শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

এবার কী হবে কোরবানির চামড়ার

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   497 বার পঠিত

এবার কী হবে কোরবানির চামড়ার

আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। কমপ্লায়েন্সের কারণে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক ক্রেতা। গত বছর কেনা চামড়ার ৫০ শতাংশ এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। নতুন চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণও পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। নতুন চামড়া কেনা হবে কি হবে না, এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার কী হবে?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো—ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ১৩৮ কোটি ডলার। তা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এর আগের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীনে চামড়ার বাজার পড়ে গেছে। এছাড়া সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর মালিকরা ঋণ পেতে নানামুখী সমস্যা মুখোমুখি হচ্ছেন। যেমন, সাভার চামড়া নগরীতে যেসব শিল্প মালিক প্লট পেয়েছেন অথচ মালিকানা বুঝে পাননি, তাদের ব্যাংক ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহে ব্যবসায়ীরা সংকটের আশঙ্কা করছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, আসলেই চামড়া খাতের অবস্থা ভালো নয়। সর্বত্র চামড়াজাত পণ্যের অর্ডার কমে গেছে। বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।

তিনি জানান, চামড়া কেনার জন্য গতবছর ব্যাংক থেকে যে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা তাদের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক যে প্রক্রিয়ায় ঋণ দেয় তা সহজ নয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর কিনেছি অথচ ব্যবহার করতে পারিনি, এমন চামড়ার পরিমাণ ৫০ শতাংশ। তাই এ বছর আমাদের চামড়ার চাহিদা তেমন নেই। অর্ডারও কম। কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে ক্রেতারাও অসন্তুষ্ট।’ তাই এ বছর যদি কাঁচা চামড়া রফতানি হয় সেক্ষেত্রে কোনও আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া খাতের এই বিপর্যয়ের মূল কারণ সাভারের ট্যানারি পল্লির কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারকে পুরোপুরি কার্যকর করতে না পারা। একদিকে সরকারের টাকাও নষ্ট হলো, অন্যদিকে পল্লির পাশে ধলেশ্বরী নদীও নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি, এটিকে কার্যকর করতে কিছু মেশিনপত্র কেনা হয়েছে। তা যদি সঠিক হয় তাহলে এ বছরের শেষ দিকে এটিকে আংশিক চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়।’

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চামড়া খাতের রফতানি বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যতই বলুক, চামড়া খাতের রফতানি বাড়বে। চীন বা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বা অর্ডার কমে গেলেও সমস্যা হবে না। কারণ, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের চামড়াজাত পণ্যের বিশাল বাজার সম্ভাবনা রয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার বিষয়ে সব উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যা লাগবে তা দেওয়া হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আরও আলোচনা করবো।’

তিনি জানান, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে ভালোভাবে মান বাজায় রেখে সংগ্রহ করা হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানি করা হবে কি হবে না, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং নেবো। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আরও হবে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের কাজ যেটুকু বাকি আছে তা অবিলম্বে শেষ হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী জানান, চামড়াজাত পণ্যের বাজার বিশ্বজুড়েই মন্দা। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। তবে বিশ্বে নতুন বাজার ও নতুন চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া চামড়াজাত পণ্যের বহুমুখীকরণ হয়েছে, আরও হবে। এখন চামড়া দিয়ে শুধু জুতা বা ব্যাগ নয়, অনেক কিছুই তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বে যার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানির সময় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে মোট ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পিস চামড়া পাওয়া যায়। যা সারাবছরের সরবরাহের প্রায় ৯০ শতাংশ। তাই চামড়া শিল্পের ব্যাবসায়ীরা কোরবানির সময় তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাবিশ্বে চামড়াজাত পণ্যের বাজার ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব অবশ্য খুবই কম। এ খাতের উন্নয়নে সরকার ২০১৭ সালকে ‘চামড়া বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11395 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।