• সঙ্কটে শিক্ষাব্যবস্থা, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা

    বিবিএনিউজ.নেট | ০৪ জুলাই ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

    সঙ্কটে শিক্ষাব্যবস্থা, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা
    apps

    করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব পড়েছে সবকিছুতেই। এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলেছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে। করোনা মোকাবেলার পাশপাশি স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেশনজট মুক্ত হয়ে, নির্ধারিত রুটিনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ছন্দ পতন ঘটিয়েছে করোনা। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে ছুটি। সংক্রমণ না কমলে ছুটি বাড়তে পারে আরও। আর এতেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শিক্ষার বাৎসরিক রুটিন। ভর্তি, পরীক্ষা, ক্লাস সবকিছুতেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রাথমিক থেকে বিশ^বিদ্যালয় সব শিক্ষার্থীরাই পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পড়েছেন সঙ্কটে। বেতন-ভাতাসহ নানা কারণেই অস্থিরতা চলছে এসব প্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ করে এই বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়গুলো। সুনিশ্চিত কোন পরিকল্পনা ও ঘোষণা দিতে পারছেন না কেউ। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ভাবা হচ্ছে একাধিক বিকল্প।

    শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পরিস্থিতির উপরই সবকিছু নির্ভর করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোন কিছুই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। করোনার এই পরিস্থিতিতে কোটি কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকদের আমরা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না। কি করা যায় আমরা বিকল্প অনেক কিছুই ভাবছি। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সবরকম প্রস্তুতিও আছে আমাদের।

    Progoti-Insurance-AAA.jpg

    বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা, ৬০ দিনের মধ্যে ফল ঘোষণা, এপ্রিলে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা একইভাবে ফল ঘোষণা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সাময়িক ও অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি, নির্ধারিত সময়ে ক্লাস, পরীক্ষা ও ডিগ্রি প্রদান সবই নিয়ম মেনে চলছিল বিগত কয়েক বছর ধরে। এবছরও একইভাবে শুরু হয়েছিল। এসএসসি, দাখিল পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে শুরু ও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। প্রাণঘাতি এই ভাইরাস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলকে সুরক্ষিত রাখতে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় সেই ছুটি বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে আগস্টে। দেশের করোনাপরিস্থিতি এখনো ক্রমবর্ধমান থাকায় সেই ছুটি আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

    ফি, বেতন-ভাতার সমস্যা: করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। আয়ও কমে গেছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ নিয়ে তৈরি হয়েছে সমস্যা। অভিভাবকরা দুর্যোগের কারণে ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ফি আদায় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আটকে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফি আদায়ে চাপ না দিয়ে উভয় পক্ষকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


    প্রাথমিক শিক্ষায় ৮ নতুন সিদ্ধান্ত: প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর গত ৭ এপ্রিল থেকে সংসদ টেলিভিশনে প্রাথমিক ক্লাস সম্প্রচারিত হচ্ছে। তবে এতে শতভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করে ৫৯ থেকে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। বাকীরা থাকছেন পড়াশুনার বাইরে। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ৮ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে- প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য ‘হ্যালো টিচার’ নামে নতুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপস) তৈরি করা। এই অ্যাপস ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা পছন্দের শিক্ষক বাছাই করে তার কাছ থেকে শিক্ষার বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারবে। গণিত, ইংরেজি, বাংলা, বিজ্ঞানসহ নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক বাছাই করে পাঠ সম্পর্কে বুঝতে ও জানতে পারবে। মন্ত্রণালয় বলছে, বেতারে পাঠ প্রচার শুরু হলে আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যাবে। দেশের ৯৮ শতাংশের বেশি মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করে। অভিভাবকদের মুঠোফোন ব্যবহার করে শিশুরা অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবে। এর বাইরে পাঠ প্রচারের সময়সূচি স্থানীয় মসজিদের মাইকের মাধ্যমে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দেয়া, বিদ্যালয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র তৈরি করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া এবং তা যাচাই করা, প্রত্যেক বিদ্যালয়ের নামে ফেসবুক আইডি খুলে পাঠদান কার্যক্রম ভিডিও আপলোড করা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

    মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা: মাধ্যমিকে স্তরের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হয় ২৯ মার্চ থেকে। তবে ইন্টারনেটে সমস্যা, ডিভাইসের অপর্যাপ্ততা এই ক্লাসের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তাদের জরিপে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে তারা এর আওতায় আনতে পেরেছেন। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এই সুযোগের বাইরে থাকছেন। কারণে ইন্টারনেটের গতি অনেক দূর্বল, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ডিভাইস নেই, শিক্ষকরাও একই সমস্যায় রয়েছেন। প্রশিক্ষণ না থাকাও বড় বাধা হয়েছে তাদের জন্য।

    মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপারিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের সার্ভে হচ্ছে ৮০ শতাংশের মত শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। তবে অনেক জায়গায় এখনও বিদ্যুৎ নেই। রিমোট এরিয়ায় সব সময় ইলেকট্রিসিটি থাকে না। এসব কারণে কিছু আউট অব রিচ আছে। যারা ক্লাসের আওতায় আসছে না তাদের জন্য ভিন্ন পন্থা নেওয়া হবে। কমিউনিটি রেডিওতে ক্লাসগুলোতে প্রচারের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থীই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

    উচ্চশিক্ষা: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলো অনেক এগিয়ে। তারা বন্ধের মধ্যেই অনলাইনে ক্লাস শুরু চালু রেখেছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীও এতে অংশ নিচ্ছে। নতুন সেমিস্টারে ভর্তিও হচ্ছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পরীক্ষা গ্রহণেরও। তবে এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকীরা এখনো অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে বৈঠকের পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখানেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ও ডিভাইসের সঙ্কটের কথাই বলা হচ্ছে। অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত ও বৈষম্যমূলক পন্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা আত্মঘাতি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালুর আগে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর প্রতিবন্ধকতা ও পূর্বশর্তগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রতিকার ও পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই কেবল অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যাওয়া যেতে পারে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, উন্নত দেশের মতো আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আমাদের নেই। সক্ষমতা একদিনে গড়ে ওঠার বিষয়ও নয়। আমরা জরিপ চালিয়ে দেখেছি যে আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে। সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে ব্যবহার না করার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজটে না পড়ে, তার জন্যই অনলাইন ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্লাস শুরু হলে সবাই ধীরে ধীরে এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

    পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা: করোনার কারণে সাময়িক ও অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। বছরের শেষে জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ীর মতো পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে। পরবর্তী ক্লাসে উত্তরণোর জন্য প্রতিটি ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষাও নিতে হবে। কিন্তু এখনো সিলেবাস শেষ না করা এবং কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তার নিশ্চিয়তা না থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা।

    অনিশ্চিত একাদশে ভর্তি-ক্লাস, এইচএসসি, আলিম পরীক্ষা: করোনার মধ্যেই এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উত্তীর্ণরা এখনো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেননি। অন্যদিকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি। রেজাল্ট হলেই কেবল এই কার্যক্রম শুরু হবে।

    শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান খুললে পরবর্তী ক্লাসে উত্তরণের জন্য যতটুকু পাঠ শেষ করা দরকার তা শেষ করে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রয়োজনে এবছরের শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ পর্যন্ত নেয়া হতে পারে। এছাড়া একাদশে ভর্তির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে অনলাইনে, ভর্তি শেষে ক্লাসও হবে অনলাইনে। তবে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জুলাই ২০২০

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    শেখ হাসিনা মিউনিখের পথে

    ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

    Archive Calendar

    শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
     
    ১০
    ১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
    ১৮১৯২০২১২২২৩২৪
    ২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি