| রবিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1094 বার পঠিত
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আর এ ব্যবসা সংগ্রহে ৩৪৮ দশমিক ৩১ শতাংশ ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় করেছে তারা। যদিও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের অনুমোদিত সীমা ব্যবসার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত। কিন্তু তা না মেনে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ। যা তাদের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের থেকে কয়েক গুণ বেশি।
জানতে চাইলে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেন কুমার সাহা রায় বলেন, আমার মনে হয় না ব্যবস্থাপনা ব্যয় এত বেশি হয়েছে। হিসাবে কিছু ভুল থাকতে পারে। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
জীবন বীমা খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যবসা আনতে ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় করেছে ২২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। যেখানে অনুমোদিত সীমা ছিল ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ এ কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ১৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
শুধু প্রগ্রেসিভ বা গোল্ডেন লাইফই নয়, এ খাতের অন্তত ১৮টি প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ের পুরোটাই ব্যয় করে ফেলেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বলছে, অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানি ১০০ টাকা ব্যবসা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ৩৪৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে। কিন্তু বীমা আইন, ২০১০-এর ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী, জীবন বীমা ব্যবসার যাবতীয় অর্থ জীবন বীমা তহবিল নামে একটি পৃথক ফান্ডে রাখার বিধান রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে আইনটি প্রতিপালন করা হয়নি বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ বলেন, জীবন বীমা খাতের বেশকিছু কোম্পানির অবস্থা নাজুক। তারা যা আয় করছে তার থেকে অনেক বেশি ব্যয় করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রাহকরা ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়বেন। আমরা শিগগিরই জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়সংক্রান্ত একটি নতুন বিধি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি। আশা করছি বিধিটি কার্যকর হলে এবং কোম্পানিগুলো তা মেনে চললে ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনুমোদিত সীমার মধ্যে চলে আসবে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু এ ব্যবসা আনতে কোম্পানিটির অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে।
অনুমোদিত সীমার চেয়ে ১৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৬২ লাখ টাকা আর ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় হয়েছে ২২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে যমুনা লাইফের অনুমোদিত সীমা ছিল ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এদিকে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। তাদের অনুমোদিত সীমা ছিল ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত। জানা গেছে, কোম্পানিটি দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে।
বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তাদের অনুমোদিত সীমা ছিল ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
আলফা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯১ লাখ টাকার ব্যবসা আনতে ব্যবস্থাপনা বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তাদের অনুমোদিত সীমা ছিল ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ২৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর এ ব্যবসা আনতে তাদের ব্যবস্থাপনা বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদিত সীমা ছিল ব্যবসার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত।
এদিকে, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাপনা বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া চার্টার্ড লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ডায়মন্ড লাইফের ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তালিকায় রয়েছে এলআইসি বাংলাদেশও। অনুমোদিত সীমার চেয়ে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। এছাড়া ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৯০ দশমিক ৪১ শতাংশ, সানফ্লাওয়ার লাইফের ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, স্বদেশ লাইফের ৯৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও জেনিথ ইসলামী লাইফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
Posted ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed