বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৬ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 573 বার পঠিত
রমজান এলেই বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় বেগুন, কাঁচা মরিচ, শসা ও লেবুর। সরবরাহে ঘাটতি যদি নাও থাকে তবু প্রতিবছরই এই পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রোজা শুরুর দুদিন আগেই দাম বেড়েছে বেগুন ও কাঁচামরিচের।
রমজান শুরু হতে বাকি মাত্র এক দিন। সোমবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন প্রতি কেজি ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ১০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ১৮-২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া এই বেগুন এখন ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা আলমগীর প্রতি কেজি বেগুন ৮০ টাকা দাম চাইছিলেন। তবে ৭০ টাকা দরে তাঁকে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তিনি জানান, পাইকারি বাজারে বেগুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। সে কারণে খুচরাতেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে সবজির আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতা কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফণীর প্রভাবে ঢাকায় সবজি কম এসেছে। অন্যদিকে রমজানের কারণে চাহিদা বাড়ছে। সে কারণেই দাম বেড়েছে।
এদিকে পাইকারিতে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতি কেজি মরিচ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। এক দিন আগেও কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩৫-৪৫ কেজি। খুচরায় ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া মরিচ এখন বিভিন্ন বাজারে কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের ফড়িয়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফণীর কারণে সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণেই দাম বেড়েছে।
তবে পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পণ্যটির দাম আরো বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে খুচরা বাজারে কিছুটা বেড়েছে লেবুর দাম। ২০-২৫ টাকা হালিতে বিক্রি হওয়া লেবু এখন ২৫-৩৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো কোনো স্থানে এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। রমজানে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যগুলোর মধ্যে একটি শসা। তবে শসার বাজার এখনো আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি শসা বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।
মানুষ ইতিমধ্যেই রমজান উপলক্ষে কেনাকাটা শুরু করেছে। সে কারণে বিক্রেতাদেরও ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কাটাতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার, টাউন হল মার্কেট, শুক্রাবাদ বাজার, ফার্মগেটসহ কয়েকটি বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও যেকোনো সময়ই বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কাও আছে তাদের।
প্রতিবছর রমজানে যেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বেশি হৈচৈ পড়ে সেগুলো অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে; যদিও আগেই এসবের কিছু কিছু করে দাম বেড়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশি পেঁয়াজের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। এর প্রভাব পুরোপুরি খুচরায় না পড়লেও কিছু কিছু স্থানে ৩০ টাকায় বিক্রি করতেও দেখা গেছে। প্রতি কেজি ছোলা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৫৫-৬০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ৬০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল ৬০-৬৫ টাকা কেজি এবং দেশি মসুর ডাল ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থিতিশীল রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি লিটার সয়াবিন কিনতে ১০৫-১০৬ টাকা লাগছে। তবে একসঙ্গে পাঁচ লিটার কিনলে সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে ৪২৫-৪৮০ টাকার মধ্যে।
পাশাপাশি খোলা বাজারে টিসিবি প্রতি কেজি চিনি ৪৭ টাকা, প্রতি লিটার ভোজ্য তেল (সয়াবিন) ৮৫ টাকা এবং মসুর ডাল ৪৪ টাকা, প্রতি কেজি ছোলা ৬০ টাকা ও খেজুর ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে রমজানের পণ্য কেনাকাটা করছিলেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার চিনির দাম মোটামুটি ঠিক আছে। প্রতিবছর তো এই সময়ে বাড়তেই থাকে।’ পেঁয়াজের দাম নিয়ে এখন পর্যন্ত স্বস্তি থাকলেও দুই-এক দিনের মধ্যে যেন না বাড়ে সেদিকে সরকারকে নজরদারি করার অনুরোধ করেন তিনি।
ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের পাশের একটি মুদি দোকান থেকে পণ্য কিনছিলেন আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাজার এখন পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কোনো বিশ্বাস নেই। দু-এক দিনের মধ্যেই সব অস্থির করে দিতে পারে।’
কারওয়ান বাজারে টিসিবির খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল বেশ লম্বা লাইন। আশপাশের বিভিন্ন অফিস থেকে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছিল। তবে কেন্দ্রটিতে একটি মাত্র ওজন মাপার যন্ত্র থাকায় ক্রেতারা দ্রুত পণ্য নিতে পারছিল না।
রমজানের আগে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে আম, তরমুজ ও আনারস উল্লেখযোগ্য। তরমুজের দাম আকাশচুম্বী। তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনতে ৩৫০-৪০০ টাকা লাগছে। এ ছাড়া মালটা, আপেল, পেয়ারা, আঙুর, আনার, কলা, সফেদাসহ বিভিন্ন ফল পাওয়া যাচ্ছে।
Posted ২:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed