আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ | ২৮ মে ২০১৯ | ২:৩৬ অপরাহ্ণ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে কৃষককে বাঁচাতে বীমা ব্যবস্থা চালু করা খুবই ভালো উদ্যোগ। সারাদেশে এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে হবে। এরজন্য সরকার, বেসরকারী সংস্থা ও ভুক্তভোগী সবারই সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারের সিএ ভবনে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অক্সফামের সহায়তায় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বন্যার ধরন একেক সময় একেক রকম হয়। সে অনুযায়ী বীমা পরিকল্পনা করতে হবে। আর বীমার সুবিধা পেতে হলে দুর্যোগের তথ্য থাকতে হবে। মৌসুমি বন্যার পূর্বাভাস একেবারে তৃণমূলে নিয়ে যেতে হলে সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ দরকার।
বিশ্বব্যাংকের আবহাওয়া বিষয়ক পরামর্শ শামীম হাসান ভূঁইয়া বলেন, এবার কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না। আগামী বছর তারা যদি সারাদেশে তামাকের চাষ শুরু করেন, তাহলে কী হবে? তিনি আরো বলেন, দুর্যোগের পর কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়। তবে ওই প্রণোদনা সঠিক লোক পাচ্ছেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে বীমা একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে। তাই সরকারের এই খাতে ভর্তুতি দেয়া উচিত।
ইনিস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক এম মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেনী হচ্ছে কৃষক। তাদের বীমার সুবিধা দেয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এটা বুঝতে হবে তাদের বীমার প্রিমিয়াম দেয়ার সক্ষমতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষিখাতে ৫০ শতাংশের বেশি ভর্তুকি দেয়া হয়। বাংলাদেশেও সরকারের ভর্তুকি ছাড়া বমিা ব্যবস্থা টেকসই করা সম্ভব নয়।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. জে আজিম বলেন, সরকার বন্যার সময কোটি কোটি টাকা ত্রাণ হিসেবে খরচ করে। এখান থেকে কিছু টাকা বীমার প্রিমিয়াম দেয়া হলে সহজ হয়ে যায়। সরকারী-বেসরকারী যৌথ ব্যবস্থায় কৃষকের বীমা সুবিধা চালু করতে পারলে ভালো হয়।
গ্রীন ডেলটা ইন্স্যুরেন্সের এম.ডি ফারজানা চৌধুরী বলেন, ভারত ও শ্রীলংকায় ৮০ শতাংশ প্রিমিযাম দেয় সরকার। বাংলাদেশে জাতীয় দুয়োগ তহবিল করে কৃষককে বীমার সহায়তা দেয়া যায়। তিনি আরো বলেন, দুর্যোগের সঠিক তথ্য পাওয়াও একটি বড় সমস্যা। সরকার তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর জন্য সহজ হয়ে যায়।
পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্স এর এম.ডি মনিরুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন একটি বড় বিষয়। কৃষকের বীমার অর্থ দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
দুর্যোগ প্রস্ততি বিশেষজ্ঞ পলাশ মন্ডল বলেন, বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থা ত্রাণ নির্ভর। চাল, ডাল ও ঢেউটিন দেয়া হয়। এথেকে বীমা নির্ভর হতে পারলে ভালো হয়। এরজন্য মানুষকে বীমার সুবিধা বোঝাতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর সিদ্দিকুল ইসলাম খান বলেন, ত্রাণ মন্ত্রনালয় প্রতিবছর ৬০০-৭০০ কোটি টাকা জরুরী ত্রাণ দেয়। এর একটা অংশ কৃষকের বীমার প্রিমিয়ামে ব্যয় করতে পারে। অন্য মন্ত্রনালয়েও অনুরূপ বরাদ্দ রয়েছে। সেসব মন্ত্রানলয়কেও যুক্ত করা যায়।
বিটিভি’র মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, কৃষি মন্ত্রনালয় এখন ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করে। এর ৬ হাজার কোটি টাকা সারের ভর্তুকিতে ব্যয় হয়। ভর্তুকি থেকে কিছু অর্থ কৃষকের বীমার কাজে ব্যবহার করা যায়।
বীমা কোম্পানীগুলো কনসোর্টিয়াম করে সারা দেশে তা ছড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন অক্সফামের ইকোনমিক জাস্টিস অ্যান্ড রেজিলিয়েন্সের ব্যবস্থাপক খালিদ হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২:৩৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed