শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ইমেজ বিল্ডিংয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ভূমিকা

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   807 বার পঠিত

বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ইমেজ বিল্ডিংয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ভূমিকা

বেসরকারি খাতে বীমা প্রতিষ্ঠান চালুর পূর্বে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল আপামর জনসাধারণকে ধাপে ধাপে বীমার আওতায় নিয়ে এসে জীবন, স্বাস্থ্য এবং সম্পদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে বীমাশিল্পকে গতানুগতিক ধারা থেকে বের করে সময়োপযোগী নিয়মতান্ত্রিক ধারায় চালিত প্রয়াসে সুষ্ঠু নীতিমালা ও কাঠামোর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায়, বীমাশিল্পে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি এবং অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি প্রতিরোধ করে বীমাখাতকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সময়োপযোগী দিকনির্দেশনার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।

নন লাইফ বীমার ক্ষেত্রে একমাত্র পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন। সাধারণ বীমা পুনঃবীমাকারী হলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মতো বাজারে ব্যবসা সংগ্রহ করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। তাছাড়া সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের বীমা করার একমাত্র অধিকার সাধারণ বীমা করপোরেশনের। সরকারি বীমার ৫০% প্রিমিয়াম এবং দায় দেনা বর্তমানে চালু বেসরকারি ৪৫টি বীমা কোম্পানির মধ্যে আনুপাতিক হারে সরকারি সিদ্ধান্তে বণ্টন করে দেয়া হয়।

এই কারণে বেসরকারি সেক্টর থেকে সংগৃহীত সমুদয় প্রিমিয়াম বেসরকারি সকল বীমা কোম্পানি তাদের Retention-এর বাইরে বীমাকৃত অংকের সকলটাই সাধারণ বীমার সাথে পুনঃবীমা করে থাকে। সাধারণ বীমাও তাদের Retention-এর অতিরিক্তটা বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন পুনঃবীমাকারী ও এজেন্টের মাধ্যমে বীমা কভারেজ নিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ৫০% পুনঃবীমা দেশের বাইরে করার অনুমতি দিয়েছেন। যার সুবিধা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে হাতেগোনা বড় ৪-৫টি কোম্পানি ভোগ করে থাকে বাকি কোম্পানিগুলো ব্যবসার কলবর এবং টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাবে বিদেশে পুনঃবীমা করতে পারছে না।

একদিকে বহু সংখ্যক বেসরকারি বীমা কোম্পানি যেমন বিদেশে পুনঃবীমা করতে পারছে না অন্যদিকে সাধারণ বীমা করপোরেশেনও ছোট ছোট বীমা কোম্পানিগুলোকে সমাদর করছে না। ফলে ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর দাবিও দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ বীমায় অনিষ্পন্ন থেকে যাচ্ছে। ছোট ছোট কোম্পানিগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ বীমার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

অতিরিক্ত কমিশনে বাজার থেকে বীমা পলিসি সংগ্রহের ফলে বীমা কোম্পানির ফান্ড বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে দাবি পরিশোধ এবং সাধারণ বীমা থেকে তার হিস্যা আদায়ে এক জটিল সমীকরণ দেখা যায়। সাধারণ বীমা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর দাবি বছরের পর বছর অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে দেয়ায় কোম্পানিগুলোর স্বাভাবিক চলার পথে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো দাবির কাগজপত্র দাখিল করার পর ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করলে এবং সাধারণ বীমার প্রাপ্য টাকা সময়ের মধ্যে বেসরকারি কোম্পানিগুলো সমন্বয় করলে আর কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না। বিশেষ করে Cash Loss-এর টাকা চাইলে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে প্রাপ্য সকল টাকা সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে তা ভালো কথা কিন্তু কোম্পানিগুলোর সাধারণ বীমার কাছে দাবির অংক হিসাবে প্রাপ্য টাকার হিসাব না করে কেবল এক তরফা সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে যা কোম্পানিগুলোকে আর্থিক অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয় এবং বাজারে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই অবস্থা বীমা ব্যবসায় জড়িত কোন পক্ষের কাছেই কাম্য হতে পারে না।

সাধারণ বীমা তাদের পুনঃবীমাকারী বা এজেন্টদের মাধ্যমে যত সহজে দাবি আদায় করতে পারে তা আমরা আমাদের পুনঃবীমাকারী সাধারণ বীমার কাছ থেকে তা পাই না। দাবির সকল কাগজপত্র দিয়ে বছরের পর বছর বসে থাকতে হয়। দাবির ফাইল আর নড়েই না। এতে বাজারে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর বদনাম হয়। এই বদনামের সিংহভাগ যে সাধারণ বীমার কারণে তা বীমাগ্রহীতাদের বুঝানো বা বলা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। আর বড় কোন দাবি হলেতো কথাই নেই ছোট কোম্পানিগুলো অসাড় হয়ে যায়। বিভিন্ন অনুরোধ, উপরোধ এবং বিভিন্ন উচ্চপর্যায় থেকে ফোন করিয়ে ফাইল পাস করাতে হয়। এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া উচিত।

সাধারণ বীমার পুনঃ-বীমাকারীরা তাদের নিকট প্রেরিত কাগজপত্রের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব দাবি নিষ্পত্তি করে। সাধারণ বীমা যদি ওই সমপ্রক্রিয়ায় বেসরকারি কোম্পানির দাবিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতো তাহলে নন-লাইফ বীমাশিল্পে আস্থার সংকট থাকতো না। বীমাগ্রহীতাদের নিকট আস্থার সংকট কাটাতে একমাত্র পুনঃবীমাকারী হিসাবে সাধারণ বীমাকে একধাপ এগিয়ে আসতে হবে। আর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে সব বেসরকারি কোম্পানির সাথে সাধারণ বীমার দাবি ও প্রিমিয়াম পরিশোধে যাদের অনিয়ম রয়েছে তাদের গাইড করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দাবি উত্থাপনের পর তিন মাসের মধ্যে বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীমাগ্রহীতাদের দাবি পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তা প্রতি সপ্তাহেই তদারক করা হচ্ছে। তাহলে সাধারণ বীমাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর দাবি দাখিলের পর তা নিষ্পন্ন করার তারিখ কেন নির্ধারণ করা হবে না? সাধারণ বীমার লোকবল সমস্যা থাকলে তার সমাধান করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ বীমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে সর্বক্ষেত্রে আলোচনা করে এই চিত্র পাওয়া যায়। তারা আরো বলেন, ছোট ছোট দাবিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে তাঁরা আন্তরিক কিন্তু তার কোনো নমুনা বেসরকারি খাতে ৪৫টি কোম্পানি দেখছে না। আমরা চাই ছোট ছোট দাবিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাধারণ বীমা ও কোম্পানিগুলোর দায়-দেনা কমিয়ে আনা হোক এবং বড়গুলোর সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সাধারণ বীমার উদ্যোগী ভ‚মিকাই কেবল পারে বীমাগ্রহীতাদের নিকট বীমাশিল্পের সর্বজনীন ইমেজ ফিরিয়ে আনতে।

বীমা আমাদের পেশা। আমাদের পেশার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের পেশাকে সম্মান না করি তাহলে অন্যেরা কেন করবে? ছোট ছোট বীমা কোম্পানিগুলো যেন খাদে না পড়ে যায়, তা দেখার দায়িত্ব বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের। এই দুই কর্তৃপক্ষ তাদের আদর, ভালোবাসা আর শাসনে বেসরকারি বীমা খাতকে চাঙ্গা করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বীমাশিল্পের ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবেন।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।