বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট | 443 বার পঠিত
করোনা মহামারীর কারণে বিনিয়োগকারীসহ দেশের সব শ্রেণির মানুষকে বিগত বছরের অধিকাংশ সময় কাটাতে হয়েছে আতঙ্কের মধ্যে। বৈশ্বিক অর্থনীতি পড়েছে ভয়াবহ হুমকির মধ্যে। দেশের শেয়ারবাজারেও এর অনাকাক্সিক্ষত নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত ছিল। করোনা আতঙ্কের শুরুতে শেয়ারবাজার একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে।
তবে সংশ্লিষ্টদের দক্ষ ও কার্যকর ভ‚মিকায় বাজারের পালে কিছুটা হাওয়া লাগে। বছরের শেষভাগে এসে স্থবির বাজারে গতি ফিরতে থাকে। সূচক, লেনদেন, বাজার মূলধনে ফিরে আসে গতি। সেই সঙ্গে বিগত তিন বছরের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল। এদিকে করোনা আতঙ্কের মধ্যেও বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত হয়েছে রবিসহ বেশকিছু কোম্পানি। এতে আতঙ্ক আর আশঙ্কার মধ্যেও আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছরেও যাতে এ ধারা অব্যাহত থাকে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
সূচক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ৯৪৯.১৩ পয়েন্ট বা ২১.৩১ শতাংশ বেড়েছে, যা বাজার মূলধনকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
ডিএসইএক্স আগের বছরের চেয়ে ৯৪৯.১৩ পয়েন্ট বা ২১.৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বছরের শেষ দিন ৫৪০২.০৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২০ সালের সর্বোচ্চ অবস্থান। এ-বছর সূচকটি সর্বনি¤œ ৩৬০৩.৯৫ পয়েন্টে নেমে এসেছিল।
অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) ৪৫০.৬১ পয়েন্ট বা ২৯.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৬৩.৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ডিএসইএক্স শরিয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ২৪২.২৮ পয়েন্ট বা ২৪.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১২৪২.১১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।
লেনদেন : করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে ডিএসইতে ২০৮ দিন লেনদেন হয়েছে। এ বছর ৬৬ দিন বন্ধ থাকায়, ওই সময় ৩৮ কার্যদিবস লেনদেন হয়নি। এরপরও ২০২০ সালে ডিএসইতে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা ডিএসইর ইতিহাসে ৫ম সর্বোচ্চ লেনদেন।
২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ১৮.৫৯ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। এ বছর ডিএসইতে গড়ে প্রতি কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৬৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ওই বছর ২৩৭ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
বাজার মূলধন : করোনা মহামারীতেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইর বাজার মূলধন ২০১৯ সালের অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালে বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা সর্বনি¤œ ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগ : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০২০ সাল অর্থাৎ বিদায়ী বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি। গত তিন বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ লেনদেন।
ডিএসইর তথ্য মতে, ২০২০ সালে ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের হয়েছিল ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল।
মোবাইল ব্যাংকিং : চলমান কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে ৪৯ হাজার ১৫১ জনে উন্নীত হয়। সূত্র জানায়, বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য মডেল এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত দ্রæত পরিবর্তিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে তাল মিলিয়ে মোবাইল লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২০ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৯টি আদেশ প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৭টি আদেশ কার্যকর হয়েছে।
নতুন ইস্যু : ২০২০ সালে আইপি ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে ৯টি কোম্পানি। এ সময়ে একটি বন্ডসহ ৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুসারে, শিল্পোদ্যোক্তারা ২০২০ সালে বাজার থেকে মোট ৮ কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩ কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৩১১ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে ১টি করপোরেট বন্ড সহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক আইপিও’র মাধ্যমে মোট ৬৫২ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলন করে।
২০২০ সালে একটি করপোরেট বন্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬০০২ কোটি ৭১ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ১টি মিউচ্য্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ১০টি সিকিউরিটিজ ১৪৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২০ সালে একটি কোম্পানি এক কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫১টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২৩ কোটি ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৫ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ ৭ কোটি ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৫ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে দুটি কোম্পানি ২০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৮২টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২৩১ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৩ হাজার ৬৮০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | Sajeed