রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে  ৩০০ কোটি টাকা পাচার

শিগগিরই পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

  |   বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২   |   প্রিন্ট   |   202 বার পঠিত

শিগগিরই পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার সিন্ডিকেট  ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পেয়েছে দুদক। রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার আবেদনে এক বন্ধু ‘ন্যাম কর্পোরেশনের’ মালিক আব্দুল আলীম চৌধুরীকে ‘ব্যবহার’ করেছেন পি কে হালদার। শিগগিরই দুদকের  অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা  উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে  এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করবেন।

জানা গেছে,  আব্দুল আলীম চৌধুরীর সঙ্গে মিলেমিশে  অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও দুদকের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

কোনো ঋণ আবেদন ছাড়াই পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি থাকার সময়ে বন্ধু ও জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে ২০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দিয়েছেন। রেকর্ডপত্রে দুদক দেখতে পায় ঋণ আবেদন হয়েছিল ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর।

কিন্তু ঋণ অনুমোদন করা হয়  ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। অর্থাৎ আগে ঋণ আগে ছাড় করেছে ্রএর পরে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। এভাবে পি কে হালদার তার বন্ধু আব্দুল আলীম চৌধুরীর সহযোগিতায় বিভিন্ন  ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেন।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন,  পিকে হালদার  বর্তমানে দেশের বাইরে ভারতের কারাগারে আছেন।  দুদক আইন ও বিধি অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়  পিকে হালদারকে এদেশে আনার কার্যক্রম গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত  রেখেছে।

সূত্বাংর মতে, লাদেশ ব্যাংকের ১০টি চেক ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ২ আগস্ট জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইরফান আহমেদ খানের নামে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের স্টেশন রোড শাখা থেকে প্রায় ২৩ কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করে পি কে হালদার সিন্ডিকেট।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক একেএম শহীদ রেজা’র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ফ্যাশন প্লাস ও পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেডের নামে ২০১৭ সালে ৭ কোটি টাকা সরিয়ে নেয় এ সিন্ডিকেট।

সুব্রত দাস ও শুভ্রা রাণী ঘোষের মালিকানাধীন অ্যান্ড বি ট্রেডিংয়ের নামে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ২০১৭ সালে নেওয়া হয় ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

একই প্রক্রিয়ায় আনান কেমিক্যালের ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ নিলেও একটি টাকাও ব্যবসার কাজে ব্যবহার না করে সব টাকাই বিভিন্ন জনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে লুটপাট হয়। যে প্রতিষ্ঠানের এমডি অমিতাভ অধিকারী ও চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও তার স্ত্রী অনিতা কর। প্রকৃতপক্ষে সুবিধাভোগী হয়েছেন পি কে হালদার।

অপরদিকে ২০১৬ সালের জুনে ঋণের ৫ কোটি টাকার দুটি চেকের মাধ্যমে ওয়াকাহামা লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত হিসাবে সরিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।

২০১৬ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর একটি চেক ব্যবহার করে ১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে সরানো হয়। যা পরে কাগুজে প্রতিষ্ঠান দায়া শিপিং লিমিটেডের নাম ঋণ দেখানো হয়। এছাড়া রাজিব সোমের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া আনান কেমিক্যালের লেনদেন বিবরণী পর্যালোচনায় দুদক দেখতে পায়, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ১৫ কোটি টাকা ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা হওয়ার পর মেসার্স বর্ণ, নিউট্রিক্যাল ও আরবি এন্টারপ্রাইজের নামে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই বছরে নভেম্বরেই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আরও ৭ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়, যা পরে ব্যাংকটির সুখাদা লিমিটেডের হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, অমিতাভ অধিকারী হলেন পি কে হালদারের আপন খালাত ভাই এবং উজ্জ্বল কুমার নন্দী হলেন পি কে হালদারের পুরোনো অফিসের সহকর্মী। অপরদিকে উজ্জ্বল কুমার নন্দী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং অমিতাভ অধিকারী পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অর্থাৎ বেনামি প্রতিষ্ঠান দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে টাকা বের করে সে টাকা দিয়ে পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হন তারা। পরে একই কায়দায় পিপলস লিজিং থেকে টাকা বের করে প্রতিষ্ঠানটিকে পথে বসিয়েছে পি কে হালদার সিন্ডিকেট।

সিন্ডিকেটের আত্মসাতের বিষয়ে আরও জানা যায়, রেপটাইল ফার্ম-১ নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিলেও ২০১৬ সালের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক এশিয়ার কয়েকটি শাখার হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে পি কে হালদারের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানের এমডি রাজিব সোম, চেয়ারম্যান ও রাজিব সোমের স্ত্রী শিমু রয়, পরিচালক মোস্তাসিন বিল্লাহ ও উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে দেখানো হলেও মূল সুবিধাভোগী ছিলেন পি কে হালদার।

ওই একই বছর এঅ্যান্ডবি ট্রেডিং, ক্লিসটন ফুড অ্যান্ড একমোডেশন লিমিটেড, এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবং পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চেক ব্যবহার করে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে আরও ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়।

অন্যদিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে হাল ইন্টারন্যাশনালের নামে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ৬০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হলেও পরে ব্যাংক এশিয়ায় আমরা হোল্ডিং লিমিটেড, মুন এন্টারপ্রাইজ, ওরাল লিমিটেড, সন্দীপ কর্পোরেশন, ফ্যাশন প্লাস ও মেলেডি হোমসের নামের পি কে হালদারের ব্যাংক হিসাবে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়।

চলতি বছরের ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

এর আগে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম ইন্টারপোলে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ জানুয়ারি ইন্টারপোল পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছিল। এরপর গত ১৪ মে পি কে হালদারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে গ্রেপ্তারের পরদিন ১৫ মে ইন্টারপোলের ঢাকা ডেস্ক থেকে নয়াদিল্লি ডেস্কে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়।

দুদক পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৪০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ২২টি মামলা ও এফএএস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ১৩ মামলা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট ২০২১ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হয়। যেখানে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে পি কে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। #

 

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(1678 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1608 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1285 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1100 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।