি সর্বাধিক সমালোচিত হচ্ছে তা হচ্ছে স্ট্যাম্প ডিউটি প্রয়োগের নীতিমালা। এই নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের চেয়ে স্ট্যাম্প ডিউটির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। অর্থাৎ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যায়। উদাহরন স্বরূপ Personal Accident Policy Ges Peoples Personal Accident পলিসির কথা বলা যায়। যেমনএকজন ব্যক্তি, ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা পলিসি ক্রয় করবে, ধরুন তার পেশা হচ্ছে কেরানি এবং Death, Permanent Total & Partial Disablements ঝুঁকি নিবে। এখানে বীমা অংক ৫ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। সেখানে প্রিমিয়াম হবে ০ দশকি ১২৫ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম হবে ৬২৫ টাকা সঙ্গে স্ট্যাম্প (৫,০০,০০০/৫০০০*২০)=২,০০০ টাকা (Recoverable Stamp Duty) এবং ভ্যাট ৯৪ টাকা সর্বমোট প্রিমিয়াম হবে ২ হাজার ৭১৯ টাকা। এরূপ সামঞ্জস্যহীন নীতির কারনে বীমাগ্রহীতাগণ স্বভাবতই এই ধরনের বীমা করার ক্ষেত্রে নিরূৎসাহিত হয়ে পড়বেন।

প্রিমিয়াম মাত্র ৬২৫ টাকা অপরদিকে সরকারি রেভিনিউ (পরক্ষ এবং প্রত্যক্ষ) ২ হাজার ৯৪ টাকা: খেয়াল করে দেখুন প্রিমিয়াম মাত্র ৬২৫ টাকা সরকারের রেভিনিউ (পরক্ষ এবং প্রত্যক্ষ) ২ হাজার ৯৪ টাকা, এগুলোতে কি যুক্তি আছে? পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের নজির কেউ দেখাতে পারবে? যদি পৃথীবির কোথাও এই ধরনের নজির না থাকে তবে সেটা বাংলাদেশে নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ হচ্ছে কেন? কোন যুক্তিতে স্ট্যাম্প শুল্ক এভাবে ধার্য করা হয়েছে? যার ফলশ্রুতিতে পারসোনাল এক্সিডেন্ট পলিসি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।

Peoples Personal Accident Policy (PPA প্রকল্প বিলুপ্তির পথে:

Personal Accident Policy (PA)-এর ন্যায় এটাও একটি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির কভার দিয়ে থাকে। এই পলিসির প্রিমিয়ামের হার IDRA/CRC কর্তৃক নির্ধারিত।

Circular No. MISC. 078/2008

ক) মোট বীমা অংক ১ লাখ টাকা মাত্র।

খ) প্রিমিয়াম ৬০ টাকা নির্ধারিত।

প্রিমিয়াম মাত্র ৬০ টাকা অপরদিকে সরকারি রেভিনিউ পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ ৪৬৪ টাকা: Peoples Personal Accident Policy (PPA)। (PPA) বিলুপ্তির পথে হওয়ার কারণ হচ্ছে Circular No. MISC. 078/2008 অনুযাযী প্রিমিয়াম ৬০ টাকা নির্ধারিত এবং পূর্বে স্ট্যাম্প ছিল ৫০ টাকা, কিন্তু স্ট্যাম্প নীতি পরিবর্তন হওয়ার ফলে স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে (১,০০,০০০ /৫০০০ * ২০)= ৪০০ টাকা (Recoverable Stamp Dut) স্ট্যাম্প ফি দিতে হবে এবং ভ্যাট দিতে হবে ৯ টাকা। অর্থাৎ সর্বমোট প্রিমিয়াম হবে ৪৬৯ টাকা মাত্র এগুলো হাস্যকর ঘটনা ছাড়া কিছুই না। বর্তমানে স্ট্যাম্প প্রয়োগনিতির কারণে Peoples Personal Accident Policy (PPA) ) প্রায় বিলুপ্তির পথে বলে দৃশ্যমান।

মোটর থার্ড পার্টি বীমা তো বাধ্যতামূলক উঠিয়েই দিলো বাংলাদেশে দায়যুক্ত বীমাপত্রে (Act Liability) বীমাটি ছিল বাধ্যতামূলক, এই কারণে যে, আইনের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে বীমাটি করা হতো কিন্তু ২০/১২/২০২০ইং তারিখে এ সংক্রান্ত সার্কুলার নম্বর- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তথা, থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একটু খেয়াল করে দেখুন মোটর বীমা পরিকল্প বাতিল করা হয় নাই। মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করার মাধ্যমে সরকার থেকে যানবাহনের থার্ড পার্টি বীমা তুলে দেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিলো কর্তৃপক্ষ। মোটরযান অধ্যাদেশের ১০৯ ধারা অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা (থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স) গ্রহণ করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল তা আর রইলো না। তবে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এ প্রতিটি মোটরযানকে বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনয়নের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করার কারণে মোট ১৩ শতাংশ প্রিমিয়াম আয় কম হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ছোট ছোট অগ্নিবীমা পলিসিও বিলুপ্তির পথে: অনেক অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, প্রিমিয়ামের চেয়েও স্ট্যাম্পের মূল্য বেশি দিতে হচ্ছে। যে, ধরুন বীমাকৃত সম্পদের মূল্য ২ লাখ টাকা বীমাটি হবে Godown, রেট আছে With warranty A, , রেট হচ্ছে ০ দশমিক ০৯ শতাংশ সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম আসবে ১৮০ টাকা ভ্যাট ২৭ টাকা, স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা মোট প্রিমিয়াম যদিও ২০৭ টাকা বীমাগ্রহীতাকে দিতে হবে, কিন্তু কোম্পানিকে পরিশোধ করতে হবে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্প। এগুলোর যুক্তি কি? তাই এই ধরনের পলিসি অনেক বীমা কোম্পনি এড়িয়ে যাচ্ছে অথবা যেতে বাধ্য হচ্ছে। একটু খেয়াল করে দেখুন নেট প্রিমিয়াম ১৮০ টাকা ভ্যাট ২৭ টাকা ঠিক আছে, কিন্তু সেখানে স্ট্যাম্প বাবদ কোম্পানিকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে, এর কোনো যুক্তি আছে?
রাজনীতিবীদদের হাতে যেমন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নেই তেমটি বীমাবিদদের হাতেও বীমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই!

কথাটি অত্যন্ত অপ্রিয় সত্যি যে, রাজনীতিবিদদের হাতে যেমন রাজনীতি নেই, তেমটি বীমাবিদদের হাতেও বীমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নন-লাইফে বীমার চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্ডার রাইটারসগণ। খোঁজ নিয়ে দেখুন, তারা এখন নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে অপেশাদার লোকদের হাতে আন্ডার রাইটারসগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আন্ডার রাইটারসগণের কোনো মূল্যই নাই। যদি সম্ভব হতো, তবে অপেশাদার ব্যক্তিরা আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্ট উঠিয়ে দিতো। মূল সমস্যা হচ্ছে আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্ট ব্যবসা করতে সাহায্য করে, কিন্তু নগদ লেনদেন এখানে হয় না, বীমা দাবি উত্থাপন হলেও আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্টের সরাসরি কোনো ভূমিকা নাই। শাখাপ্রধান অথবা বীমা উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন অথবা অন্যান্য সুবিধাদি তাদের ওপর নির্ভর করে না। তাই তারা আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্টের গুরুত্ব দেয় না বলে মনে হচ্ছে। আপনি যেখানেই যাবেন বীমার গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তে আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্টকে রাখা হয় না বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছেন। এটা বীমা সেক্টরের জন্য ভয়াবহ রেড অ্যালার্মিং। কেননা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবশ্যই আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্ট থেকে আসা উচিত। কারণ হচ্ছে এই আন্ডাররাইটিং ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এবং সমগ্র বীমা সেক্টরের জন্য মূল চালিকাশক্তি।

বীমায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রবিধানমালার সংশোধনীতে যে গুলো পরিবর্তন করা ঠিক হয়নি বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছেন!

১) কর্ম অভিজ্ঞতার গুরুত্ব কম দেয়া হয়েছে: সংশোধিত প্রবিধানমালায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্ম অভিজ্ঞতা কমানোর পাশাপাশি সর্বনিম্ন বয়সসীমাও তুলে দেয়া হয়েছে। এখানে সংশোধিত প্রবিধানমালায় কর্ম অভিজ্ঞতার প্রতি কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

২) পূর্বে কমপক্ষে তিন বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাসহ সংশ্লিষ্ট বীমা ব্যবসায় কমপক্ষে ১৫ বছর অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছিলঃ বিদ্যমান প্রবিধানমালা অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতে হলে পদ প্রার্থীকে ইতিপূর্বে কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা এর অব্যবহিত নিম্নপদ অর্থাৎ এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বা ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে কমপক্ষে তিন বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাসহ সংশ্লিষ্ট বীমা ব্যবসায় কমপক্ষে ১৫ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়ার শর্ত রয়েছিল।

৩) বীমার ওপর অভিজ্ঞতার কোন গুরুত্ব দেয়া হয় নাই: সংশোধিত প্রবিধানমালায় এই দুই ধরনের অভিজ্ঞতার শর্তই শিথিল করে মুখ্য নির্বাহী বা অব্যবহিত নিম্নপদের জন্য অভিজ্ঞতা অন্যূন দুই বছর এবং সংশ্লিষ্ট বীমা ব্যবসার অভিজ্ঞতা অন্যূন ১২ বছর করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির বীমা ব্যবসার শর্তটি বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে বীমার ওপর অভিজ্ঞতার কোনো গুরুত্বই দেয়া হয় নাই।

৪) এখানেও কৌশলগত কারণে বয়সসীমা ৪০ বছরের যে শর্ত রয়েছে সেটিও বাতিল করা হয়েছে: একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রবিধানে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ বছরের যে শর্ত রয়েছে সেটিও বাতিল করা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৭ বছরের শর্ত বহাল রয়েছে।

৫) এখানেও বীমার (ডেস্ক) ওপর অভিজ্ঞতার কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় নাই: সংশোধিত প্রবিধানমালার খসড়া প্রজ্ঞাপনে মুখ্য নির্বাহী প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে বলা হয়েছে, “কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে কমপক্ষে ২য় শ্রেনীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অথবা চার বৎসর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রীর অধিকারী। গ্রেডিং পদ্ধতির ফলাফলের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা প্রযোজ্য হইবে। তবে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হইতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট দাখিল করিতে হইবে।’

এখানে টিক মার্কের রেজাল্টের খুব গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞতার সামান্যতম কোন গুরুত্ব দেয়া হয় নাই। যেখানে বিসিএস ক্যডারদের বেলায়ও তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য, সেখানে বীমার মুখ্য নির্বাহী প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে বলা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণ যোগ্য হবে না, এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না। অনেকেই মনে করছেন এখানে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে, তা না হলে এটা হওয়ার কথা না। বীমা প্রতিষ্ঠানে বীমা সেক্টরে অবশ্যই বীমা জানা লোকদের গুরুত্ব দিতে হবে তা না হলে এই সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
৬) আমলানির্ভর বীমাখাত নিয়ন্ত্রণ হবে মর্মে আইন হচ্ছে কিন্তু বীমার ওপর অভিজ্ঞতার কোনো গুরুত্ব এখানেও দেয়া হয় নাই: অভিজ্ঞতার শর্তে বলা হয়েছে, “ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন দুই বছর কর্ম অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে, কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করিলে উপরোল্লিখিত শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিম্নোক্তভাবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করিতে পারিবে।”

(ক) সরকারের অধীনস্থ অন্য কোনো খাতে সর্বশেষ কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার পদে কর্মরত ছিলেন এইরূপ ব্যক্তিকে: সরকারের অধীনস্থ অন্য কোনো খাতে সর্বশেষ কমপক্ষে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার পদে কর্মরত ছিলেন, এইরূপ ব্যক্তি যাহার ব্যাংক/বীমা/আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বৎসরের (তন্মধ্যে বীমা বিষয়ক কাজে কমপক্ষে ১ (এক) বৎসরের কর্ম অভিজ্ঞতা) কর্ম অভিজ্ঞতাসহ সরকারি কাজে ১৫ (পনের) বৎসরের কর্ম অভিজ্ঞতা।

(খ) আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে নিযুক্ত ব্যক্তি: আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে কমপক্ষে আট বৎসরের বীমাবিষয়ক সরাসরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি।

নীতিনির্ধারকগণ অমলানির্ভর বীমাখাত নিয়ন্ত্রন করে কার স্বার্থরক্ষা করছে? আমরা জানি না। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে এগুলো বাস্তবায়ন করে বীমাখাত নিয়ন্ত্রণ হবে না বলে নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে। অনেকেই অশঙ্কা করছেন যে, দিনদিন বীমাখাত আরো নিম্নমুখী হবে। বীমার ওপর অভিজ্ঞতার অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে তা না হলে এই খাতের উন্নয়ন ঘটবে না।
কিছু মন্তব্য:

* মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ-অপসারণসংক্রান্ত প্রবিধানমালার সংশোধনী সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ এবং বয়সসীমা শিথিল করা সবই যুগোপযোগী শর্ত। এটিকে আমরা সাধুবাদ জানাতে পারি।
* মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে প্রবিধানমালা সংশোধনে আইডিআরএ’র এই উদ্যোগ সম্পর্কে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম বলেন, বীমা খাতে বর্তমানে কোয়ালিফাইড সিইও’র সংকট রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিয়োগসংক্রান্ত প্রবিধানের শর্তে কিছুটা শিথিলতা আনা সময়োপযোগী। তবে এটি দীর্ঘসময়ের জন্য করা ঠিক হবে না। আগামী ৪/৫ বছরের জন্য এটি হতে পারে। এরপর সংকট কেটে গেলে এখানে আবার সংশোধনী আনা উচিত হবে।

* চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, মুখ্য নির্বাহী পদের অব্যবহিত নিচের পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া উচিত। বীমাখাতে যেহেতু সিইও সংকট রয়েছে সেক্ষেত্রে কোয়ালিফাইড কর্মকর্তাদের বয়সসীমার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি বীমা জানা ব্যক্তিদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন না করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো এগোতে পারবে না: “বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি বীমা জানা ব্যক্তিদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন না করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো এগোতে পারবে না। যতই চেষ্টা করেন কোনো ফল আসবে না। অভিজ্ঞতা বেশি থাকলে এবং বীমার ওপর যথেষ্ট জ্ঞান রাখলে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলও করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেই ব্যক্তির বীমা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই নাই, সে যদি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের অনুমোদন পায়, তার দ্বারা বীমার কি উপকার হবে? বীমা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের স্বার্থে প্রবিধানমালাটির সংশোধিত খসড়া প্রজ্ঞাপনের পূর্বে ব্যপারটি ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।

বাংলাদেশ ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা বীমা সেক্টরে বহুগুণে পিছিয়ে আছি। অপ্রিয় সত্যি কথা হচ্ছেÑ “বীমা অপেশাদার ব্যক্তিবর্গ বীমা সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পরও আমরা বীমা সেক্টরে তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা কোনো ক্রমেই বীমার পেশাদার ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করতে পারছি না। যতদিন বীমার পেশাদার ব্যক্তিদের মূল্যায়ন না হবে, ততদিন বীমা সেক্টরের কোনো উন্নয়ন হবে না। যে উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কিছুই না।”

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:০৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।