পান্না কুমার রায় রজত | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 178 বার পঠিত
করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন দেশে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। প্রত্যেকটি দেশে অস্বাভাবিক উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে সংকট দেখা দেয়ায় নগদ বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতিতে আর তার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশে। মন্দার সময় সাধারণত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প উৎপাদন ধুঁকতে থাকে। মানুষ চাকরিচ্যুত হয় এবং চূড়ান্ত পরিণতিতে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারায়। করোনা মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। মন্দা যে কোনো প্রতিষ্ঠান ও দেশের নাগরিকদের ওপর ব্যাপক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বুঝতে পারে মন্দা ধেয়ে আসছে তাহলে তারা বিনিয়োগ নাও করতে পারে। পাশাপাশি খরচ কমানোর জন্য কর্মীও ছাঁটাই করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে যখন একটি দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই ধারায় চলে, মন্দার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি উদ্ভব হয় তখনই।
প্রশ্ন হচ্ছে, মন্দা বোঝার উপায় কি? সাধারণত বিশ্বব্যাপী মন্দার কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। আইএমএফের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বে অর্থনীতির বিকাশ যখন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, তখন সেই পরিস্থিতিকে মন্দাবস্থা বলা হয়। একটি দেশের অর্থনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দায় আক্রান্ত কিনা সেটা বোঝার জন্য কয়েকটি সূচক আছে। ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিবিদ জুলিয়াস শিসকিন মন্দার ব্যাপারে কয়েকটি সূত্রের অবতারণা করেন। এর মধ্যে একটিতে বলা হয়, কোনো দেশে পরপর দুটি প্রান্তিকে যদি ঋতাত্মক প্রবৃদ্ধি ঘটে, অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পতন ঘটে, তবে বুঝতে হবে সেখানে মন্দা চলছে। একটি অর্থবছরকে চারভাগে ভাগ করে প্রত্যেক তিন মাসের একটি পর্বকে অর্থনীতির ভাষায় কোয়ার্টার বা প্রান্তিক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সাধারণত পর পর দুটি প্রান্তিক বা টানা ছয় মাস কোনো দেশের অর্থনীতি বা মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সঙ্কুুচিত হলে তাকে মন্দা বলা যেতে পারে। শিসকিনের মন্দার এই তত্ত্বকেই বর্তমান সময়ে আদর্শ মানা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবেই মন্দার শুরু হতে পারে। এমনকি যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে শুরু নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির থেকেও মন্দা দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক ধাক্কার কারণে অতীতে মন্দা হতে দেখা গেছে। যেমন ৭০ এর দশকে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক যুক্তরাষ্ট্রকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে কোনো ধরনের সর্তকবার্তা ছাড়াই। তখন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। তার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসে। সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বেই অর্থনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। আবার কোন দেশ যদি মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋত গ্রহণ করে, যা তাদের পরিশোধের সামর্থ্যরে বাইরে তখনো মন্দা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যায় দেশগুলো। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় দেখা দিয়েছে এই পরিস্থিতি। পাকিস্তানেও সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন যা গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত, সেখানে বলা হয়েছে ২০২৩ সালে বিশ্বের অনেক দেশ মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি বিশ্ব অর্থনীতির গতি স্থবির করে দিচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেক দেশের জন্য অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ১৯৭০ সালের মন্দার পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন সবচেয়ে সংকটে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির উপর যার প্রভাব বেশি পড়বে। আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ সেরা জার্মানি, বিশ্বের সেরা শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর সরকার এবং অর্থনীতিবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ গভীর থেকে গভীরতর করছে ২০২৩ সালের সম্ভাব্য মন্দার শঙ্কা। এদিকে নীতি সুদহার বাড়িয়ে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিনের এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে। ব্যয় কমাতে মুদ্রাবাজারে অর্থের জোগান কমে যাওয়ায় জেঁকে বসেছে মন্দা। গত ১০ অক্টোবর ২০২২ ওয়াশিংটনে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার রিপোর্ট মোতাবেক, বিশ্বের অর্থনীতি সংকটের দিকে এগোচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। ক্রমবর্ধমান খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে আরো উসকে দিতে পারে। বৃদ্ধি পেতে পারে ক্ষুধা, কর্মহীনতা ও দারিদ্র্য। এর মধ্যে সবচেয়ে শঙ্কা তৈরি করছে খাদ্য সংকট।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অবস্থা কতটা খারাপ তা সহজেই অনুমেয়। ফ্রান্সের মানুষ দেশের মুদ্রাস্ফীতিতে ক্ষেপে উঠেছে। তারা সরকারকে বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে। আমেরিকার মিত্র হিসেবে এসব যুদ্ধবিগ্রহের খরচ বহনে সাধারণ মানুষ দিন দিন ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠছে। যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ইতিমধ্যে রক্ষণশীলতার প্রকাশ দেখিয়েছেন। যুক্তরাজ্যেও ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ বিনিয়োগ করায় নিজ দেশের নাগরিকদের তীব্র সমালোচনার মুখে আছে। এমনকি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুন্ডেস ব্যাংক বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সামনের বছর জার্মানির অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্যাসের সংকটের কারণে দেশটির উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। আমেরিকার নিউইর্য়কভিত্তিক মূলত অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর অর্থনৈতিক রিপোর্টার হেরিয়েট টরি এবং ডাটা নিউজ এডিটর অ্যান্থনি ডি বারোসের লেখা একটি গবেষেণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ১৬ অক্টোবর ২০২২। এই গবেষকদের মতে, উচ্চমাত্রার মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কোচন এবং ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রেক্ষাপটে আগামী ১২ মাসের মধ্যে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিবে। জ্বালানি তেলের সংকট, মূল্যস্ফীতি, দীর্ঘ খরা ও অপ্রতুল খাদ্য সরবরাহ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা।
তাহলে কেমন হবে বাংলাদেশের অবস্থা? বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা তা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট, জ্বালানির উচ্চমূল্যস্ফীতি, খাদ্যঘাটতির শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি দেশ এবং মানুষকে বিপাকে ফেলেছে। গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস-২০২২ এ বাংলাদেশকে খাদ্য সংকটে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিসংখ্যান মতে, দারিদ্র্য ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। কিন্তু বর্তমানে খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ। তাহলে ক্রমাম্বয়ে আমরা কতটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছি তা সহজে অনুমেয়। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ দেশে। সেই সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেশি এবং কিছু অত্যাবশকীয় খাদ্য পণ্যের জন্য বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীলতা, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সরবরাহ সংকট। খাদ্য সংকটের এক বড় কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তবে দুর্ভিক্ষের বড় কারণ রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনা সংকট। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, দুর্ভিক্ষ যতোটা না খাদ্যদ্রব্যের সংকটের কারণে তার থেকে অনেক বেশি দায়ী মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি না থাকা এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার একটি। আবার খাদ্য সংকটের কারণ ও বহুবিদ। একটি হচ্ছে উৎপাদন করতে না পারা, মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙেপড়া।
বর্তমানে ইউক্রেন কৃষকদের হাতে বর্তমানে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন শস্য আছে, যা যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করতে পারছে না। এছাড়া দেশটিতে আবার নতুন ফসল কাটার সময় এখন। বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ববাজারে ইউক্রেন যেসব শস্য বড় আকারে রফতানি করে তার মধ্যে রয়েছে সানফ্লাওয়ার অয়েল ভুট্টা, গম এবং বার্লি। অন্যদিকে একই শস্য বিশ্ববাজারে বড় আকারে সরবরাহ করে রাশিয়া। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ বাংলাদেশ তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গম আমদানি করে। এর অর্ধেক আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের দরুণ নব্য মানবসৃষ্ট সংকট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী হচ্ছে আমদানিনির্ভর তথা উন্নয়নশীল দেশগুলো।
মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ের ওপর বেশি পড়তে পারে। কারণ বিশ্ব মন্দা দেখা দিলে প্রবাসীদের কাজ কমে যাবে। তার প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ে। আর বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। ইউরোপ, আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হলে মানুষ ফ্যাশন ব্যয় কমাবে। যার প্রভাব পড়বে পোশাক রফতানির ওপর। সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপ-আমেরিকার লোকজন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাবে রফতানি আয় কমেছে। তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত রেমিট্যান্সও অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ১৫২ কোটি ডলারে। যা আগের মাসে ছিল ১৫৩ কোটি ডলার। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে রিজার্ভও। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী কেবল ব্যবহারযোগ্য অংশটিই রিজার্ভ হিসাবে গণ্য করতে হবে। সে হিসাবে আমাদের রিজার্ভ ৮ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ২৬ দশমিক শূন্য ০৭ বিলিয়ন ডলার।
সম্ভাব্য মন্দা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে ৪ অক্টোবর ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বিশ্বমন্দা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের রক্ষায় সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য সবাইকে তিনি সঞ্চয়ী এবং সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের এক ইঞ্চি জমি যাতে খালি না থাকে সেজন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাই আমাদের কৃষির উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বাড়াতে হবে। বিভিন্ন কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
চলমান এ যুদ্ধ কেবল খাদ্য, জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহকেই সংকটে ফেলেনি, কৃষি উৎপাদনকে নষ্ট করেছে। সঙ্কুচিত হয়েছে মানুষের কাজের ক্ষেত্র। জাতিসংঘ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপেও এমন আশঙ্কার তথ্য ব্যক্ত করেছে।
আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলছে, দুর্ভিক্ষ আসন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়া পরিবর্তনের ভিন্নরূপ হিসেবে দুর্যোগ বন্যা, খরা বাড়ছে। তবে এজন্য সরকারকে সঠিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সমস্যা আরো বাড়বে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে হবে। অর্থনীতির ভাষায়, মূল্যস্ফীতি ০২ থেকে ০৫ শতাংশের মধ্যে থাকা জনজীবনের জন্য স্বস্তি দায়ক। ০৭ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকা মানে মহাবিপদ। কিন্তু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমাদের মূল্যস্ফীতি ০৯ দশমিক ১০ শতাংশ ও ০৮ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয় প্রয়োজন। নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানো, বিলাসী পণ্য ও বিদেশি ফল আমদানিতে লাগাম টানা, বাজারে মনোপলি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা, দরিদ্র ও স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য ওএমএস কার্যক্রম সারাদেশে সম্প্রসারণ। বিদ্যমান জ্বালানি সংকট নিরসনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা মূলত উৎপাদন, আমদানি সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির ওপর নির্ভর করে। বর্তমান সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার। পাশাপাশি সরকারের কঠোর নজরদারি যাতে, খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়।
Posted ১২:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy