শনিবার ১৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ভালো কলেজে ভর্তির দুশ্চিন্তায় শিক্ষর্থীরা

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ০৮ মে ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   470 বার পঠিত

ভালো কলেজে ভর্তির দুশ্চিন্তায় শিক্ষর্থীরা

সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পালা। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি হতে হবে এসএসসি ও সমমানের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের। মূলত বোর্ডগুলো অনলাইনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তি পদ্ধতি পরিচালনা করে থাকে। এরই মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে সরকার। ১২ মে থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।

মাধ্যমিকে ভালো ফলের পরও একাদশ শ্রেণিতে ভালো ও মানসম্মত কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় সবাই শহরমুখী হতে চাচ্ছে। তাই সরকারকে গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। মোট উত্তীর্ণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তিসংক্রান্ত কমিটির তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজারের মতো কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৩০ লাখের মতো। এর মধ্যে ২০০-এর মতো মানসম্মত কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। অন্যদিকে এবার এসএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। ফলে প্রথম সারির কলেজগুলোয় জিপিএ-৫ পেয়েও অর্ধলাখের বেশি শিক্ষার্থী মানসম্মত কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না।

রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে একাদশের আসন রয়েছে ৪৫ হাজারের মতো। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে ২০ হাজারের কিছু বেশি। এর বিপরীত ঢাকা বোর্ডেই এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন। সে হিসাবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলের পর উচ্চমাধ্যমিকে রাজধানীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকবে। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা জারি করেছে। ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, ১২ মে থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই থেকে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির বিধান রাখা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে উত্তীর্ণরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। অনলাইনের (www.xiclassadmission.gov.bd) পাশাপাশি টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে।
১২ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত অনলাইন ও টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করে আবেদন করা যাবে। যারা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করবে, তাদেরও এ সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে, তারা ৩ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবে।
১০ জুন প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ১১ থেকে ১৮ জুন সিলেকশন নিশ্চিত (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে, ওই কলেজেই যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, তা এসএমএসে নিশ্চিত করা) করতে হবে। নিশ্চিত না করলে আবেদন বাতিল হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯ থেকে ২০ জুন এবং তৃতীয় পর্যায় গ্রহণ করা হবে ২৪ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল ২১ জুন এবং তৃতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ২২ ও ২৩ জুন সিলেকশন নিশ্চিত এবং তৃতীয় পর্যায়ে তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ২৬ জুন সিলেকশন নিশ্চিত করবে। নিশ্চিত না করলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি শেষে ১ জুলাই ক্লাস শুরু হবে।
অনলাইনে ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করা যাবে। প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি মাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভাগীয় এবং জেলা সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের শতভাগ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। মেধার ভিত্তিতে ভর্তির পর যদি বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো আবেদনকারী থাকে, তাহলে মোট আসনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য, ৩ শতাংশ বিভাগীয় ও জেলা সদরের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য, ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সন্তানদের জন্য, শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এবং শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে উপযুক্ত কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে এ আসন কার্যকর থাকবে না।
বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ-প্রাপ্তদের মেধাক্রম সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে। এরপরও একই নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে সুরাহা না হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ-প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে। এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত পয়েন্ট বিবেচনায় আনতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মফস্বল বা পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন চার্জসহ সর্বসাকুল্যে ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি ফি নেওয়া যাবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৫ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য ভর্তির সময় ওই প্রতিষ্ঠান মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবত বাংলা মাধ্যমে ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। সরকারি কলেজগুলো পরিপত্র অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ফি সংগ্রহ করবে। দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফির বেশি নেওয়া যাবে না। অনুমোদিত সব ফি রসিদের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শহরের স্কুলগুলোয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। অন্যদিকে গ্রামের স্কুলগুলোয় এর বিপরীত চিত্র রয়েছে। সেখানে সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীরা পাস করে আসছে, সেটাই তো অনেক বড় ব্যাপার। তবে গ্রাম আর শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার কোনো পার্থক্য নেই। সুযোগ-সুবিধার মধ্যে শুধুই পার্থক্য। তাই এ মেধাবীদের সামনে এগিয়ে নিতে গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
রাজধানীর স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীর স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম’ এর সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষায় আমাদের যেহেতু জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতা রয়েছে, তাই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে চান। অন্যদিকে ভালো-মানসম্মত প্রতিষ্ঠান থাকে হাতেগোনা কয়েকটা। তাও এসব আবার শহরকেন্দ্রিক। এজন্য সরকারকে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলার দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি জেলায় একটি করে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হলে একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন শহরমুখী হবে না; অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তির দুশ্চিন্তাও থাকবে না।

Facebook Comments Box

Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ মে ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।