বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন বন্ধ শেয়ারবাজারে

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   496 বার পঠিত

পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন বন্ধ শেয়ারবাজারে

নানা সংকটে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার পর এবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানিটি অবসায়নের উদ্যোগ নেয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিএসই সূত্র জানিয়েছে, আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শেয়ারবাজারে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।

এর আগে পিপলস লিজিং বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে অনেক শেয়ারহোল্ডার পানির দরে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিতে চান। কিন্তু ক্রেতার অভাবে হতাশ হতে হয়েছে তাদেরকে। নামমাত্র অর্থে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও ক্রেতার অভাবে শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি শেয়ারহোল্ডাররা।

মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এ তিন কার্যদিবসে দফায় দফায় দাম কমিয়েও শেয়ার বিক্রি করতে ব্যর্থ হন পিপলস লিজিংয়ের শেয়ারহোল্ডারা। এ পরিস্থিতিতেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দিল ডিএসই।

অনিয়ম দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। আমাদের কাছে সংবাদ আছে একটি গ্রুপ কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে অনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমরা কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, পিপলস লিজিংয়ে ঋণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা, সম্পত্তির ঝুঁকি ও তারল্য সংকটে দুরবস্থায় রয়েছে। তারা আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পরছে না। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২ (৩) এবং ২৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। পরে সম্মতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২৬ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়। চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আটকে থাকা আমানতের পরিমাণ, অনিয়মের ধরণ, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ও মাসিক বেতন-ভাতার পরিমাণ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ে আমানত রয়েছে দুই হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনো নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে। এছাড়া গুলশান ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা রয়েছে। পিপলস লিজিংয়ে এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৭৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

তাদের মোট শেয়ারের ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে স্পন্সর ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২ (৩) ধারা অনুযায়ী, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের জন্য আদেশ দিতে পারবে।

একই আইনের ৮ ধারায় যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কারণে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে আমাতকারীদের স্বার্থহানি হয় এমনভাবে ব্যবসা করা, দায় পরিশোধে অপর্যাপ্ত সম্পদ, অবসায়ন বা কার্যক্রম বন্ধ, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অবসায়ন হওয়া প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীর অর্থ কোন উপায়ে ফেরত দেয়া হবে, সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে কিছু বলা নেই। এক্ষেত্রে আদালত যে উপায়ে অর্থ পরিশোধ করতে বলবেন, তা কার্যকর হবে। তবে সাধারণভাবে সম্পদ বিক্রি এবং সরকারের সহায়তার আলোকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয়।

আর এ জন্য প্রথমে প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পদ নিরূপণ করা হয়। এরপর একটি স্কিম ঘোষণা করা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে কোন পরিমাণ আমানত কবে নাগাদ পরিশোধ করা হবে তার উল্লেখ থাকে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।