শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যয় সাশ্রয়ী আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এগিয়ে যাচ্ছে

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০   |   প্রিন্ট   |   987 বার পঠিত

ব্যয় সাশ্রয়ী আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এগিয়ে যাচ্ছে

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহজ, নিরাপদ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’র আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর এক বছর পূর্তি হতে চলেছে। এক বছরে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মনোপলি ভাঙতে এবং টাকা লেনদেন খরচ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে ‘নগদ’। সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবাটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর স্বাধীনতা দিবসে ‘নগদ’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর যাত্রা শুরুর মাত্র ১০ মাসে ‘নগদ’ দৈনিক ১০০ কোটি টাকা লেনদেন করতে সক্ষম হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ১২ জানুয়ারি ‘নগদ’র দৈনিক লেনদেন ১০০ কোটি টাকা অতিক্রমের ঘোষণা দেন। এই বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ মোস্তাফা জব্বার জানান, ‘নগদ’ এ দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশে ডাক বিভাগের নিজস্ব অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ‘দ্য পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ১৮৯৮’-এর আওতায় অর্থ লেনদেন ‘মানি অর্ডার’ হিসেবে পরিচিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ আইনে ‘মানি অর্ডার’ বলবৎ আছে। ‘নগদ’ হলো মানি অর্ডারের ডিজিটাল সংস্করণ। যদিও ‘নগদ’ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো ‘নগদ’ দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবস্থায় মনোপলি ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ‘নগদ’ নিয়ে অনেকে বিচলিত হয়ে পড়েছেন এবং ‘নগদ’র অপ্রতিরোধ্য গতি রোধের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

থার্ড ওয়েভ টেকনোলোজিস লিমিটেড বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’-কে জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এই সেবার আওতায় রয়েছে গ্রাহকের প্রতিদিনের আর্থিক লেনদেন। যেমন- ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, সেন্ড মানি (পি টু পি), পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি। এ ছাড়া দেশে ‘নগদ’-এ লেনদেনের খরচ সবচেয়ে কম।

প্রতি হাজারে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা ক্যাশ-আউট চার্জ। প্রতি হাজার টাকা ক্যাশ-ইন করলে ৫ টাকা ক্যাশ-ব্যাক সুবিধা দিয়ে থাকে ‘নগদ’। ফলে প্রতি হাজারে ক্যাশ-আউট চার্জ গিয়ে দাঁড়ায় ৯ টাকা ৫০ পয়সা।

তুলনামূলক বেশি অঙ্কের লেনদেনও করা যায় ‘নগদ’-এ। ছোট ব্যবসায়ীদের এ লেনদেন ব্যবস্থায় আনতে চায় নগদ, যা ১০ বা ১৫ হাজার টাকার লেনদেনে সম্ভব নয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং উপবৃত্তির টাকা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেবে ‘নগদ’। সরকার বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পেছনে খরচ করে, এই অর্থের পুরোটা ‘নগদ’র মাধ্যমে পরিশোধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুশাসন জারি করেছেন।

এ ছাড়া ‘নগদ’-এ লেনদেন শতভাগ নিরাপদ। গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ‘নগদ’। বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বেশ পুরনো। ‘নগদ’ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (ডিএফএস) হিসেবে প্রথম ডিজিটাল কেওয়াইসি পদ্ধতি চালু করে। জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্ট মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ঘরে বসেই নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য নির্বাচন কমিশনরে জাতীয় ডাটাবেজের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা হয়। ফলে একটি এনআইডি দিয়ে একের বেশি ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। যার ফলে একজন গ্রাহক তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। অর্থাৎ জালিয়াতির সুযোগ বন্ধ করেছে ‘নগদ’। ‘নগদ’- এর আগে দেশে এই পদ্ধতি কেউ অনুসরণ করেনি এবং অনেক বিখ্যাত এমএফএস প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়া চালু করেছে ২০১৭ সালের পর।

‘নগদ’ সর্বাধুনিক, নিরাপদ, সহজ এবং একই সঙ্গে ব্যয়সাশ্রয়ী। ‘নগদ’ এমন ব্যবস্থা (সেন্ড মানি টু অ্যানি ফোন) চালু করেছে যে কারো ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট না থাকলেও তার মোবাইলেও টাকা পাঠানো যাবে। টাকা পাওয়ার পর অ্যাকাউন্ট খুলে কাছের কোনো উদ্যোক্তার কাছে গিয়ে টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহক। এ সেবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নেই।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের রয়েছে প্রায় শতবর্ষব্যাপী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের সুদীর্ঘ ইতিহাস। দেশজুড়ে ডাক বিভাগের রয়েছে ৯ হাজার ৮৮৬টি শাখা। আর এসব শাখা হতে ৪০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়মিতভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে। শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান হলেও ডাক বিভাগ আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই মোটেই।

২০১০ সালে চালু হওয়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে প্রায় ৬ কোটি ৭২ লক্ষ গ্রাহক কোনো না কোনোভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা গ্রহণ করছেন। তবে কিছুটা হতাশার বিষয় হচ্ছে এই গ্রাহকদের মাঝে কেবল ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ গ্রাহক নিয়মিতহারে মোবাইক ফাইন্যান্সিয়াল সেবা গ্রহণ করছেন। নিয়মিত ও অনিয়মিত গ্রাহকের পরিসংখ্যান অনুসারেও দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত রয়ে গেছেন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনের সক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ ডাক বিভাগেরই রয়েছে।

সারা দেশে ‘নগদ’-এর রয়েছে দেড় লক্ষেরও বেশি উদ্যোক্তা। আগে এই উদ্যোক্তা বা এজেন্টদের সাথে বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠান যে বৈষম্যমূলক আচরণ করত, তা পুরোপরি পরিবর্তন করতে সচেষ্ট আছে ‘নগদ’। যার ফলে খুব অল্প সময়ে ‘নগদ’-এর দেড় লাখ উদ্যোক্তা দেশজুড়ে ‘নগদ’-কে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর এরই আরেকটি সফল দিক হলো, কার্যক্রম শুরুর মাত্র এক বছরের মধ্যে ‘নগদ’-এর গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ‘নগদ’ নিবন্ধিত। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সকল মোবাইল লেনদেন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে সকলের লেনদেন ব্যবস্থায় নজরদারি করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। ‘নগদ’ এই উদ্যোগকে সাদরে স্বাগত জানায়।

দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে চায় ‘নগদ’। এ জন্য ‘নগদ’ সব সময় তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হালনাগাদ করছে। স্বচ্ছতা ও সেবার মান বাড়াচ্ছে। মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সঙ্গে ‘নগদ’-এর চুক্তি হয়েছে। এর ফলে রবির ৫ কোটি গ্রাহক ‘নগদ’ গ্রাহক হবেন। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৪৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11187 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।