নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট | 105 বার পঠিত
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকায় চাপে পড়েছে খেলাপি ঋণের ভারে নুব্জ ব্যাংক খাত। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কঠোর মুদ্রানীতির কবলে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি না মিললেও বেড়ে গেছে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদের হার। এতে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। গত জুন থেকে আগস্টÑ এই তিন মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত আগস্ট মাসে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে ঋণের সুদ থেকে অর্জিত আয় কমে গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানো ও বেসরকারি খাতকে চাঙা রাখাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে টাকার লাগাম টানতে মুদ্রানীতিতে বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। তাতে ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে ১৪-১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু ভালো প্রতিষ্ঠানের ঋণও খারাপ হয়ে পড়ছে।
এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার বিপরীতে প্রতি তিন মাসে ২০ শতাংশের বেশি করে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। যা গত জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৬ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তবে খেলাপি আদায় ও বিনিয়োগ বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার অভাব দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না, এমন মত তাদের।
এমন শঙ্কা জানিয়ে খেলাপির ভারে নুইয়ে পড়া দেশের ব্যাংকখাতকে টেনে তুলতে ঋণের বিপরীতে থাকা সম্পত্তি স্ব-স্ব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নিতে কঠোর হতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সুদের হার প্রতিনিয়ত প্রযোজ্য হচ্ছে। তাই আগামী তিন মাসে যদি কোনো খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে, শুধু সুদ আরোপের কারণে তাদের ঋণের পরিমাণ আরও ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে। তাদের ক্ষেত্রে যত প্রকার আইনি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব, তা নিতে হবে।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্থানীয়রা আস্থা পাচ্ছি না, বিদেশিরাও আস্থা পাচ্ছে না। এজন্য একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। স্থিতিশীল ব্যাংকিং নীতি প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতি এমন, অনেক ব্যাংক বর্তমানে ঋণ দিচ্ছে না। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে বসে আছে, নিরাপদ রিটার্ন নিশ্চিত হওয়ার কারণে। তারা জানে ১২ শতাংশ রিটার্ন পাবেন, তাই তারা শিল্প খাতের দিকে বিনিয়োগ করছে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘ক্রমাগতভাবে ব্যাংকগুলোর কার্যক্ষমতাকে সংকুচিত করছে। এই সংকুচিত অবস্থায় ব্যাংক তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে না। সময়ভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’
Posted ৪:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy