বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 640 বার পঠিত
২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুনঃঅর্থায়ন সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠন করেছিল সরকার। বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঋণ বিতরণ ও আদায় শেষে সুদাসলে তা সরকারকে ফিরিয়ে দেয় তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ৯০০ কোটি টাকা থেকে সরকারকে ফিরিয়ে দেয়া ৮০০ কোটি টাকা বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রয়েছে। শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকাতে নিম্নসুদের ঋণ আকারে দ্রুত সে তহবিল চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সরকারের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে আরো বেশকিছু সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছে তারা।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক বলেন, শেয়ারবাজারে চলমান দরপতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলের একটি সাপোর্ট দরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবি বরাবরই এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এজন্য আইসিবির তহবিল প্রয়োজন। বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভাব্য যত উৎস থেকে এ তহবিল আসা সম্ভব, তার একটি তালিকা করে আমরা সরকারকে দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। তাদের মনোভাব ইতিবাচক।
মন্ত্রণালয় ও আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারের স্বার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে আইসিবি। স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে দ্রুত তহবিল সরবরাহ করে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ৮০০ কোটি টাকা সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছে আইসিবি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে থাকা এ ৮০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে আনতে জরুরি ভিত্তিতে নিম্ন সুদের ঋণ আকারে তা পাওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে আইসিবি।
এছাড়া পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে গত বছরের শেষ দিকে আইসিবির ইস্যু করা ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ডের ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার ইউনিট কিনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আরো ৬১০ কোটি টাকার বন্ড অবিক্রীত রয়েছে, যার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অফার করা হয়েছে সোনালী ব্যাংককে আর বাকি ১১০ কোটি টাকার বন্ড কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশনকে। বিশেষ বন্ডের অবশিষ্ট ইউনিটগুলো বিক্রিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে আইসিবি।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার সক্ষমতা বাড়াতে আইসিবিকে একক গ্রাহক ঋণসীমা থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে আবারো অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৭ সালের শেষ দিকে আইসিবিকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেয়া মেয়াদি আমানতকে একক গ্রাহক ঋণসীমার আওতায় নিয়ে আসে, যা পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পোর্টফোলিওতে থাকা বিভিন্ন সিকিউরিটিজ বেচে আইসিবি বিভিন্ন ব্যাংককে অর্থ ফেরত দেয়ায় বাজারে দরপতন ত্বরান্বিত হয়। ২০১৮ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। ২০১৮ সালের জুনে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয়া চিঠিতেও আইসিবিকে একক গ্রাহক ঋণসীমা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। তবে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০১১ সালের মন্দা বাজারে আইসিবির বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে আইসিবিতে মেয়াদি আমানত রাখার কথা বলেছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে একই সুপারিশ করার অনুরোধ করেছে আইসিবি।
এছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য সহায়ক নীতির অংশ হিসেবে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করেছে আইসিবি।
মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সরকার কর্তৃক ৫ হাজার কোটি টাকার মার্কেট সাপোর্ট ফান্ড গঠন অন্যতম। আইসিবি বলেছে, ভারতসহ অন্যান্য দেশের আদলে সরকার বাংলাদেশেও একটি ফান্ড গঠন করতে পারে, প্রতি বছর বাজেট থেকে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি এ তহবিল গঠন করতে পারে বাংলাদেশ সরকার, যা সফট লোন হিসেবে নিয়ে প্রয়োজনে বাজারকে সাপোর্ট দিতে পারবে আইসিবি।
বীমা খাতের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে দক্ষভাবে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে শুধু বীমা কোম্পানির জন্য সুনির্দিষ্ট বন্ড ছাড়ারও প্রস্তাব দিয়েছে আইসিবি।
নতুন করে আবারো আইসিবি ইউনিট সার্টিফিকেট বিক্রি চালু করতে পারলে এর মাধ্যমে আইসিবি সাধারণ মানুষের আরো বেশি পরিমাণে সঞ্চয়কে পুঁজিবাজারে আনতে পারবে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বিশেষ ইনসেনটিভ দেয়ার সুপারিশ করেছে আইসিবি। তেমনটি হলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হবে। পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন ও কার্যকর বন্ড বাজার গঠনে বন্ডের নিবন্ধন ফি ২ শতাংশ থেকে অনেক কমানোসহ প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেছে আইসিবি। এছাড়া সারা দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সংযোগ বাড়াতে জেলা শহরগুলোয় আইসিবির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা খোলারও সুপারিশ করা হয়েছে।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed