
| বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 947 বার পঠিত
লোকসান কাটিয়ে ২০১৭ সালে মুনাফায় ফেরে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার তা দাঁড়িয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। এ সময়ে লোকসানি শাখা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে ব্যাংকটি। এক বছরেই ৭৬ শতাংশ লোকসানি শাখা কমেছে রূপালী ব্যাংকের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় চমকই দেখিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটি। লোকসানি শাখা কমানোর দিকে বাড়তি জোর দেওয়ার কারণেই গতি এসেছে রূপালী ব্যাংকে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ আর প্রভিশনের জেরে ২০১৬ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছিল রূপালী ব্যাংক। ২০১৭ সালে পরিচালনা-ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকটি। ওই বছরে প্রায় ৫৪১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল রূপালী ব্যাংক, যা ব্যাংকটির ৪৫ বছরের মধ্যে পরিচালন মুনাফার সর্বোচ্চ রেকর্ড। সর্বশেষ ২০১৮ সালে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি।
আলাপকালে রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আমরা লোকসান কমানোর জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি নতুন করে যেন কেউ খেলাপি না হয়, সেদিকেও নজর দিয়েছি। দেশজুড়ে সব ব্র্যাঞ্চের কর্মকাণ্ড নিবিড় মনিটরিং, সময়োপযোগী পরিকল্পনা-সিদ্ধান্ত আর সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি।’
এদিকে মুনাফায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে দু’বছরে লোকসানি শাখা কমানোর ক্ষেত্রেও সাফল্য পেয়েছে রূপালী ব্যাংক। ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা আটটিতে নেমে এসেছে। এর আগের বছরেও ব্যাংকটির ৩৩টি শাখা লোকসানে ছিল। এ হিসেবে এক বছরেই রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৭৬ শতাংশ কমেছে। এর আগে ২০১৬ সালে ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৪৩টি। এ হিসেবে গত দুই বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ১৩৫টি শাখা লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে।
লোকসান থেকে বড় অঙ্কের মুনাফায় ফেরা ও লোকসানি শাখা কমানোকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা। রূপালী ব্যাংকের সাফল্য বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সরকারের একসময়ের লোকসানি ব্যাংকটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে জেনে খুব ভালো লাগছে। আমার মনে হচ্ছে, দেরিতে হলেও রূপালী ব্যাংক একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পেরেছে। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে, এমনটি আশা করছি।’
একইভাবে রূপালী ব্যাংকের সাম্প্রতিক সাফল্যকে ব্যাংক খাতের জন্য ‘সুখকর’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেছেন, ‘রূপালী ব্যাংকের সাফল্যের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হলে অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও এগিয়ে যেতে পারবে। তাহলে স্বচ্ছতা-জবাবহিদিতা, সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ওপর ভর করে সেগুলোও দুর্দিন কাটিয়ে শক্ত অবস্থানে যাবে।’
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, জাল-জালিয়াতির অভিযোগ, খেলাপি ঋণের দায় ও লোকসানের কারণে ২০১৬ সালের আগস্টে রূপালী ব্যাংকে বড় পরিবর্তন আনে অর্থ মন্ত্রণালয়। ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। এরপর খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি, এসএমই ঋণ বিতরণ, সঞ্চয়ের সুদ কমানো ও পরিচালন ব্যয় কমানোসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর ফলে সাফল্যের মুখ দেখছে রূপালী ব্যাংক। শুরুতে খেলাপি ঋণ আদায়ের দিকে জোর দেওয়ার পর লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরে আসে ব্যাংকটি। আর গত বছরে ব্যাংকটির সবচেয়ে বেশি নজর ছিল লোকসানি শাখার দিকে। এজন্য তৃণমূলের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা প্রধান কার্যালয় থেকে মনিটরিংও করা হয়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণের সঙ্গে ব্যাংকটির লোকসানি শাখাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ারই সরকারের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে দুই দশমিক ৯৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ছয় দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১৭ সালে বিনিয়োগকারীদের ২৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে ব্যাংকটি। লোকসান থেকে মুনাফায় ফেরায় ব্যাংকটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে, যে কারণে দুই বছরে রূপালী ব্যাংকের শেয়ারদরও বেড়েছে। গতকাল রূপালী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার ডিএসইতে ৪২ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে, যা এর আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। পরিচালন মুনাফায় থাকায় এবারও বড় অঙ্কের মুনাফার প্রত্যাশা করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সে কারণেই আবারও আগ্রহী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed