বুধবার ৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা সনদ জালিয়াতি

সোনালির সিইও রাশেদের নিয়োগ বাতিল করেছে আইডিআরএ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   162 বার পঠিত

সোনালির সিইও রাশেদের নিয়োগ বাতিল করেছে আইডিআরএ

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের আগাম নিয়োগ অনুমোদন বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গত ২৮ মার্চ ২০২৪ সোনালি লাইফের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরিত আইডিআরএ’র পরিচালক আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে (যার স্মারক নং ৫৩.০৩.০০০০.০৩২.১১.০১০.১৯.৪৬) রাশেদের নিয়োগ অনুমোদন বাতিলের কথা জানায় আইডিআরএ। এর আগে বয়সের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আইডিআরএ রাশেদ বিন আমানকে সিইও (সিসি) পদে ২ বছর ৮ মাস এবং একই সঙ্গে পূর্ণ সিইও পদে ৩ বছরের অগ্রিম নিয়োগ অনুমোদন দেয়। সে সময়ে তার নিয়োগ অনুমোদন পত্রে স্বাক্ষর করেন আইডিআরএ তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।

দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি এর আগে আমানের নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বীমা পেশায় তার অভিজ্ঞতার তথ্যে মিথ্যাচার, শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বীমা আইন ২০১০ এর প্রবিধানমালা ২০১২ অনুযায়ী সিইও’র বয়সের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তাকে সিইও (সিসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয় তুলে ধরা হয়। এ ঘটনা বীমা সেক্টরকে বিতর্কিত করেছিলো তখনই। অবৈধ নিয়োগ পেয়ে মীর রাশেদ বিন আমান অর্থ আত্মসাৎ, নৈতিক স্খলন আইডিআরএ’র আইন ও বিধি বিধান লঙ্ঘন করে জমি ক্রয়ে অনিয়মসহ জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। এগুলো আমলে নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে রাশেদ বিন আমানকে সিইও পদ থেকে বরখাস্ত করে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। এর পর দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকায় ‘‘সিইও’র অনুমোদন পেতে রাশেদ বিন আমানের জালিয়াতির আশ্রয়’’ শিরোনামে গত ৫ ফেব্রুয়রি একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই সংবাদ প্রকাশের পর সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ রাশেদ বিন আমানের জমা দেয়া শিক্ষা সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদ তদন্ত করে ভুয়া বলে প্রমাণ পায়। রাশেদ অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি’র স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সনদ টেম্পারিং করে জমা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামে একটি ভুয়া পেশাগত অভিজ্ঞতার সনদও টেম্পারিং করে রাশেদ। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও হতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে তিনি এ সকল ভুয়া সনদ জমা দিয়েছিলেন। সনদ জালিয়াতি ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় রাশেদের বিরুদ্ধে কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা নাঈমুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রামপুরা থানায় মামলাটি করেন (মামলা নং ১৭০৭(৫)/ ২তাং ২২-০৩-২০২৪)। এর আগে ১১ জানুয়ারি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম ইমরান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই থানায় আরও একটি মামলা ( মামলা নং ০৪ তাং ১১/১-২০২৪) করেন । এ ছাড়া ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসিকে সোনালী লাইফের পরিচালনা পষর্দ নিয়োগ দেয়। অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাশেদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সনদ জালিয়াতির মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, রাশেদ বিন আমান সিইও পদে নিয়োগ অনুমোদন পেতে আইডিআরএ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির স্নাতক (বিবিএ) ও ভুয়া স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সনদ জমা দেন। এই সনদের ভিত্তিতেই তাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র অনুমোদন দেয়। অস্ট্রেলিয়ার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ৪ মার্চ ২০২৪ রাশেদ বিন আমানের সনদের সত্যতার বিষয়ে জানতে চেয়ে সোনালী লাইফ থেকে ই-মেইল পাঠানো হয়। ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশেদ বিন আমানের বিবিএ সনদটি সঠিক হলেও এমবিএ সনদ ভুয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বরখাস্তকৃত সিইওর বিরুদ্ধে মামলা করে সোনালী লাইফ। মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, সিইও হতে ১৫ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা দেখানোর জন্যও প্রতারণা করে রাশেদ বিন আমান। এক্ষেত্রে তিনি জমা দিয়েছিলেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ।

রাশেদ বিন আমান ২০১৫ সালের মার্চে সোনালী লাইফের সিএফও পদে যোগ দিয়েছিলেন। পরে তাকে অতিরিক্ত এমডি পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। আইডিআরএ থেকে তাকে সোনালী লাইফের সিওই (সিসি) পদে নিয়োগ দেয়া হয় ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল। নিয়োগের চিঠিতে বলা হয়, ‘আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত দলিলাদি ভবিষ্যতে অসত্য বা সঠিক নয় বলে প্রমাণ হলে তার দায়ভার কোম্পানি ও সিইওকে বহন করতে হবে। সেক্ষেত্রে এ নিয়োগ অনুমোদন বাতিল বলে গণ্য হবে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একাধিক পরিচালক জানান, সিইওর ভুয়া সনদের বিষয়টি তাদের জানার সুযোগ ছিল না। তার সনদ ভুয়া হওয়ার অর্থ হলো তার নিয়োগটি শুরু থেকেই অবৈধ। সে হিসেবে রাশেদ বিন আমান কোম্পানি থেকে বৈধ যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন, সেগুলোও ফেরত দিতে হবে। মামলার এজাহারে সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে সিইও রাশেদ বিন আমানের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনাগুলো সামনে আসতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। কমিটির তদন্তে কোম্পানির প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর আগে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনারস’-এর মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নিরীক্ষা চালানো হয়। নিরীক্ষায়ও সিইও রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে ৬৩ ধরনের অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২৭ জুন সিইও রাশেদ বিন আমানের অনুকূলে কোম্পানির মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাব থেকে ১ কোটি ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা পে অর্ডার করা হয়। যদিও কোম্পানির নথিতে দেখানো হয়, ‘মেয়াদি ঋণ’ ও ‘এসওডি’ দায় পরিশোধের জন্য এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। তদন্ত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখেছে, উত্তোলনকৃত অর্থ দিয়ে সোনালী লাইফের কোনো ঋণ বা দায় সমন্বয় করা হয়নি। বরং সিইও রাশেদ পুরো অর্থই আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ভুয়া বিল তৈরি করে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। যেমন কোম্পানির নথিতে দেখানো হয়, ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে থাকা কোম্পানির হিসাব থেকে র‌্যানকন মোটরসের নামে ৪৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। যদিও এ টাকা র‌্যানকন মোটরসের হিসাবে না গিয়ে সিইও রাশেদ বিন আমানের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। আবার ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর কোম্পানির একই ব্যাংক হিসাব থেকে ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ অর্থের পুরোটাই সিইও আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু কোম্পানির নথিতে ভুয়া একটি খাত দেখানো হয়েছে। সোনালী লাইফের নিজস্ব আইন অনুযায়ী, কোম্পানির হিসাব বিভাগ থেকে নথিপত্র ছাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলন করার বিধান রয়েছে। যদিও সিইও নিজেই এ আইন ধারাবাহিকভাবে ভঙ্গ করেছেন। কোনো প্রকার নথিপত্র ছাড়াই হিসাব বিভাগ থেকে ২০২০ সালে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার, ২০২১ সালে ৬০ লাখ ৯৫ হাজার, ২০২২ সালে ১ কোটি ২১ লাখ ও ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। নগদ উত্তোলনকৃত এসব অর্থ কোম্পানির হিসাব বইয়ে নথিভুক্তও করা হয়নি। রাশেদ বিন আমান কোম্পানি থেকে কোনো লভ্যাংশ কিংবা কমিশন নিতে পারবেন না এমন শর্তেই আইডিআরএ থেকে তাকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেয়া এ শর্তেরও বরখেলাপ করেছেন তিনি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর কোম্পানিটির ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হিসাব থেকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়। কোম্পানির নথিতে এ অর্থ ব্যয়ের খাত দেখানো হয়েছে ‘রাশেদ বিন আমানের বার্ষিক প্রণোদনা পরিশোধ’। আবার ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি একই ব্যাংকের হিসাব থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। কোম্পানির নথিতে এ অর্থ ব্যয়ের খাত দেখানো হয় ‘নির্বাহীর বার্ষিক লক্ষ্য পূরণ প্রণোদনা পরিশোধ’। পুঁজিবাজার থেকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন রাশেদ বিন আমান। প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ জুন কোম্পানির টাকায় সোহানা আক্তার নামে কানাডা প্রবাসী এক নারীর নামে ৩০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। ওই নারী রাশেদ বিন আমানের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী। একইভাবে সিইওর অন্য স্বজনের নামেও শেয়ার কেনা হয়। প্রতারণামূলক বেনামি শেয়ার কেনায় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। আইডিআরএ থেকে অনুমোদিত বেতন-ভাতা অনুযায়ী, সিইও হিসেবে রাশেদ বিন আমান ২০২০-২৩ চার বছরে ঈদ বোনাসসহ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬১ হাজার ৯৮০ টাকা বেতন-ভাতা নিয়েছেন। যদিও তিনি এ চার বছরে প্রণোদনাসহ সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ৪ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। ভুয়া নথিপত্র বানিয়েও সোনালী লাইফের হিসাব বিভাগ থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা তুলে নেন রাশেদ বিন আমান। এ টাকা গ্যালাক্সি হলিডেজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ দেখানো হয়। যদিও গ্যালাক্সি হলিডেজের নীতি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি নগদে কোনো অর্থ গ্রহণ করে না। তদন্ত কমিটি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে থাকা রাশেদ বিন আমানের ব্যক্তিগত একটি হিসাব বিবরণী উত্তোলন করে। ওই ব্যাংক হিসাবে ২০১৮ সালে ৬১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭১, ২০১৯ সালে ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৮, ২০২০ সালে ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৭০০, ২০২১ সালে ৮৬ লাখ ৮২ হাজার ৬১৪, ২০২২ সালে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫৬ ও ২০২৩ সালে ২ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১২ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এ ব্যাংক হিসাবটি কখনই রাশেদ বিন আমানের বেতন-ভাতা জমার কাজে ব্যবহার হয়নি। অর্থাৎ শুধু এই একটি হিসাবেই মাত্র ছয় বছরে সাড়ে ৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন তিনি।

সিইও পদে থাকা অবস্থায় ফাতেমা তামান্না সুইটি নামে কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান রাশেদ বিন আমান। পরে ওই কর্মচারীকে বিয়েও করেন। বিষয়টিকে সিইওর নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি কোম্পানির আইন ভঙ্গ হিসেবে দেখছে তদন্ত কমিটি। কারণ সিওই হিসেবে অধীনস্থ কর্মচারীর সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া সোনালী লাইফের মানবসম্পদ রীতিনীতির বিরুদ্ধ। সোনালী লাইফের একজন পরিচালক নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থে রাশেদ বিন আমান বিলাসী জীবন যাপন করেছেন। অভিজাত একটি আবাসন কোম্পানি থেকে গুলশানে সাত হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এটি কিনতে তার ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি টাকা। ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের পোর্শে টাইকান ও ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় মার্সিডিজ জিএলই কিনেছেন। আবার কোম্পানি থেকে আত্মসাৎকৃত বিপুল অর্থ অস্ট্রেলিয়ায় পাচারও করেছেন।’ তবে কারাগারে যাওয়ার আগে আইডিআরএ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) বিভিন্ন সংস্থার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন রাশেদ বিন আমান। সে অভিযোগপত্রে তিনি সোনালী লাইফের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অভিযোগ তোলেন। শিল্প উদ্যোক্তা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মেয়ের জামাই ছিলেন রাশেদ বিন আমান।

খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, ভূয়া শিক্ষা সনদ ও কর্মঅভিজ্ঞতা সনদ, রাশেদ বিন আমানের বয়স ৩৮ হওয়ার পরেও সিইও (সিসি) হিসেবে আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি তাকে অগ্রিম মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে বীমা খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ও সাবেক পরিচালক (উপসচিব) মো. শাহ আলম সিন্ডিকেট। এই নিয়োগ অনুমোদন পেতে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, তৎকালীন আইডিআরএ’র সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব অপকর্মের মূলোৎপাটন করতে পারলে বর্তমানে আইডিআরএ দায়িত্বরত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইমেজ ফিরবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

পাশাপাশি বীমা আইন ২০১০ এর অপরাধ ও দন্ড অধ্যায়ের ধারা ১৩১-এ দলিল, বিবরণী, হিসাব, রিটার্ন ইত্যাদিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের কারণে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লাখ টাকা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা আছে। বীমা আইনে রাশেদ বিন আমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে, রাশেদের মত আর কেউ শিক্ষাসনদ জালিয়াতি করে আইডিআরএ বরাবর দাখিলের সাহস পাবে না বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।