নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১ | প্রিন্ট | 422 বার পঠিত
আগামীকাল বৈঠকে বসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসএসি) এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অযাচিত সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীরা। তাদের আপত্তির মুখে আগামীকাল বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈঠকে বসছে। বাজার সংশ্লিষ্টসহ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বৈঠক থেকে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে চলছে লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বিনিয়োগকারীসহ বাজার বিশ্লেষকরা। তারা এ অবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি’র মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এর আগে গত ডিসেম্বরে খবর আসে করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এ বছর বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে-এমন সংবাদও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোর জন্য ৭ ফেব্রুয়ারিতে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া যাবে।
এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু অবগত নয়, এমন বক্তব্য আসে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ বিএসইসি’র কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাজার সংবেদনশীল জায়গা। এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিএসইসি এককভাবে কিছু করতে পারবে না। প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরের সহযোগিতা। ভালো পুঁজিবাজার সবার সমন্বয় ছাড়া সম্ভব নয়।’
আরও একজন কমিশনার পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তিনটি সংস্থার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর আর বিএসইসি একসঙ্গে কাজ না করলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। কিন্তু আমাদেরকে গুরুত্বই দেয়া হয় না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে করা হয় আমরা ছোট। এমনও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে আমাদেরকে বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সময়ই দেয়া হয় না।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের প্রভিশন বা তারল্য কী পরিমাণ হতে পারে, সেটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে-সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’
এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে কোম্পানিগুলোকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদানের সুযোগ দিতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়।
এমন সমন্বয়হীনতা নিয়ে যখন সর্বত্র আলোচনা তখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক বসছে।
১৫ মার্চ দুপুর ১২টায় বিএসইসি কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সেদিন বৈঠক উপস্থিত থাকবে।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় মুদ্রা বাজার ও পুঁজিবাজার উন্নয়নে আলোচনা হবে। তবে এজেন্ডা সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে একজন ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দু’জন নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত থাকবেন।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১
bankbimaarthonity.com | saed khan