আদম মালেক | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 342 বার পঠিত
মৌলিক বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে থাকলেও তেমন ভালো নেই সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। রয়েছে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি, কমছে মুনাফা। আমদানি রফতানি ও রেমিটেন্সে মন্দা হাওয়া। বাড়ছে পরিচালন ব্যয় ও দায়।
যে কোনো ব্যাংকের আকার ও সম্পদ বাড়লে মুনাফা বাড়বে- এটাই নিয়ম। কিন্তু সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ঊর্ধ্বমুখী মুনাফায় পতনের ছোঁয়া। ২০১৮ সালে এসআইবিএলের সম্পদের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। বিপরীতে নিট মুনাফার প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৯ সালে সম্পদের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে মুনাফা। এ সময় সম্পদের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৮ শতাংশে হলেও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এদিকে গত ৩ বছর ধরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ক্রমান্বয়ে কমছে। ২০১৭ সালে এসআইবিএলের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৭৯ পয়সা। ২০১৮ সালে ২ পয়সা কমে ১ টাকা ৭৭ পয়সায় নামে। পরের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস আরো ৭ পয়সা কমে ১ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারিত হয়।
এসআইবিএলের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যাংকটির আমদানি বাণিজ্যে নিম্নমুখী প্রবণতা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ১২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৮ সালে আমদানি বাণিজ্য হয় ৯ হাজার ৩২৮ লাখ টাকা। এ বছর আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি আরো ৪ দশমিকি ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৮ হাজার ৮৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। রফতানি বাণিজ্যের অবস্থাও ভালো নয়। ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ৫ হাজার ৮৩১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার রফতানি বাণিজ্য করে। ২০১৮ সালে এ বাণিজ্যের পরিমাণ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৬ হাজার ৩০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। কিন্ত ২০১৯ সালে কোম্পানিটি এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি। এ বছর প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ হাজার ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হয়। বিগত ৩ বছরে রেমিটেন্সের চিত্রও সুখকর নয়। ২০১৭ সালে এসআইবিএল রেমিটেন্স আহরণ করে ২ হাজার ১৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এ রেমিটেন্সের পরিমাণ সামান্য বাড়ে। মাত্র ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২ হাজার ২৫২ কোটি ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। কিন্তু ২০১৯ সালের চিত্র চরম হতাশাজনক। এ বছর রেমিটেন্স ৫২ দশমিক ৯৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১ হাজার ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় নামে।
তাছাড় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। পরিচালন আয়ের তুলনায় ক্রমেই বাড়ছে ব্যয়। ২০১৭ সালে এসআইবিএলের পরিচালন বাবদ খরচ হয় ৪৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এ ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ দশমিক শতাংশ বেড়ে ৫৪০ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। পরের বছর ২০১৯ সালে এ ব্যয়ের পরিমাণ আরো ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়ে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন বাবদ খরচ করে ৫৯৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। তবে বছরের পর বছর পরিচালন ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও পরিচালন আয় সেভাবে বাড়েনি। ২০১৮ সালে এসআইবিএলের পরিচালন আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি বাড়েনি, দশমিক ১৩ শতাংশ হ্রাস পায়। এ সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করে ২৬ হাজার ৪২৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ খেলাপির কারণে ব্যাংকটি বর্তমানে ১৯৮ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed