বিবিএনিউজ.নেট | ১৩ মে ২০১৯ | ২:১৮ অপরাহ্ণ
বিএসটিআইর মান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বিভিন্ন কোম্পানীর ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে অপসারণ করে ধ্বংস করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই পণ্যগুলোর উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে আদেশে। মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ওই সব পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় কতৃক বিএসটিআইর প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি রিট আবেদনে রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আদালত। এ জন্য প্রয়োজনে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে আদেশে। আগামী ২৩ মে এই রিট আবেদনের পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে আদালত।
ভেজাল তালিকাভুক্ত ৫২টি পণ্য হলো- সিটি অয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজানের ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ন ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দীঘির ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদ গুঁড়া, ফ্রেশের হলুদ গুঁড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া, মিষ্টিমেলার লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইয়ের লাচ্ছা সেমাই, অয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদ গুঁড়া, গ্রিন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুঁড়া, ডলফিনের হলুদের গুঁড়া, স‚র্যের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিনযুক্ত লবণ ও নুরের আয়োডিনযুক্ত লবণ।
গতকাল রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ফরিদুল ইসলাম। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, খাদ্য মানের এই পরীক্ষা শুধু রোজার মাসেই হওয়া উচিত নয়। সারা বছরই এ অভিযান থাকা উচিত। পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়েছে,‘যদিও এ বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। আদালতের এগুলো দেখার বিষয় নয়। এর পরও জনস্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়গুলো আদালত এড়িয়ে যেতে পারে না। খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত অংশগ্রহণ করা দরকার।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিচারক বলেন, ‘সরকার ও সরকারপ্রধানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, তারা যেন খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রয়োজনে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যেভাবে মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে করা হয়েছে।’
গত ২ মে শিল্প মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিএসটিআই রোজার আগে বাজার থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫২টি নিম্নমানের পণ্য চিহ্নিত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এরপর এসব খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার, জব্দ ও মান উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান এই রিট আবেদন করেন। পরদিন ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে মানহীন খাদ্যপণ্যের তালিকা দেখে বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘কোনো কোম্পানীই তো বাদ নাই।’ এসব পণ্যের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা জানাতে আদালত বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দুজন কর্মকর্তাকে তলব করে। বিএসটিআইর উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক সহদেব চন্দ্র সাহা গতকাল হাজির হওয়ার পর রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ সময়: ২:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed