বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 435 বার পঠিত
উপমহাদেশে বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি ভৌতবিজ্ঞানের সঙ্গে জীববিদ্যার সফল সংযোগ ঘটান এবং তার মাধ্যমে উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষার শুরু ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। ১৮৭৯ সালে কলকাতা থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতায় ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং এখানেই গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন।
বিদ্যুৎতরঙ্গের আলোকধর্মী প্রবণতা, বেতার বার্তার সূত্রসহ পদার্থবিজ্ঞানের অনেক মৌলিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন তিনি। আচার্য জগদীশ চন্দ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। ১৯০০ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৩৭ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন।
জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞনী হের্ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে তার বক্তৃতার বিষয় ছিল “অন ইলেকট্রিক ওয়েভ্স”। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে করা পরীক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি বক্তৃতা করেন যা ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত করে। অশীতিপর বৃদ্ধ বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বক্তৃতা শোনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে এসে জগদীশের স্ত্রী অবলা বসুকে তার স্বামীর সফলতার জন্য অভিবাদন জানান। জগদীশ এবং অবলা দু’জনকেই তিনি তার বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এই বিষয়ের উপর বিখ্যাত সাময়িকী “টাইম্স”-এ একটি রিপোর্ট ছাপা হয় যাতে বলা হয়, “এ বছর ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বিদ্যুৎ-তরঙ্গ সম্পর্কে অধ্যাপক বসুর বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, কেমব্রিজের এম.এ. এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ সাইন্স এই বিজ্ঞানী বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন সম্পর্কে যে মৌলিক গবেষণা করেছেন, তার প্রতি ইউরোপীয় বিজ্ঞানী মহলে আগ্রহ জন্মেছে। রয়্যাল সোসাইটি বিদ্যুৎরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয়ের গবেষণাপত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।”
Posted ৪:৪৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed