মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকিং সেক্টর ও রেটিং এজেন্সির মূল্যায়ন

পান্না কুমার রায় রজত   |   বুধবার, ১৭ মে ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   113 বার পঠিত

ব্যাংকিং সেক্টর ও রেটিং এজেন্সির মূল্যায়ন

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক সঞ্চয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতে ভাটা পড়েছে। বৈশি^ক রেটিং এজেন্সি বা ঋণমান নিরূপণকারী সংস্থা মুডিস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেগেটিভ’ রেটিং দেয়া দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অশুভ সংকেত। মুডিস হলো বিশে^র তিনটি বড় রেটিং এজেন্সির অন্যতম।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে দেশের ঋণমান নির্ধারণ করেছিল। ৯ মাস পরে সংস্থাটি অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০২২ রেটিংসের মান পূনঃমূল্যায়ন করে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেছে। সংস্থাটি আরও জানায়, ২০২৩ জুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমানতের প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে। ফলে এ বছর তারল্য সংকট দূর হবে না। এ ছাড়াও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানি খাতেও আয়ও কমে যেতে পারে। অর্থনীতির জন্য এখন মাথা ব্যথার কারণ হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্থর গতি। রেমিটেন্স হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উৎস। কারণ পণ্য রপ্তানি করে যে আয় হয় তার একটি বড় অংশই কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে চলে যায়। কিন্তু রেমিটেন্সের প্রায় শতভাগই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনে করে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ঋণমান নিয়ে নিয়ে মুডিস এর সতর্কবার্তার ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহণের খরচ ও পুঁজিবাজারে প্রবেশের ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। তবে এটা ঠিক ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবের কারণে এই অবনমন ঘটতে পারে।

ব্রিটানিকা ডটকমের তথ্যমতে, ১৭৭২ সালে লন্ডনে ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকটের জন্য ব্যাংকে ধস নামে। যার প্রভাবে স্কটল্যান্ডের অধিকাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে ইউরোপের আর্থিক কেন্দ্র আমষ্টারডাম থেকে হামবুর্গ, সেন্ট পিটার্সবার্গ, জেনেভা, ষ্টকহোম এবং প্যারিস পর্যন্ত সংকটকে ঘনীভূত করে তোলে। এছাড়া ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকট ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। তখনো একই সময়ে আমানতকারীরা গণহারে তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিতে শুরু করেছিল। যার ফলে ব্যাংকে তারল্য সমস্যার সৃষ্টি হয়ে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। লেম্যান ব্রাদার্সের কথা আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি।

২০০৮ সালে তারল্য সংকটের জন্যই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। আমেরিকার ষোড়শ বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। তাদের মূল ব্যবসা ছিল প্রযুক্তি স্টার্ট আপের জন্য ঋণ দেওয়া। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই চূড়া থেকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের এ পতন আর্থিক ও প্রযুক্তি খাতে চরম বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর আমেরিকায় আরেক জনপ্রিয় ব্যাংক সিগনেচার ব্যাংকও বন্ধ হয়েছে এবং গত ১ মে, ২০২৩ ফাস্ট রিপাবলিক ব্যাংকেরও পতন দেখলো যুক্তরাষ্ট্র। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা আজও রয়ে গেছে।

বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুসারে করোনা মহামারি শুরুর পর ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়লে টেকনোলজি বেজড (যেখানে বাইরে কাজের চেয়ে ইনডোর কাজের সুযোগ বেশি) কোম্পানিগুলো ভালো করতে থাকে। ফলে মানুষ তার কাছে থাকা অলস টাকা প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বেশি এমন ব্যাংকে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা বাড়িয়ে দেয়। ফোর্বস এর রিপোর্ট অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সিলিকন ভ্যালি আমানত ছিল ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,যা মাত্র দু’ বছর ব্যবধানে ২০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আলোচিত সিলিকন ভ্যালি আগে থেকেই বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী ছিল এবং বড় বিনিয়োগ ছিল এই খাতে। প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপ যে ঋণ দেওয়া হয় সেটায় মুনাফার হার থাকে অনেক বেশি এবং সেই সঙ্গে ঝুঁকিও অনেক। এই খাতকেই মানি মার্কেটের ভাষায় বলা হয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। আলোচিত ব্যাংকের বড় বিনিয়োগ ছিল এই ভেঞ্চার লেন্ডারদের কাছে। ফরচুন ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুসারে সেই বিনিয়োগ তাদের মোট বিনিয়োগের শতকরা ৫৬ ভাগ।

একদিকে ফেডারেল রিজার্ভ ভন্ডের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ায় সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগের অ্যাসেট ভ্যালু কমে গেল মারাত্মকভাবে, অন্যদিকে র্স্টাট আপ ক্যাপিটালে যে বিনিয়োগ ছিল, সেটি ফেরৎ আসছিল ধীরগতিতে। ফলে সিলিকন ভ্যালি পরিস্থিতি সামাল দিতে তার হাতে থাকা বন্ড থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারের বন্ড বিক্রি করে দেয়। যেখানে সিলিকন ভ্যালির লস হয় ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতি সামাল দিতে পরিকল্পনা করে শেয়ার ছেড়ে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের ক্যাপিটাল বাড়ানোর। কিন্তু বাজারে এর মসধ্যেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। ইনভেষ্টররা টাকা তুলে নিতে শুরু করে এবং রেকর্ড পরিমাণ অর্থ তুলে নেয় এক দিনে। অবধারিতভাবেই অবসায়নে চলে যায় ব্যাংকটি। তারল্যই হচ্ছে ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার মেরুদন্ড। এসবি ব্যাংক ধসের কারণ মূলত একটিই। ঝঁুঁকি অনুধাবনের অক্ষমতা। আমানত সঞ্চয়কারীদের জন্য সম্পদ হলেও ব্যাংকের জন্য তা দায়। সম্পদ ও দায়ের সময়সীমার অসামঞ্জস্যতা ফাইন্যান্সের এক অন্যতম সমস্যা। স্বল্পমেয়াদী আমানতের টাকা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে যে কোনো কোম্পানি তারল্যের সংকটে পড়বেই। এটা হলো কীভাবে?

বন্ড হচ্ছে এমন একটা ফাইন্যান্সিয়াল ঋণ ইনস্ট্রোমেন্ট যেটিতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা হয় এবং মুনাফার হার ফিক্সড থাকে। সাধারণত মার্কিন বন্ডগুলো ২০-৩০ বছর মেয়াদি হয়। এই মার্কেটের সুবিধা হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট মুনাফা ফিক্সড করে ফেলা।

অনেকটা ব্যক্তি খাতে মানুষ যেভাবে সঞ্চয়পত্র কিনে নিরাপদ থাকতে চায় তেমন। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বড় অংকের বিনিয়োগ করেছিল বন্ড মার্কেটে। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে বিশ^ব্যাপী মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে মার্কিন কেন্দ্রিয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর কারণে। এর ফলে এই ব্যাংক বন্ডে আগে বিনিয়োগকৃত অর্থের জন্য বাড়তি মুনাফা পাবে না। আবার মেয়াদপূর্তির আগে বন্ড ভাঙ্গালেও অনেক কম মুনাফা পাবে। ভন্ড ভাঙ্গালেও সমস্যা রাখলেও সমস্যা। বন্ড রেট নির্ধারিত হয় চলমান ব্যাংক সুদের হার অনুসারে। অর্থাৎ বন্ড রেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজারে ব্যাংকের মুনাফা রেট নির্ধারণ হয়। ইউএস বাজার সামাল দিতে শুধু বন্ড মার্কেটই নয়, ব্যাংকিং সেক্টরেও সুদের হার বেড়েছে। ফলে ব্যাংক আগের চেয়ে বেশি মুনাফা বা সুদ গ্রাহককে দিতে হচ্ছে। ব্যাংক আটকে যায় আগের বন্ড রেটে ফলে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায় ব্যাংকটির।

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থা কেমন? যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে যদি ব্যাংকের পতন হয় তাহলে আমাদেরও এমন পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি? বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে এ ধরনের পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় ধরা হয়। এদিকে বিশেষ ছাড় দিয়ে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমানো হয়। কিন্তু কাগজে কলমে মন্দ ঋণ কম দেখালেও এসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও ব্যক্তি খাতের ৮ ব্যাংক। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান,খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। যাদের প্রভিশন ঘাটতি থাকে নিয়ম অনুযায়ী তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। আবার যে সব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় তাদেরও মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে করে ব্যাংকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমানতকারীদের অর্থের ঝুঁকি ও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জুলাই-ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ১ ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। এটা ঠিক যে বিশ^বাজারে জ¦ালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য উর্ধ্বমূখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বহির্বিশে^র সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি হিসাবে উদ্ধৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্ধৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৯৬ কোটি ডলার। আবার সামগ্রিক লেনদেনেও অর্থাৎ ওভারঅল ব্যালেন্স বড় ঘাটতিতে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনের ঋণাত্মক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এই সূচকটিতে আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ২২২ কোটি ডলার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। পক্ষান্তরে এফডিআই বেড়েছে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে তা বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নীট এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বলা হয়। আলোচিত সময়ে নীট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ১৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে নীট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৪৬ কোটি ডলার। বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটাতে নানা শর্ত দেয়া হয়েছে আমদানিতে। এতে করে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। এখনো রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে বেশি খরচ হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ছাড় কমে গেছে। একই সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না বিদেশি বিনিয়োগও। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতিও চলতি হিসাবের ঘাটতির পাশাপাশি সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত দুই মাস ধরে আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। দেশের ব্যাংক খাতে ফেব্রুয়ারি মাসে জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। একই সময়ে ব্যাংক থেকে বিতরণকৃত ঋণের পরিমান বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক শূন্য ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিমান্ড ডিপোজিট ১ দশমিক ৭৯ লাখ কোটি টাকা এবং টাইম ডিপোজিট ১৩ দশমিক ২৬ লাখ কোটি টাকা। এর আগে জানুয়ারিতে ১৪ দশমিক ৮৮ লাখ কোটি টাকা ছিল। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ লাখ কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষে এটি ছিল ১৪ দশমিক ১১ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ১৪ দশমিক ৪১ লাখ কোটি, নভেম্বরে ১৪ দশমিক ১৮ লাখ কোটি এবং অক্টোবরে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ কোটি টাকা ঋণ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগে জানুয়ারিতে এই রেট ছিল শতকরা ৬ দশমিক ১৪। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আমানতের গ্রোথ ৭২ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ছিল প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আমানতের জিডিপির ৬০ গুণ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন অর্থনীতির যে কোনো বিপর্যয়ে বিশ^ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের যে সব কারণে ব্যাংক বন্ধ হয়েছে তা বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান নেই। ফলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে ঝুঁকি নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে থাকে। যেখানে স্বল্প সংখ্যক ব্যাংক বিপুল সংখ্যক শাখা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে থাকে। তাদের সেখানে সামান্য কয়েকটি শাখা নিয়ে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খুব সামান্য কারণেই একটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি ব্যাংক সাধারণত সামান্য কারণে দেউলিয়া হয় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুশাসনের ঘাটতি। ব্যাংকগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়া ও ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতিতে বড় ধরনের ফাঁকি। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এটা ঠিক আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে ও আমানতের বিপরীতে বীমা সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রে আমানতকারীদের ১২ লাখ ডলার পর্যন্ত আমানত বীমার আওতায় আছে। বাংলাদেশে আছে ২ লাখ টাকা। বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা, গতিশীলতাও আস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল ভূমিকা রাখতে হবে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৪৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।