রংপুর প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট | 51 বার পঠিত
সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপকরণ কচুরিপানা, হোগলাপাতা ও পাট ব্যবহার করে ব্যাগ-ঝুড়িসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করছেন রংপুরের উদ্যোক্তা রেজাউল করিম। বর্তমানে হাতে তৈরি তাঁর এসব পরিবেশবান্ধব পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তাঁর কারণে চারটি গ্রামের অভাবী পরিবারের নারীরা পেয়েছেন পথের দিশা। কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৩৫০ জনের। একই সঙ্গে বদলে গেছে গ্রামগুলোর অর্থনীতির চিত্র।
রংপুর নগরীর তালুকরঘু গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে রেজাউল করিম। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগানো কষ্টসাধ্য ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অভাবের সংসারের হাল ধরতে কাজের সন্ধানে ছুটে যান ঢাকায়।
২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ট্রেড নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। সেখানেই মূলত রপ্ত করেন সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির কাজ। এরপর বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি করলেও এলাকার অভাবী মানুষকে কর্মমুখী করার চিন্তা ছিল তাঁর। নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাড়া করছিল তাঁকে।
স্বপ্ন বাস্তবায়নে চাকরি ছেড়ে ২০০৭ সালে রেজাউল নিজেই একটি পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন গাজীপুরে। প্রথমে ১০ জন কর্মী নিয়ে শুরু করা কারখানায় পণ্য তৈরির অত্যাধুনিক মেশিনও সংযুক্ত করেছিলেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত টিকে থাকলেও করোনার সময় সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তিনি; কিš‘ হাল ছাড়েননি। কঠিন সময় পেরিয়ে রেজাউল নতুন উদ্যমে আবারও শুরু করেন নিজের উদ্যোগ। রংপুরের পায়রাবন্দে গড়ে তোলেন সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপকরণে পণ্য তৈরির কারখানা।
আর কে হ্যান্ডিক্রাফটস নামে এই কারখানায় ১৫ জন শ্রমিক কাজ করলেও পাশের চার গ্রামের তিন শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কচুরিপানা, হোগলাপাতা, জলপাতা, বাঁশ ও পাট ব্যবহার করে লন্ড্রি বাস্কেট, গার্ডেন পট, ডগ বেড, ক্যাট বেড, বার্ড নেস্ট, বাজার ব্যাগ, ওয়াল ম্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ-ঝুড়ি ও গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করছেন তারা। ঘরে বসে অবসর সময়ে ২৫ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের এসব পণ্য তৈরি করে গ্রামের নারীরা প্রতি মাসে আয় করছেন ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন তারা। আর তাদের তৈরি এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, ইতালি, ব্রাজিল, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার জন্মভিটার পাশেই খোর্দ মুরাদপুর গ্রামে রেজাউল করিমের কারখানায় গত ১৪ নভেম্বর গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বসে কাজ করছেন শ্রমিকরা।
কেউবা হাতে বুনছেন বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি, কেউবা রং করছেন, আবার কেউ রোদে শুকাচ্ছেন উপকরণ। কারখানায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে হাতে তৈরি নানা ধরনের পণ্য। উদ্যোক্তা রেজাউল করিম জানান, এখানে ১০ জন শ্রমিক পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করেন। পণ্য তৈরি করেন পার্শ্ববর্তী হুলাশু, বালারহাট, সংগ্রামপুর ও ঠাকুরবাড়ী গ্রামের তিন শতাধিক অস”ছল নারী।
প্রথমে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে কচুরিপানা, হোগলাপাতা, জলপাতা বরিশাল, নোয়াখালী ও ভোলা থেকে এনে তাদের সরবরাহ করা হয়। চারটি গ্রামের ১৭টি পয়েন্টে দল বেঁধে নারীরা কাজ করেন। মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল মামুন বলেন, উদ্যোক্তা রেজাউল করিমের হাত ধরে শুধু ঠাকুরবাড়ী নয়, কয়েকটি গ্রামের অস”ছল নারীরা খুঁজে পেয়েছেন নতুন জীবন। একই উপজেলার পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, রেজাউল করিমের দৃঢ়তা, পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তায় আশপাশের গ্রামগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
Posted ৭:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | Nusrat Sinji