রবিবার ১৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অডিটরের কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে নেই প্রভিডেন্ড ফান্ড নেই গ্র্যাচুইটি

আদম মালেক   |   শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   637 বার পঠিত

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে নেই প্রভিডেন্ড ফান্ড নেই গ্র্যাচুইটি

দেশের বীমা খাতে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। বেড়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ও সঞ্চয় তহবিল। এমন অগ্রগতির পরও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ প্রাপ্য দেয়া হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটিতে। বঞ্চিত করা হচ্ছে কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ড (পিএফ), গ্র্যাচুইটি ও সরকারের নির্দেশিত শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলের (ডব্লিউপিপিএফ) সুবিধা থেকে। ফলে শ্রম আইনের পাশাপাশি বিভিন্ন আইন ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ১৪ মার্চ, ২০০০ সালে নিবন্ধিত হয়। ডিএসই ও সিএসইতে তালিকাভুক্ত হয় ১৫ জানুয়ারি ২০০৬ সালে। দীর্ঘ ২২ বছর বীমা খাতে ব্যবসা করলেও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলে আইন অনুসারে বরাদ্দ না রাখায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি বীমা আইন ও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)’র আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। দেশের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল গঠন দূরের কথা উপরন্তু এটা কবে নাগাদ পরিপালন হবে সেই বিষয়ে নেই কোনো দিকনির্দেশনা। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ কোম্পানির কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে। ফলশ্রুতিতে বীমা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে মেধাবী জনগোষ্ঠী। অথচ প্রতিবছরই মুনাফায় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। যাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে তাদেরকেও বঞ্চিত করেছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মচারীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ধারাবাহিক এসব আইন লঙ্ঘনে প্রতিষ্ঠানটি বড় রকমের আর্থিক জরিমানার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১এর ১০৪ পৃষ্ঠা, নোট: ১.১১ অ্যাম্পøয়িজ বেনিফিট প্ল্যান এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি এখনো নিয়মিত কর্মচারীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি বেনিফিট চালু করতে পারেনি। যা আইএএস-১৯ এর লঙ্ঘন। বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮ ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫এ সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে “যে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রাজস্বের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে বা মোট পরিসম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি এবং বহি:দায় ১ কোটি টাকা” ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ বেতন ও অন্যান্য ভাতাদির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ড ফান্ড), গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি সুবিধা ভোগ করবেন। শ্রম আইন পরিপালনে ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিল (এফআরসি) ১৫ জুলাই, ২০২০ তারিখে জনস্বার্থে প্রজ্ঞাপন ১৭৯/এফআরসি/এফআরএম/প্রজ্ঞাপন/২০২০/২, তারিখ ২৩ আষাঢ় ১৪২৭/০৭ জুলাই ২০২০ কার্যকরে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করেনি। উল্টো বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) থেকে ডব্লিউপিপিএফ থেকে অব্যাহতি চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। সরকার এ অব্যাহতির ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শ্রম আইনের ২(৪১)(গ) ধারা অনুযায়ী বীমা কোম্পানি শ্রম আইন পরিপালনে বাধ্য। আবার ২০১৩ সালে শ্রম আইনের যে সংশোধনী হয়েছে সেখানে উপধারা ৬১(থ)-তে বীমা কোম্পানিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। আইনটি প্রণয়নের এক মাসের মধ্যে পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরেও তা করেনি সোনার বাংলা ইন্স্যুরন্স কর্তৃপক্ষ। কর্মচারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট শ্রম আইনের ধারা পরিপালন না করায় আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-১৯ লঙ্ঘিত হয়েছে। এছাড়াও ডব্লিউপিপিএফ পরিপালন না করায় কোম্পানির বহি:নিরিক্ষক জি কিবরিয়া এন্ড কোং সহ অন্যান্য অডিটররাও ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দিয়ে আসছে।

ডব্লিউপিপিএফ পরিপালনের বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, যে সব কোম্পানি ডব্লিউপিপিএফ পরিপালন করেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো স্টেকহোল্ডার যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয় তাহলে কন্টিনজেন্ট লায়াবিলিটি অ্যারাইজড হিসেবে কোম্পানি শ্রম আদালতের সরকারি কোষাগারে বিপুল অঙ্কের জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবে। জাতীয় সংসদে পাশকৃত শ্রম আইনে বলা ডব্লিউপিপিএফ পরিপালনে অবজ্ঞা ও অবহেলায় কিছু কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট/পর্ষদ অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে আসছে। যেহেতু এ আইন পালনের ক্ষেত্রে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার এখনও অব্যাহতি দেয়নি সেক্ষেত্রে এই আইন অবশ্যই পরিপালন করতে হবে। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স পুরনো কোম্পানি হওয়া সত্ত্বে এ শ্রম আইনের এ ধারা পরিপালন না করায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

শ্রম আইনের ২৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, উহার ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে জড়িত যে কেউ অথবা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য, ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনধিক এক লাখ টাকা এবং ব্যর্থতার প্রথম তারিখের পর হইতে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করে ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের জন্য সরকার নির্দেশ প্রদান করতে পারে। পুনরায় কোনরূপ আইনের বিধান অথবা সরকারের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাহার বিরুদ্ধে দ্বিগুন জরিমানা আরোপিত হবে।’ সে হিসেবে ফান্ড ও ট্রাস্টি বোর্ড গঠন না করায় ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছরে প্রথমে ১ লাখ জরিমানাসহ ও প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা হিসাবে এ পর্যন্ত কোম্পানির ওপরে জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি।

উল্লেখ্য, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন দেশের সুপরিচিত গণমাধ্যম-ব্যক্তিত্ব ও শিল্পপতি হওয়ার পাশাপাশি চা শিল্প, সিডিবিএল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সংগঠন, রেড ক্রিসেন্ট, লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ সর্বক্ষেত্রেই তাঁর পদচারণা। তিনি বীমা কোম্পানিগুলোর সহযোগী সংগঠন বিআইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি। তাঁর মতো এমন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও সরকার নির্দেশিত শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করা ও কোন ডিসক্লোজার না দেয়ায় আইনের লঙ্ঘন যা দেখে স্টেকহোল্ডাররা হতাশ।
পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও ডব্লিউপিপিএফ এর ব্যাপারে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাসসুল হুদার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পিএফ, গ্র্যাচুইটি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাণের দাবি। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে পিএফ, গ্র্যাচুইটি চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।