ডেস্ক রিপোর্ট | রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1650 বার পঠিত
বাজার বুঝতে না পারায় বিশ্বের অনেক সফল প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এমন ১০টি ব্যর্থ প্রকল্প তুলে ধরা হলো-
১. এয়ারবাস-৩৮০: এয়ারবাস থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, তারা তাদের সবচেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডবল ডেকার বিমান এয়ারবাস-৩৮০ উৎপাদন বন্ধ করে দেবে।
ইউরোপীয় প্রস্ততকারক ২০০৭ সালের অক্টোবরে এই জায়েন্ট উড়োজাহাজটি প্রথম চালু করে। ছোট আকারের আরও কার্যকর মডেলগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকেই তারা চ্যালেঞ্জ করে আসছিল।
এয়ারবাস-৩৮০ এর বিকাশে আড়াই হাজার কোটি ডলার ব্যয় করলেও এই বিমানটি প্রত্যাশিত মুনাফা করতে পারেনি।
২. পেপসি ব্লু: ২০০২ সালে বাজারে আসা পেপসি ব্লু অনেকটা বেরি-স্বাদযুক্ত পানীয় ছিল। এই পণ্যটির প্রচার ও প্রসারে প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরণের কমতি রাখেনি। কিশোর-কিশোরীদের আকৃষ্ট করতে এর প্রচারে পপ গায়িকা ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে যুক্ত করা হয়েছিল।
তবে পেপসি ব্লু-এর সমস্যা শুরু হয় তাদের নীল রংটি নিয়ে। কারণ এই নীল রং আনতে তারা যে ব্লু-ওয়ান রং ব্যবহার করে, সেটা অনেক দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া তেমন একটা বিক্রি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ সালেই পেপসি ব্লু রাখা বন্ধ করে দেয়। তবে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে পেপসি ব্লু এখনও পাওয়া যায়।
৩.গ্যালাক্সি নোট-সেভেন (স্যামসাং): ২০১৬ সালের আগস্টে স্যামসাং এর গ্যালাক্সি নোট-সেভেন বাজারে আসে। স্যামসাংয়ের বড় পর্দার এই সংস্করণটি নিরাপত্তা সমস্যাজনিত কারণে ব্যর্থতার মুখে পড়েছিল।
নোট সেভেন হ্যান্ডসেটটির একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বিমানের ভেতরে ফোনটির বিস্ফোরণ, এর নিরাপত্তার বিষয়টিকে উদ্বেগের মুখে ফেলে। তার দুই মাস পরেই স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫ লাখ ফোন দ্রুত প্রতিস্থাপনের আহ্বান জানানো হয়।
স্যামসাং জোর দিয়ে বলেছে যে তাদের প্রতিস্থাপিত ডিভাইসগুলো নিরাপদ ছিল, তবে তারপরেও ওই ফোনের ব্যাটারিগুলি অত্যধিক গরম হয়ে গেলে পণ্যটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
৪. মাইক্রোসফট এর জুন: অ্যাপল তাদের পোর্টেবল মিউজিক প্লেয়ার আইপড দিয়ে বাজার দখল করছে দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফট নিজস্ব পরিসর তৈরি করে দ্য জুন নামের মিউজিক প্লেয়ার। দ্য জুন সেইসব ফিচারগুলো যুক্ত করেছিল যেগুলো কিনা আইপডে ছিল না।
যেমন কোনো তারের সাহায্য ছাড়াই অন্য ব্যবহারকারীদের সঙ্গে গান শেয়ার করা। কিন্তু তারপরও এই পণ্যটি বাজারে অ্যাপলের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। এ কারণে ২০১১ সালেই এটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
৫. সেগওয়ে: দুই চাকার ব্যক্তিগত এই বাহনটি ২০০১ সালে বাজারে আনা হয়। এটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের লাইভ টিভিতে। অনেকে একে বিপ্লবী উদ্ভাবন হিসাবে প্রশংসা করে। এ কারণে নির্মাতারা প্রতি সপ্তাহে ১০ হাজার ইউনিট বিক্রির স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু খুব শীঘ্রই তারা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন: সাত বছরে সেগওয়ে বিক্রি হয় ৩০ হাজারেরও কম। উচ্চমূল্য এবং উচ্চাশা পণ্যটির গতি থামিয়ে দেয়। আজকাল সেগওয়ে মূলত নিরাপত্তা এবং জরুরী কর্মীরা ব্যবহার করে থাকেন।
৬. কুইকস্টের: নেটফ্লিক্সের স্ট্রিমিং ব্যবসাটি ২০১১ সালে বন্ধ করা হয়েছিল যখন সিইও রিড হেস্টিংস মনে করেছিলেন যে তিনি তার ডিভিডি ভাড়ার সার্ভিসটি দিয়েই নিরাপদে ব্যবসা করতে পারবেন। এভাবেই জন্ম হয় কুউইকস্টেরের। কিন্তু নেটফ্লিক্স থেকে এটি আলাদা করার সিদ্ধান্ত এবং এরজন্য পৃথক সাবস্ক্রিপশন চার্জ এক মাসের মাথায় এই ধারণাটিকে আছড়ে ফেলে। প্রায় ৮ লাখ গ্রাহক তাদের নেটফ্লিক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ বাতিল করে দেয়।
৭. নাইকির ফিউলব্যান্ড: খেলার পোশাকের জায়েন্ট নাইকি ২০১২ সালে তার পরিধানযোগ্য ফিটনেস ট্র্যাকার বাজারে আনে। কিন্তু সমালোচক এবং গ্রাহক কোন পক্ষই এই পণ্যটির প্রশংসা করেনি। এটি প্রতিদ্বন্দ্বী ফিটবিটকে টেক্কা দিতে ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালে নাইকি ফিউলব্যান্ডের উৎপাদন বন্ধ করবে বলে ঘোষণা দেয়।
৮. আইবো (সোনি): সোনির রোবোটিক কুকুরটি ১৯৯৯ সালে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজারে এসেছিল: এটি ১০০টি আদেশের প্রতিক্রিয়া দিতে এমনকি কথা বলতে পারতো। কিন্তু প্রথম তিন হাজার ইউনিট এক ঘণ্টারও কম সময়ে নষ্ট হয়ে গেলেও আইবোসে আর লাভ করতে পারেনি।
পরে সোনি পণ্যটির উৎপাদন ২০০৬ সালেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গত বছর এটি সীমিত পরিসরে বাজারে ফেরার কথা ঘোষণা করলেও প্রতি ইউনিটের দাম তিন হাজার ডলার ধরায় সেটা পুনরায় সমালোচনার মুখে পড়।
৯. ইভিওয়ান (জেনারেল মোটর): এলোন মস্ক বা টেসলা নয়: বিশ্বের সর্বপ্রথম বিপুল উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল জেনারেল মোটরসের ইভিওয়ান। যেটা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৬ সালে বাজারে আসে। তবে সেখানে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ছিল। গাড়িটি ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে কাজ করতে পারেনি – এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের দুটি রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া ও অ্যারিজোনাতে পাওয়া যেতো।
চার বছরে জেনারেল মোটরস মাত্র ১১০০ ইউনিট বিক্রি করতে পেরেছিল। পরে ১৯৯৯ সালে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়।
১০. ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি (ডোনাল্ড ট্রাম্প): বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২০০৫ সালে তার শিক্ষাগত উদ্যোগ চালু করেছিলেন, রিয়েল এস্টেট শিল্পে মানুষকে অর্থ উপার্জনের কৌশল শেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা প্রতারণার অভিযোগ এবং জালিয়াতির মামলার করলে ২০১০ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৭ সালের মার্চে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প আড়াই কোটি ডলারের বিনিময়ে মামলাটি ফয়সালা করে ফেলে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
Posted ৩:৩২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed