শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্দ ঋণের প্রভিশন রক্ষায় ব্যর্থ ১২ ব্যাংক

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   |   প্রিন্ট   |   547 বার পঠিত

মন্দ ঋণের প্রভিশন রক্ষায় ব্যর্থ ১২ ব্যাংক

মন্দ বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ডিসেম্বর ১৯ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী, নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক।

এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক হলো বেসিক, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অন্যদিকে নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও ঋণ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো ফলে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিও পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সরকারের নির্দেশনায় খেলাপি ঋণ কমাতে খেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি আইন শিথিল, অবলোপন নীতিমালায় ছাড়, গণছাড়ের আওতায় পুনঃতফসিল, কম সুদের ঋণের ব্যবস্থাসহ দেয়া হয়েছে আরও বিশেষ সুবিধা। ফলে সারা বছর লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ডিসেম্বর প্রান্তিকে কমেছে। তবে মন্দ ঋণ বাড়ায় বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের ৮১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ক্ষতিজনক ঋণ। যা এক বছর আগে ছিল ৮০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বা ৮৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

আলোচিত সময়ে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন রেখেছে ৫৪ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। তবে একক ব্যাংক বিবেচনায় এর পরিমাণ আরও বেশি। কারণ অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে।

ফলে সার্বিকভাবে প্রভিশন ঘাটতি কমেছে। তবে যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আলোচিত সময়ে সেই ১২ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির ঘাটতি ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

এরপর সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ১৫৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮৭৮ কোটি, এবি ব্যাংকের ৬৭৩ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৩৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৮৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৪২৫ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্টের ২৭৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৯৬ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬২ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৬৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা।

Facebook Comments Box
বিষয় :
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।