সামসুদ্দীন চৌধুরী | বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 2051 বার পঠিত
দেশের রফতানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চা। আর এ চায়ের জগতে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য একটি নাম হচ্ছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। দেশের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীন ১৩টি বাগানের মধ্যে ১২ টির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্য বিভাগে বিশেষ অবদানের জন্য ডান অ্যান্ড ব্রাডস্ট্রিট সাউথ এশিয়া মিডলইস্ট লিমিটেডের উদ্যোগে ‘ডান ব্রাডস্ট্রিট কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২’ পদকে ভূষিত হয়েছে, যা দেশের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিশেষ সম্মান।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সি সফিউল হক। এছাড়া পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মো. সরোয়ার কামাল, মো. ফায়েকুজ্জামান, সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, মো. শওকাত আলি ওয়ারিসি, কাজী সানাউল হক, মোহাম্মদ বিন কাশেম, মো. শাকিল রিজভী, মোহাম্মদ শামসুল আলম ভূঁইয়া। এছাড়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেনÑ মো. আবদুল আউয়াল। যার অক্লান্ত শ্রম, মেধা ও দূরদর্শিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানে রয়েছে একঝাঁক প্রাণবন্ত ও উদ্যমী কর্মকর্তা। যারা অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের তালিকাভুক্ত।
বর্তমানে দেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানের সার্বিক পরিসংখ্যান চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো-
মূলধনঃ বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা। যার প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ১০.২২ শতাংশ পরিচালক, ৫.৯৮ শতাংশ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক, ৩৪.৭৪ শতাংশ সাধারণ জনগণ এবং ৪.৩৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। উল্লিখিত তারিখে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১১৮ জন।
উৎপাদন ও বিক্রয়ঃ বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, বিদেশী বায়ারদের অনুপুস্থিতি, বিরূপ আবহাওয়া, বাগানে লীফ রাস্ট বালাইয়ের আক্রমন, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিম্নমানের চা কম মূল্যে আমদানিসহ নানা প্রতিকূলতা সত্তে¡ও ২০১৮ সালে কোম্পানিটি বিক্রয়ে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। আলোচ্য বছরে কোম্পানি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২০৯ কেজি চা উৎপাদন করে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৭ কেজি। আলোচ্য বছরে উৎপাদনে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে ১০.১৯ শতাংশ কিন্তু উৎপাদন কম হওয়া সত্তে¡ও চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার অবস্থান সুদৃঢ় করে রেখেছে। যা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলেই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় বলে শেয়ারহোল্ডারদের অভিমত।
প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৮ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আলোচ্য বছরে কোম্পানির মোট বিক্রয় হয়েছে ১১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখানে উল্লেখ্য যে উক্ত বিক্রয়ের সাথে স্থানীয় ব্যবসায়ী ইউনিট এবং রাবার বিক্রয়ের টাকা যুক্ত হয়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে এর প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬.০৩ শতাংশ যা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অতি সন্তোষজনক।
প্রতিটি চা বাগানে গড় উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস পেলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালনা পর্ষদ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবিরাম চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে তাদের এ উৎপাদিত পন্যের মূল্য সহনশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে উৎপাদন পরিসংখ্যানে কোম্পানির বিক্রয় গত বছরের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে
মোট সম্পদঃ আলোচ্য বছরে কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা গত বছর ছিল ২১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৮৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, ওই মোট সম্পদের মধ্যে কোম্পানির ২০ লাখ টাকা বাংলাদেশ অ্যারোমা টি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা আছে।
দীর্ঘমেয়াদি ঋণঃ যে কোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংকঋণ অপরিহার্য। ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড ব্যবসা স্বচ্ছভাবে পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করেছে। ঋণের ক্ষেত্রে কোম্পানি খুবই সহনশীল। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে। চলতি বছর কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ২২ কোটি ২০ লাখ টাকা, গত বছর এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৭.১৯ শতাংশ। আলোচ্য বছরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে কোম্পানির একটি স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে। আলোচ্য বছরে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যা গত বছর ছিল ৪৬ কোটি টাকা, গত বছরের তুলনায় আলোচ্য বছরে এর হ্রাস পেয়েছে ১৬.০৭ শতাংশ।
আয়কর সঞ্চিতিঃ আলোচ্য বছরে কোম্পানির আয়কর সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় এ দায় বেড়েছে ১৭.৫৬ শতাংশ। চলতি বছর কোম্পানি ৬৯ লাখ টাকা আয়কর প্রদান করেছে, যা আয়-ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়েছে।
মুনাফাঃ যে কোনো কোম্পানির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মুনাফা অর্জন। আলোচ্য বছরে নানা প্রতিকূলতা সত্তে¡ও কোম্পানি তার মুনাফা অর্জনে বিচ্যুত হয়নি। চলতি বছরে কোম্পানি কর-পরবর্তী মুনাফা অর্জন করেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩.৬৩ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১৬.০৮ টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ১২.০৩ টাকা। এছাড়া শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫৩.২৭ টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৪২.৯৯ টাকা। এর ফলে আলোচ্য বছরে ঘোষিত প্রতিষ্ঠানটির ২২ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিতে অনুমোদিত হয়েছে। গত বছর কোম্পানিটি ১৮ শতাংশ দিয়েছিল।
বর্তমানে ন্যাশনাল টি-এর হেক্টরে চা উৎপাদন ৯৫৫ কেজি। ২৩৬ হেক্টর জমিতে চা গাছ রোপণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় থাকলে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ইল্ড পার হেক্টর ১ হাজার ৬০০ কেজি সম্ভব বলে জানালেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়াও চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিদেশ থেকে উন্নতমানের মেশিনারিজও ক্রয় করা হয়েছে এবং আরো কিছু আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed