বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুযোগে সদ্ব্যবহারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   593 বার পঠিত

সুযোগে সদ্ব্যবহারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানি প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১৭ টাকা ১০ পয়সা। এরপর অনেকটা টানা বেড়ে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পাটির শেয়ারের দাম ৪৩ টাকা ২০ পয়সায় পৌঁছায়।

অর্থাৎ দেড় মাসেরও কম সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। শুধু প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স নয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে চারগুণ।

বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের এ দাম বৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেও উল্লেখ করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও থামেনি দাম বৃদ্ধির প্রবণতা। হঠাৎ করে শেয়ারের এমন ‘অস্বাভাবিক’ দাম বাড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিভিন্ন কোম্পানির মোটা অংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭টি বীমা কোম্পানির বড় অংকের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিপরীতে ১৩টি বীমা কোম্পানির কিছু শেয়ার কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সাতটি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ অপরিবর্তিত রয়েছে।

দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফাব্রুয়ারি মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছেন প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। জানুয়ারিতে কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল। যা ফেব্রুয়ারি শেষে দাঁড়ায় মাত্র ৩ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসে কোম্পানিটির ২৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

এরপরই আছে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। জানুয়ারিতে কোম্পানিটির ৪২ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। যা ফেব্রুয়ারি শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে।

ফেব্রুয়ারিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রির তালিকায় আরও রয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। জানুয়ারিতে কোম্পানিটির ৩৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। যা ফেব্রুয়ারি শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশে।

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অংকের শেয়ার বিক্রি করে দেয়া কোম্পানির তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স।

এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি শেষে মার্কেন্টাইলের ২৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে, যা জানুয়ারি শেষে ছিল ৩৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৩১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা বাংলাদেশ ন্যাশনালে ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিটি জেনারেলে ২৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ইষ্টল্যাল্ডে ৩১ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ফেডারেলে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং জনতায় ২০ দশমিক ২২ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করা অন্যান্য কোম্পানির চিত্র-

 

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেসব বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি বিক্রি করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিপরীতে শেয়ার দাম কম বাড়া কোম্পানির শেয়ার নতুন করে কিনেছেন। তবে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ও ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স এ ক্ষেত্রে বিপরীত ধারায় রয়েছে।

দাম বেড়ে চারগুণ হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ফেব্রুয়ারি মাসে এ দুটি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেনি। বরং দাম বেড়ে রেকর্ড অবস্থায় চলে আসার পরও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন। আর ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নতুন করে না কিনলেও বিক্রি করেনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

ফেব্রুয়ারি মাস শেষে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থৎ ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটির সাড়ে ৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ডিসেম্বর মাসের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৫ টাকা, যা টানা বেড়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৬৭ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ দুই মাসে শেয়ারের দাম বেড়ে চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

অপরদিকে, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ডিসেম্বর শেষ কার্যদিবসে ছিল ২৫ টাকা ১০ পয়সা, যা অনেকটা টানা বেড়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা। হঠাৎ করে শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটির ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করা অন্যান্য কোম্পানির চিত্র-

 

এদিকে যে সাতটি কোম্পানির শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে কেনেননি অথবা বিক্রি করেননি তার মধ্যে- এশিয়া ফ্যাসেফিক ইন্স্যুরেন্সের ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ২৩ শতাংশ, পূরবী জেনারেলের ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে যেসব বীমা কোম্পানি ব্যবসা করছে তাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। আবার আর্থিক প্রতিবেদনও খুব একটা স্বচ্ছ না। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ না করা সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে। এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করবেন- এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বেশকিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে শেয়ারের দাম এভাবে বাড়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা। যদি কোনো চক্র যোগসাজশের মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ায় তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, বীমা খাতের দু-একটি কোম্পানি বাদে বাকিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা খুব একটা ভালো না। এ কারণে সহজেই বাজারে শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা যায়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, এটা অস্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। এমন দামে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দেবেন- এটাই স্বাভাবিক। তবে শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পেছনে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাত আছে কিনা- তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।

সম্প্রতি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, বুঝতে পারছি না, এটা নিয়ে আমিও মাঝেমধ্যে চিন্তা করি, দাম এত বাড়ছে কেন? কারণটা কী? আমাদের ওই রকম কিছু এরা পাইছে কিনা? যার জন্য ওরা কেনাকাটা করছে…। হয়তো আস্থা পাচ্ছে- এজন্য নাকি, আল্লাহ্ই জানেন! শুধু সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স নয়, অনেক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ছে। পুঁজিবাজারের সঙ্গে যারা আছেন তারা হয়তো ইন্স্যুরেন্স খাতের দিকে একটু নজর দিয়েছেন, এজন্য দাম বাড়ছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৫৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।