শনিবার ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অডিট ফার্ম নিষিদ্ধ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো

আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   708 বার পঠিত

অডিট ফার্ম নিষিদ্ধ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো

অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে অডিট ফার্মগুলো নিষিদ্ধ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অডিট ফার্মের নিরীক্ষিত দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো শাস্তি হয়নি বহাল তবিয়তেই আছে। তাই কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে নতুন করে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশ (এফআরসি)।

এফআরসি সূত্র জানায়, বিদ্যামান আইনে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এই আইনে দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো অডিট ফার্মকে ৫ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। কিন্তু অডিট ফার্মগুলো দণ্ডিত হলে আপিল করার জন্য এই সেক্টরে কোনো আদালত নেই। সেক্ষেত্রে ফার্মগুলো যদি প্রচলিত আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। সে কারণে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত অডিট ফার্মগুলোকে জেল-জরিমানা হচ্ছে না। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করারও সুযোগ নেই। কোম্পানিগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এজন্য নতুন করে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অংশীজনের সাথে বৈঠক করছে এফআরসি।

এ প্রসঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ্ ভূঁইয়া বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের কার্যক্রম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কাউন্সিলের আইনে অনিয়মে জড়িত অডিট ফার্মের জন্য অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও একটি আপিল কর্তৃপক্ষের অভাবে এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অনিয়মে জড়িত কোম্পানিকে দণ্ডিত করার বিধান নেই। তাই এ আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে এফআরসি।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার জন্য যোগ্য অডিট ফার্মের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোং, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, শফিক বসাক অ্যান্ড কোং, আহমদ অ্যান্ড আখতার, আহমেদ মাসুক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং, পিনাকী অ্যান্ড কোং, আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং, মালেক সিদ্দিকী ওয়ালী, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং, এ মতিন অ্যান্ড কোং, কেএম আলম অ্যান্ড কোং, আর্টিসান, এ হক অ্যান্ড কোং, ফেমস অ্যান্ড আর, হুদা হোসাইন অ্যান্ড কোং, রহমান আনিছ অ্যান্ড কোং, এ বি সাহা অ্যান্ড কোং, ইসলাম জাহিদ অ্যান্ড কোং, মিজান ইসলাম অ্যান্ড কোং, খান আইয়ুব, শফিক মিজান রহমান অগাস্টিন, হাবিব সরোয়ার ভূঁইয়া অ্যান্ড কোং, রহমান কাসেম অ্যান্ড কোং, জে আর চৌধুরী অ্যান্ড কোং, মোহাম্মাদ আতা করিম অ্যান্ড কোং, আখতার আমির অ্যান্ড কোং, নূরুল আজিম অ্যান্ড কোং, দেওয়ান নজরুল ইসলাম অ্যান্ড কোং, আহসান জাকির অ্যান্ড কোং, আশরাফ উদ্দিন অ্যান্ড কোং, তখতিয়ার হুমায়ন অ্যান্ড কোং, আশরাফ উল হক নবী অ্যান্ড কোং এবং রহমান মুস্তাফিজ হক অ্যান্ড কোং। এ ছাড়া গত বছর নাম না থাকলেও এবারে যোগ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে আহসান মঞ্জুর অ্যান্ড কোং এবং চৌধুরী ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোং।

এফআরসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষিদ্ধ ৩৬টি অডিট ফার্মের মধ্যে ৬টি ফার্মের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেনি এফআরসি। ফার্মগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুপারিশ করবে এফআরসি। তাছাড়া এক ডজন ফার্মের অনিয়ম বিপদসীমার উপরে। তাই এসব ফার্মের অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড হওয়া উচিত বলে মনে করে অডিট ফার্ম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশ।

নিষিদ্ধ এসব অডিট ফার্মকে যেসব কোম্পানি নিরীক্ষা করেছে সেসব কোম্পানি বহাল তবিয়তেই আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দণ্ডিত হয় না। তাই থামছে না দুর্নীতি।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রচলিত আইনে অনেক দুর্বলতা আছে। এ কারণে অডিট ফার্ম স্বল্পসময়ের জন্য নিষিদ্ধ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অনিয়মে জড়িত কোম্পানিগুলো। তাই ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল আইনকে সময়োপোযোগী করতে হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর তা বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৯(১) ধারার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে থাকে। তালিকাভুক্ত অডিট ফার্ম ব্যাংকের বার্ষিক হিসাব বিবরণী নিরীক্ষার পাশাপাশি নগদ সহায়তা ছাড়ের অনাপত্তি দিয়ে থাকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব ধরনের নিয়ম পরিপালন করে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে কিনা বা নগদ সহায়তা ছাড় করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব এসব অডিট ফার্মের। এ জন্য এসব অডিট ফার্ম একটি ফি পেয়ে থাকে। কোনো অডিট ফার্ম ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে দুই বছর নিষিদ্ধ করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11193 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।