বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৫ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 242 বার পঠিত
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর কর্মসংস্থান হাত ধরে চলে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যেভাবে সাজাতে হয়, সেভাবেই আমি কাজটি করে যাচ্ছি। এখন সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে কথা এসেছে। সেগুলো বালিশের নিচে টাকা রাখার মতো। সেগুলোর গুণক প্রভাব (মাল্টিফ্লাইয়ার ইফেক্ট) নেই। সেগুলো মূলধারার অর্থনীতিতে আসে না। সেগুলোকে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, সেই কাজটি আমরা করেছি সিস্টেমের মাধ্যমে। জোরপূর্বক কিছু করতে চাইনি। সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্টগুলো ছিল এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। এ দেশের পেনশনারদের জন্য। এখন আমরা দেখেছি এটা বিভিন্নভাবে ডিস্টরশন হচ্ছে। যাদের জন্য এ স্কিম করা হয়েছে, তারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অন্যরা কোটি কোটি টাকার সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট কেনা শুরু করল। এটি আমরা চাইনি। সেজন্য ব্যাংকিং খাতের সেভিংস ইনস্টু্রমেন্ট আমরা পুরোটাই অটোমেশন করতে পেরেছি। এখন আমরা জানি, কারা সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্টগুলোর মালিক। তারা চাইলেও সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। এটা খুব ভালো লিমিট। এতে ভালো সুদ পাওয়া যাবে। আর কিছুদিন পর আমরা পোস্টাল সেভিংস অটোমেশন সম্পন্ন করতে পারব। সেখানেও বাড়ানো ছাড়া কিছুই কমানো হয়নি।
অনেকেই পুঁজিবাজার নিয়ে কথা বলেছেন। পুঁজিবাজার বিষয়ে আমার করণীয় খুব স্পষ্ট। পুঁজিবাজার উঠবে-নামবে—এটা নিয়ে আমি কাজ করি না। আমার কাজ হলো এ দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা, শক্তিশালী করা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর প্রতিফলন পড়বে পুঁজিবাজারে। আমার কাজটি হলো সামষ্টিক অর্থনীতির গতিধারা শক্তিশালী রাখা এবং এর হাত ধরে সব অর্জন আমরা করতে পারব।
কিছু কথা উঠে আসে। অনেকে বলেন, দেশে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে। সবই ভালো। কিন্তু তা কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। এখানে কোনো কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যদি কর্মসংস্থানই না হয় তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর কর্মসংস্থান হাত ধরে চলে। সুতরাং সেটি বুঝতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। সেখানে আড়াই কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। সেটি হতে কিছু সময় লাগবে।
আলোচনায় উঠে এসেছে ব্যাংকিং খাত ঠিক করতে হবে। এখন সেটি ঠিক নেই। খেলাপি ঋণ বেশি। খেলাপি ঋণ কেন বেশি হবে না? কারণ সুদহার বেশি। তাহলে কীভাবে শিল্পায়ন হবে। শিল্প-কারখানা করার জন্য মৌলিক যে সেবা প্রয়োজন, সেটি হলো ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া। এর সঙ্গে সুদহারের সম্পর্ক আছে। সুদহার ২৫-২৮ শতাংশ হলে সে দেশে কোনোভাবে শিল্পায়ন হবে না, হতে পারে না। ভিয়েতনামের কথা অনেকে বলেন। সেখানে সুদহার কত? সেটি কখনো ৬ শতাংশের বেশি নয়। এ জায়গায় আমাদের হাত দিতে হবে। এখন আমরা সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনছি। সেটা সারা জীবনের জন্য নয়। যখন স্থিতিশীলতা আসবে তখন বাজারশক্তিই সবকিছু করবে, তখন জোর করে কিছু করতে হবে না। আমি সুদহার নামিয়ে আনতে চাই। আমি চাই দেশে শিল্পায়ন হোক। শিল্পায়ন ছাড়া আমাদের বেরোনোর কোনো পথ নেই।আরেকটি কথা উঠে এসেছে, জিডিপি অনুপাতে কর-রাজস্ব খুবই কম। আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ৯-১০ শতাংশ। আসলে সংখ্যাটা এটি নয়। এটি ১৫ শতাংশের ওপরে। আমরা পাওয়ার সেক্টরে, বড় বড় অবকাঠামোয় বিপুলসংখ্যক যন্ত্রপাতি কিনছি। এসব বড় প্রকল্প থেকে আমরা শুল্ক সংগ্রহ করলে, অব্যাহতি না দিলে তা আমাদের রাজস্ব হতো। সেখানে তো আমরা শুল্ক অব্যাহতি দিচ্ছি, যাতে আমরা শিল্পায়নের গতি বাড়াতে পারি। আমরা দেখতে চাই, প্রকৃত অর্থে কতটা রাজস্ব পাই আর কতটা কর অব্যাহতি দেয়া হয়। কর ছাড় দিই আসলে প্রান্তিক মানুষদের। যত সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে, সেখানে কোনো কর আদায় করা হয় না। সে কাজগুলো না করলে আমরা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে কীভাবে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে পারব। কিছু সময়ের জন্য এটিও আমাদের সহ্য করতে হবে।
আমরা এখন একটি রূপান্তরকাল পার করছি। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। সারা বিশ্বেও একই অবস্থা। এটি স্বীকার করতেই হবে। তার পরও আমি বিশ্বাস করি, আমরা এগিয়ে যেতে পারব। ১৯৯৭ সালের এশীয় সংকট এবং ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট যেভাবে মোকাবেলা করেছি, এবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সবকিছু মোকাবেলা করব। করোনাসংকট তাড়াতাড়ি শেষ হবে বলে আশা করি।
(৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২০’-এ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দেয়া বক্তব্য থেকে)
Posted ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed