বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজেন্টের পকেটে ৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   595 বার পঠিত

রিজেন্টের পকেটে ৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি খাতের রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। চট্টগ্রামভিত্তিক হাবীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা আবগারি শুল্ক ও প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি করে আসছে। সহসাই সব মামলায় চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে। এরপরও বকেয়া পরিশোধ না করলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব বা উড়োজাহাজ জব্দ করে বকেয়া আদায় করা হবে। এনবিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এনবিআরের আদেশ ও বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক আদায় বিধিমালা অনুযায়ী, আকাশপথে যাত্রাকালে বিমান সংস্থাগুলো টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে আবগারি শুল্ক আদায় করে থাকে। ওই অর্থ পরবর্তী মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা আবগারি শুল্ক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। এর মধ্যে একটি মামলায় রয়েছে প্রায় তিন কোটি ৯৮ লাখ টাকার বিষয়। প্রতিষ্ঠানটি এ টাকা পরিশোধ না করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত তা স্থগিত করে দেন।

বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। প্রায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা ফাঁকির অপর একটি মামলা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি টাকা জরিমানা (অর্থদণ্ড) করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফাঁকি দেওয়া বকেয়া পরিশোধ করলেও জরিমানার এক কোটি টাকা এখনও পরিশোধ করেনি।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে আবারও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আবগারি শুল্ক ও প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট নিরীক্ষার পর রিজেন্টের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করে। এর মধ্যে ছয়টি আবগারি শুল্ক ও দুটি উৎসে ভ্যাট ফাঁকির। আট মামলায় মোট আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি প্রায় সাড়ে ৬২ কোটি টাকা। আট মামলায় প্রাথমিক দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা, জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজস্ব বকেয়া প্রায় ৬৭ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে প্রায় সাত কোটি ৮১ লাখ টাকার আবগারি শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত এ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। একই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় চার কোটি ছয় লাখ টাকার মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত এ আবগারি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের ২১ মে প্রায় দুই কোটি ৯৫ লাখ টাকার আবগারি শুল্ক ফাঁকির মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। ২২ মে প্রায় তিন কোটি ৫১ লাখ টাকার আবগারি শুল্ক ফাঁকির মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। ২৩ মে প্রায় দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকার আবগারি শুল্ক ফাঁকির মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে এ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। ২৫ নভেম্বর প্রায় ২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার আবগারি শুল্ক ফাঁকির মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে।

অপরদিকে, ২০১৮ সালের ৬ জুন প্রায় চার কোটি ৭৩ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে রিজেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১০-১১ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া একই বছরের ৭ জুন প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২-১৩ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। তারা অফিসের বিভিন্ন কেনাকাটা, এয়ারক্রাফট ফুয়েল, মেন্টেইনেন্স, ক্যাটারিংসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণের বিপরীতে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আবগারির ছয়টি ও উৎসে ভ্যাট ফাঁকির দুটিসহ ২০১৮ সালে আট মামলায় পৃথকভাবে প্রাথমিক দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু জবাব দিয়েছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি করে আসছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক পরিশোধ না করা হলে সহসাই চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে। এরপরও পরিশোধ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব বা উড়োজাহাজ জব্দ করে বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে।

এ বিষয়ে ভ্যাট উত্তর কমিশনার জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছি। তারা কিছু জবাব দিয়েছে। আমরা মামলা ফাইনাল করার প্রক্রিয়ায় আছি।’ রিজেন্ট এয়ার বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি করছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা রেসপন্স করেছে, জবাব দিয়েছে; কিন্তু টাকা দিচ্ছে না।’

অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানটির কাছে গত বছরের শেষ ছয় মাসে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আবগারি সাড়ে ৯ কোটি টাকা ও চলতি বছর আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকাসহ প্রায় ১২ কোটি টাকার আবগারি শুল্ক বকেয়া পড়ে গেছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি তা পরিশোধে গড়িমসি করে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া পরিশোধে একবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। পরে কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হয়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৫৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।