সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো উল্টো ধরনের: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   137 বার পঠিত

বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো উল্টো ধরনের: গভর্নর

বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা মূলত বন্ড নির্ভর এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো বৈশ্বিক অর্থনীতির তুলনায় অনেক ভিন্ন। এক অর্থে এটি উল্টো ধরনের। কারণ বাংলাদেশে আমরা ব্যাংক নির্ভর।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ‍্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামি মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে আমরা ব্যাংকনির্ভর, কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা মূলত বন্ড নির্ভর। বৈশ্বিকভাবে প্রায় ১৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যু করা হয়েছে, যা বৈশ্বিক জিডিপির ১৩০ শতাংশ।

বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো স্টক মার্কেট, যার পরিমাণ প্রায় ৯০ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বন্ড মার্কেটের তুলনায় অনেক ছোট। তৃতীয়ত, মানি মার্কেট (ব্যাংক ব্যবস্থা) মোট ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বন্ড মার্কেটের অর্ধেকেরও কম। ফলে আমাদের কাঠামোটি একেবারেই উল্টো, বলেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, আমি পেনশন বা বিমা খাতের কথা বলছিই না, কারণ সেগুলো এতই ছোট যে বাংলাদেশে জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ, গণনায় ধরার মতোও নয়।

গভর্নর বলেন, আমাদের যা করতে হবে তা হলো এই কাঠামো পরিবর্তন করা। আমাদের ব্যাংক নির্ভর করপোরেট সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। আমি মনে করি কাঠামোগত অসামঞ্জস্য ও অর্থায়নের চাহিদার কারণে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কেননা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকমুখী। তারা বন্ড ইস্যু করতে চায় না, বরং ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়। কেন, জানি না? হয়তো ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ আছে, হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো যায়, পক্ষপাতিত্ব যে আছে, তা স্পষ্ট।

তিনি বলেন, আমাদের এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে। আমাদের করপোরেটগুলোকে একদিকে ব্যাংক থেকে ঠেলে বের করতে হবে, অন্যদিকে, বন্ড মার্কেটে টানতে হবে। সমস্যা হলো, এখন ব্যাংকগুলো ১২-১৫ বছরের ঋণ দিচ্ছে, যা তাদের দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে ১৫ বছরের প্রকল্পকে তারা ৫-৬ বছরের মধ্যে গুটিয়ে দেয়, ফলে সেই প্রকল্প ব্যাংকের ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। এর সমাধান হলো প্রকল্পের জন্য সঠিক কাঠামো তৈরি করা এবং সঠিক বাজার থেকে অর্থায়ন করা, যা ব্যাংক নয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আর্থিক খাতে এই রূপান্তরের দিকে যেতে হবে। অধিকাংশ দেশে যেমন চাহিদা ও সরবরাহ দুটো দিকেই বন্ড মার্কেট গড়ে ওঠে, বাংলাদেশেও সেটি করতে হবে। এখানে সরকারি বন্ড বাজারে আধিপত্য করছে। কিন্তু করপোরেট বন্ড মার্কেট কার্যত অগণ্য ও খুবই ছোট। এটি অবশ্যই উন্নয়ন করতে হবে।

গভর্নর বলেন, সরকার চাইলে খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন সঞ্চয়পত্র এখন বাজারের সঙ্গে আংশিক যুক্ত হয়েছে, তবে এটিকে পুরোপুরি লেনদেনযোগ্য করতে হবে। এতে গ্রাহকেরাও উপকৃত হবেন এবং সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হবে, তারল্য বাড়বে। সামান্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই এটি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ সরকারি বন্ড কিনতে পারছে, যা ইতিবাচক। তবে বেসরকারি বন্ডও লেনদেনযোগ্য করতে হবে এবং সঠিক কাঠামোয় আনতে হবে। এতে রাতারাতি বন্ড মার্কেট দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং বাজার অনেক প্রাণবন্ত হবে।

সুকুক (ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক একটি আর্থিক উপকরণ বা বন্ড, যা সুদের পরিবর্তে বাস্তব সম্পদ, প্রকল্প বা ব্যবসার আংশিক মালিকানা বা অংশীদারত্বের মাধ্যমে আয় নিশ্চিত করে) বাজার খুবই ছোট উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ইস্যু হয়েছে, প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার মতো। অথচ আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো থেকে আয় হচ্ছে। সেই সম্পদগুলোকে সিকিউরিটাইজ করলে দ্রুত সুকুক বাজার বড় করা সম্ভব। যেমন যমুনা সেতু থেকে টোল আদায়ের প্রবাহকে ব্যবহার করে নতুন সেতু নির্মাণে বন্ড ইস্যু করা যেতে পারে। একইভাবে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, এসব প্রকল্প থেকেও আয়কে সিকিউরিটাইজ করে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের অর্থ জোগাড় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সরকারি পেনশন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের পেনশন ব্যবস্থা আনফান্ডেড অর্থাৎ সম্পদ নেই, কেবল দায় আছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য অবদানভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করলে ধীরে ধীরে এটি তহবিল গড়ে তুলবে, যা বন্ড মার্কেটের চাহিদা তৈরি করবে।

এছাড়া করপোরেট পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড এসবকেও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব। এজন্য একটি পেনশন রেগুলেটরি অথরিটি দরকার, যা নিশ্চিত করবে সব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তহবিল গড়ে তুলছে, বলেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, আরেকটি খাত হলো বিমা। বর্তমানে বাংলাদেশে বিমার আওতায় আসার হার মাত্র ০.৪ শতাংশ। ভারতে এটি ৪ শতাংশ, উন্নত দেশে ১২ শতাংশ। ফলে বিমা খাতের উন্নয়ন অপরিহার্য। আগে বাংলাদেশে গাড়ির জন্য বিমা বাধ্যতামূলক ছিল, এখন সেটি তুলে দেওয়ায় বাজার ছোট হয়ে গেছে। এটি ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ বাকি আছে। আমরা এরইমধ্যে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় কাজ করছি। আমরা সুপারিশ তৈরি করছি, একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে এবং খুব শিগগির আমরা সরকারের কাছে খুব সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করবো। সুপারিশগুলোতে বন্ড মার্কেটের বিভিন্ন খাত, কনভেনশনাল ও সুকুক (ইসলামি বন্ড) দুটোই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(12104 বার পঠিত)
Page 1

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।