নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৭ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 369 বার পঠিত
দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এখনো এপ্রিলের বেতন পায়নি। এদিকে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হলেও পোশাক মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে বকেয়া বেতন-ভাতা, শতভাগ বেতন-বোনাস ও মে মাসের আগাম বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা। এই আন্দোলন ভয়াবহ রূপ ধারণের আশঙ্কা করছে শিল্প পুলিশ।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঈদ সামনে রেখে মারাত্মক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ডিএমপি ও ডিএমপির বাইরে মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কারখানা। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার কারখানায় এপ্রিলের বেতন হয়নি। ঈদের আগে মে মাসের বেতন দিতে রাজি নন মালিকরা। এখন আক্রান্ত শ্রমিকরা বিক্ষোভে অংশ নিলে তাদের মাধ্যমে আরও অনেকে করোনায় সংক্রমিত হওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কথা ছিল শুধু রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো খুলবে, যাদের শিপমেন্ট বা অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু গণহারে প্রায় সব কারখানা খোলা হয়েছে। এখন এসব কারখানার অধিকাংশই সময়মতো বেতন-ভাতা দিচ্ছে না।
বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বাইরে ৭ হাজার ৬০২টি কারখানার মধ্যে এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৫৫২টি কারখানা। এদের মধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৮৮২টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ হয়েছে ৭৪০টির, বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত ১ হাজার ১০১টির মধ্যে বেতন হয়েছে ৩১০টির, বিটিএমএ সদস্যভুক্ত ৩৮৯টির মধ্যে বেতন হয়েছে ১৪২টির এবং অন্যান্য কারখানার বেতন হয়েছে ২৮৩টির। এছাড়া ৩৩৪টি কারখানা মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি। যেসব কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে তাদের বেশির ভাগই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বেতন দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে আরও ৮ শতাধিক কারখানা রয়েছে, যার বেশির ভাগ বেতন দেয়নি।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধিমালা অনুযায়ী, শ্রমিকরা মাসের প্রথম ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মাসিক মজুরি পাবেন। এ ছাড়া কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর চাকরি পূর্ণ করলে সর্বোচ্চ মূল বেতনের সমান দুটি উৎসব ভাতা পাবেন।
শিল্পের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গত বছর কারখানার মালিকরা যে হারে উৎসব ভাতা দিয়েছেন, এবারও তাই দেবেন। তবে যেসব কারখানা পুরোটা দিতে পারবে না তারা ঈদের আগে অর্ধেক দেবে। বাকিটা সক্ষমতা অনুযায়ী পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে।
বেতন দিতে এখনো দেরি হওয়া ও উৎসব ভাতার বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমার কারখানার শ্রমিকের বেতনের কাগজপত্রসহ টাকা মোবাইল ব্যাংকের কাছে গত সপ্তাহে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু তাদের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনায় এখনো শ্রমিকরা টাকা পায়নি। সবারই এমন অবস্থা। আজকের মধ্যে শ্রমিকরা টাকা না পেলে অবস্থা আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রণোদনা ছাড়া সবাই বোনাস দিতে পারবে না। সবার সেই সক্ষমতা এখন নেই।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে বেতনে দেরি হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটররা।
দেশের অন্যতম মোবাইল ব্যাংক বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, টাকা দিতে দেরি হওয়ার বিষয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এটা ভিত্তিহীন। আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক ফান্ড (টাকা) ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। হয়তো এমন হতে পারে যে ওই কারখানার এখনো লোন পাস হয়নি।
সরকার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে এপ্রিলে বন্ধ থাকা শ্রমিকদের বেতন বাবদ মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। এর ৬০ শতাংশ চলতি মাসে এবং বাকি ৫ শতাংশ মে মাসের বেতনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়া এপ্রিলে যে কদিন শ্রমিক কাজ করেছেন, ওই সময়ে শতভাগ বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। শ্রমিকের প্রতিনিধিরা এই নির্দেশনা মানলেও বন্ধ থাকাকালীন শতভাগ বেতন চাচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। শতভাগ বেতন ও বোনাসের দাবিতে ১০ মে বিজিএমইএ সহসভাপতি এম এ রহিমের মালিকানাধীন ডিবিএল গ্রুপে ভাঙচুর চালান শ্রমিকরা। এরপর থেকে একই দাবিতে নিয়মিত বিভিন্ন কারখানায় আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের বেতনের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে বিজিএমইএর এক নেতা বলেন, গত সপ্তাহ থেকেই আমাদের বেতন পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ব্যাংকিং জটিলতায় শ্রমিকদের হাতে বেতন পৌঁছাচ্ছে না। আমরা এখনো আশাবাদী, ২০ মের মধ্যে সব শ্রমিক এপ্রিলের বেতন পাবেন। এছাড়া যেহেতু বোনাসের একটা সুরাহা হয়েছে তাই শ্রমিকরাও একটু ধৈর্য ধরবেন বলে আশা করছি।
Posted ৪:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan