শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি: রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি   |   বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট   |   191 বার পঠিত

বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি: রাষ্ট্রপতি

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি। তিনি তাঁর ভাষণে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ২৬ মার্চ ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু জয়পুরহাটে এক সমাবেশে বলেছিলেন, ’সৎভাবে কাজ করতে হবে। গরিবের অর্থ কেউ যেন আত্মসাৎ করে না খায়, গরিবের সম্পদ যেন আত্মসাৎ করে না খায়। দুর্নীতি বাংলার মাটি থেকে মুছে দিতে হবে’।

‘মানুষের চাহিদার সীমা থাকে, কিন্তু লোভ সীমাহীন। দুর্নীতি এমন একটি বিষয় যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত আছে। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কৃপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়’।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভার্চুায়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

নিচে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণটি তুলে ধরা হলো:

ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। সকলকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বক্তব্যের শুরুতেই আমি বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় চার নেতাসহ জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে যাঁরা জীবন উৎসর্গ ও অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের সকলকে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ’জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রে আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যের যোগসূত্র হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের উচ্চকিত কণ্ঠ বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ হয়েছে বলে আমি মনে করি। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমনে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

রাষ্ট্রপতি বলেন,’বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানবিক, বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত শুদ্ধাচারী রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা। আমাদের পবিত্র সংবিধানে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ তথা সমাজে সততা ও নিষ্ঠাবোধ বিকাশের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে’।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি। তিনি তাঁর ভাষণে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ২৬ মার্চ ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু জয়পুরহাটে এক সমাবেশে বলেছিলেন, সৎভাবে কাজ করতে হবে। গরিবের অর্থ কেউ যেন আত্মসাৎ করে না খায়, গরিবের সম্পদ যেন আত্মসাৎ করে না খায়। দুর্নীতি বাংলার মাটি থেকে মুছে দিতে হবে।

মানুষের চাহিদার সীমা থাকে, কিন্তু লোভ সীমাহীন। দুর্নীতি এমন একটি বিষয় যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত আছে। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়’।
’মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই কেবল দুর্নীতিকে সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কোনো মানুষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না। পারিবারিক, সামাজিক ও আশপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ কার্যক্রম যুগপৎ পরিচালনা করছে। কমিশন কর্তৃক মামলা দায়ের যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি মামলায় সাজার হারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চালুকৃত জাতীয় হটলাইন সেবা ১০৬ ইতোমধ্যে জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে জনগণ যেকোনো দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ করতে পারছে। পাশাপাশি দুদক সচেতনমূলক যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস’।

‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ ও ‘সততা সংঘের’ কার্যক্রম একটি অভিনব উদ্যোগ। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে অধিকতর নীতিবান হয়ে গড়ে উঠবে। তাছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিও সমাজে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব তৈরি করবে এবং দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে দুদকের জন্য সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন। অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে। যারা রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি করলে শান্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের উপর জনগণের আস্থা বাড়বে।

‘দেশ-বিদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধী সংস্থা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদেরকে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা অনুসন্ধান ও তদন্তে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে সাথে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে’।

‘তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককেও আরো কৌশলি হতে হবে, প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস’।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ’দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দেশ ও সমাজ থেকে যে- কোনো মূল্যে দুর্নীতি দূর করতে হবে। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে’। ’আগামী দিনগুলোতে দুদককে দুর্নীতি দমনে আরো দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি আশা করব, আপনারা নিজেদের ঘর থেকেই এ অভিযান শুরু করবেন। কিছুসংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষন্ন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। একইসাথে দুর্নীতির মাধ্যমে কোনো অনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রলুব্ধ না করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি’।

‘আমি আশা করি, সংবিধানের আলোকে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে উত্তম চর্চার আলোকে আপনারা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখবেন’।

রাষ্টপ্রতি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবাদে আছে, এই দুনিয়ায় হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি। রাজার হস্ত করে কাঙ্গালের ধন চুরি। মানুষের চাওয়া পাওয়ার আকাক্সক্ষাা ক্রমশ বাড়তে থাকে। চাওয়া-পাওয়ার সাথে সামর্থ্যের সামঞ্জস্য না থাকলেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। তাই আয়ের সাথে ব্যয়ের সংগতি রেখে জীবন ধারণে অভ্যস্ত হলেই সমাজ থেকে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। আমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে নব উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দৃঢ় পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে যাবে’। ’আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন’।

 

 

 

 

 

 

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।