শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কল্যাণ তহবিল চাইলেন টেলিভিশনের শিল্পীরা

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   346 বার পঠিত

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কল্যাণ তহবিল চাইলেন টেলিভিশনের শিল্পীরা

শিল্প সংস্কৃতির বিকাশের নিমিত্তে সরকারিভাবে টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আজ সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর নিকেতনে অবস্থিত সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

সেখানে মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সংঘের উপদেষ্টা বরেণ্য নাট্যজন মামুনুর রশীদ। আরও ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায়। তার ঘোষণার পর নিজেদের দাবি দাওয়া লিখিত আকারে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম। তিনি পড়ে শোনান, ‘আমরা সবাই জানি যে, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বেসরকারী উদ্যোগে (প্যাকেজ) নাটক নির্মাণের যে সুযােগ সৃষ্টি হয়েছিল, এবং পরবর্তীতে বেসরকারী টেলিভিশনের বিস্তার এবং বেসরকারি অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রসার ঘটার সাথে সাথে, অসংখ্য অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীরা অভিনয় শিল্প তথা টেলিভিশন নাটককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

পরবর্তীতে অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ শিল্পী-কলাকুশলী টেলিভিশন নাটকে অভিনয় ও অন্যান্য শাখাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বিগত ২৫ বছর ধরে যারা অভিনয় শিল্পকে এবং টেলিভিশন নাটককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তারা আজ অনেকেই শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারছেন না, তারা বিপর্যস্ত জীবন-যাপন করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানাের মত বা আর্থিক সহযােগিতা করার মত সরকারী বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান নেই, যাতে করে যারা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে অভিনয় শিল্প তথা নাটকের মধ্যে নিবেদন করেছেন আজ তারা অসহায়, নিঃস্ব হয়ে জীবন-যাপন করছেন।

তাদের জীবনের নিরাপত্তা বা তাদের জীবনকে বহন করার মত সক্ষমতা তাদের নেই। প্রায় প্রতিটি দেশেই শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য, কল্যাণ তহবিল থাকে। আমাদের দেশেও একটি রয়েছে, সেটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, শিল্পী কল্যাণ তহবিল কিন্তু সেখানে টেলিভিশন শিল্পীদের ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই, যদিও সেখানে অভিনয় শিল্পী উল্লেখ আছে, কিন্তু আমরা এই করােনা মহামারিতে লক্ষ্য করলাম য, কোন মন্ত্রণালয় থেকেই টেলিভিশনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য কোন প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি এবং পাওয়া যায়নি।

আমাদের দেশে টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র এই দুটি মাধ্যমই তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ে চলচ্চিত্র শাখা আছে এবং টেলিভিশন শাখাও আছে, যদিও ইতােমধে তথ্য মন্ত্রণালয়, চলচ্চিত্র শিল্পী ও কুশলীদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠন করেছেন, যা অত্যন্ত প্রসংশনীয়। সেজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কিন্তু এদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে টেলিভিশন শাখা বলে কোনো শাখা নেই, তাই টেলিভিশনে যারা কাজ করেন যুক্তিসংগতভাবে তারা তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবেন কিন্তু এই মহামারিতে তথ্য মন্ত্রণালয়েরও কোন প্রকার আর্থিক সহযােগিতা আমরা পাইনি।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি, এবং আমরা আমাদের পেশার নিরাপত্তার জন্য অনেকগুলো দাবি জানিয়েছিলাম যে, ডাবিং সিরিয়াল প্রচারে নীতিমালা প্রণয়ন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়ন, আমাদের পেশার স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি কল্যাণ তহবিল গঠনের এবং টেলিভিশন শিল্পীদের জন্য যে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে তা আন্তর্জাতিকমানে উন্নতিকরণ, তথ্য মন্ত্রণালয় আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন তারা বিষয়গুলাে দেখবেন এবং দাবিগুলাে সমাধান করবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসবের কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করছি না।

এই মহামারিতে লকডাউনের সময় তিন মাস আমাদের শিল্পী ও কলাকুশলীরা সবাই যখন কর্মহীন হয়ে ঘরে বসেছিলেন, তখন আমরা আমাদের নিজস্ব সহযােগিতায় নিজস্ব উদ্যোগে, অভিনয় শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকার সহযােগিতা অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের মাঝে বিতরণ করেছি, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সুতরাং যারা এই মাধ্যমে কাজ করবেন, তারা যাতে একটি আপদকালীন সুবিধা সরকারের নিকট থেকে পেতে পারেন, তার জন্য আমরা কল্যাণ তহবিল গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া যদি টেলিভিশন নাটক পেশাটি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে তাহলে নিশ্চিতভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কোন শিক্ষিত তরুণ শিল্পী-কলাকুশলী এই পেশাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করবেন না, যার ফলে শিক্ষিত নির্মাতা, শিক্ষিত নাট্যকার, শিক্ষিত অভিনয় শিল্পী, প্রশিক্ষিত ক্যামেরাম্যান, প্রশিক্ষিত টেকনিক্যাল ক্রুরা যদি এই মাধ্যমে না আসেন, তাহলে বাংলাদেশের ইলেট্রনিক্স কালচারাল এ্যাকটিভিটিস বা এই চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন মাধ্যমে যে সকল ফিকশন বা নাটক নির্মাণ হয়, সেগুলাের গুণগতমান ব্যাহত হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিল্পী সংঘ তাদের দাবিতে আরও বলেছে, ‘একটি জাতির মানস গঠন হয় তার সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে এবং এই মূহুর্তে দেশের সবচেয়ে দর্শকঘনিষ্ঠ মাধ্যম টেলিভিশন নাটক। তাই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শংকিত। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে চলছে, সকল সেক্টরে পরিবর্তন এসেছে, সকল সেক্টরের উন্নতি সাধন হয়েছে, কিন্তু অভিনয় শিল্পী তথা টেলিভিশন নাটকের কোন অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যুগযুগ ধরে যে টেলিভিশন নাটক বাংলাদেশের মানুষকে বিনােদন দিয়ে এসেছে, সেই নাটক পেশাটি আজ অনিশ্চিত। টেলিভিশন নাটকের অভিনয় পেশী আজ ধীরে ধীরে অনিশ্চয়তার পথে ধাবিত হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশের ইলেট্রনিক্স মাধ্যমের শিল্প-সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, অবশ্যই অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীদের অনুপ্রেরণা যােগাতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে যথাশীঘ্র সম্ভৰ তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধমে, একটি কল্যাণ তহবিল গঠন করা হােক।

কল্যাণ তহবিল এর ধরণ এমন হওয়া উচিত, ৬৫ বছর বয়স্ক শিল্পীদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান, দূর্ঘটনায় আহত বা দূরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিল্পীদের জন্য চিকিৎসা ভাতা প্রদান, শারীরিক এবং মানসিক বিপর্যয়ের কারণে কর্মে অক্ষম শিল্পীদের মাসিক ভাতা প্রদান, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন বরাদ্দ, হতে পারে, প্রতি অর্থ বছরে সরকার কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ বরাদ্দ। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

অন্যথায় আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথে এগিয়ে যেতে হবে। শিল্প সংস্কৃতি বিকাশের নিমিত্তে টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ তহবিল গঠন করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরােধ জানাচ্ছি।’

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।