শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেজর সিনহা হত্যায় গণশুনানি শুরু

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ১৬ আগস্ট ২০২০   |   প্রিন্ট   |   191 বার পঠিত

মেজর সিনহা হত্যায় গণশুনানি শুরু

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গণশুনানি শুরু করেছে সরকার গঠিত তদন্তদল। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে রোববার সকাল ১০টা থেকে শুনানির কার্যক্রম শুরু করা হয়। টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে শুনানিতে বক্তব্য দিতে আগ্রহীদের নাম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ শাহজাহান আলি।

এলাকার ১২ জন ব্যক্তি শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য গ্রহণ শুরু করে তদন্তদল। শুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কির্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত রয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের স্বাক্ষীদের অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে পুলিশের অযাচিত একটি মামলার পর আতংক ছড়ায় স্থানীয়দের মাঝে। এরপর শংকা জেগেছিল সিনহা হত্যার বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা বলবেন কি না। গণশুনানিতে আসবেন কিনা তারা। কিন্তু শুনানির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরুর পর মেজর সিনহা হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষকারী এবং পরবর্তী ঘটনা দেখা অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে কথা বলতে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন।

তবে স্বেচ্ছায় আসাদের মাঝে পুলিশের সাজানো কোনো ব্যক্তি রয়েছে কিনা সেই শংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সচেতন ব্যক্তি। শুনানি গ্রহণকারীরা বক্তব্য শুনেই বুঝতে পারবেন কারা সাজানো এবং কারা বাস্তবিক ঘটনার প্রত্যক্ষকারী, এমনটিই অভিমত তার।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছিলেন, তদন্তের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন হবে সেখানে যাওয়া হবে। যার যার সঙ্গে কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে কথা বলব। দুঃখজনক ঘটনাটির নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। এরই অংশ হিসেবে রোববার গণশুনানি করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গণশুনানি স্থলে আসা শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানি উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃঙ্খলাবাহিনী। বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও এসেছে ঘটনাস্থলে। আশপাশে তাদের যাতায়াত অবাধ থাকলেও শুনানি কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মাঝে এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, এসব প্রশ্নের জবাব মিললেই ঘটনার সবকিছু স্পষ্ট হবে।

সূত্র মতে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি করার আগে লিয়াকত ওসি না অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল।

সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত পুলিশকে বলেছিলেন, গাড়ি থেকে নামার সময় সিনহার অস্ত্র হাতে ছিল কি না, তা তিনি দেখেননি। কিন্তু পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গাড়ি থেকে নেমে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন সিনহা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

এদিকে সিনহা হত্যাকাণ্ডের ১৪ দিনের মাথায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে শুক্রবার। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্বভার পেয়েছেন। এর আগে মামলাটি তদন্ত করছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক।

তদন্তভার পেয়েই-সিনহা হত্যা মামলার আসামি চার পুলিশসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে র‌্যাবের একটি গাড়ি কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সাত আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া এবং পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. আইয়াস, নুরুল আমিন ও নাজিম উদ্দিনকে নিয়ে যান। গত বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ইতোমধ্যে মামলার নতুন আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ আগস্ট ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।